Advertisment

Explained: ইডির তল্লাশিতে উদ্ধার বিপুল সম্পত্তি, কী পরিণতি হয় এই সম্পদের, জানুন বিস্তারিত

এমনও দেখা গিয়েছে যে ইডি অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ED seized huge amount

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) কলকাতার ছয়টি স্থানে তল্লাশি চালিয়েছে। একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে গিয়ে নগদ ১৭ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগকারীদের প্রতারণা করে সংগ্রহ করা হয়েছে। এমনই অভিযোগ ইডি কর্তাদের।

Advertisment

সেই তদন্ত করতে গিয়ে নাসের খান নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালান ইডির কর্তারা। নাসের খানের একটি পরিবহণ ব্যবসা রয়েছে। তাঁর ছোট ছেলে আমির খান, ই-নাগেটস নামে একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছিলেন। যা প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকারীদের কমিশন দিয়ে পুরস্কৃত করছিল। তাদের ওয়ালেটে থাকা ব্যালেন্সের অর্থ নির্ঝঞ্ঝাটে তোলার অনুমতিও বিনিয়োগকারীদের দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ফেডারেল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, আমির খান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ইডি একটি মামলা দায়ের করে।

কী ভাবে বাজেয়াপ্ত করা হল?

প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (PMLA) ইডিকে সন্দেহভাজনদের প্রাঙ্গনে তল্লাশি চালানোর ক্ষমতা দিয়েছে। এর আগে ইডি সাধারণত অনুসন্ধান পরোয়ানা নিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছে যেত এবং অনুসন্ধান চালাত। তল্লাশির সময় উদ্ধার হওয়া সামগ্রী স্বতন্ত্র সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বাজেয়াপ্ত করে থাকে। আর, সেসব জিনিসপত্র বা অর্থ যে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তা ওই বাড়ির কর্তা, অথবা কর্ত্রী বা সাক্ষীর থেকে লিখিয়ে নিয়ে আসে।

বাজেয়াপ্ত নগদ নিয়ে ইডি কী করে?

ইডির বাজেয়াপ্ত করা নগদ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক অঞ্চলে ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে জমা রাখা হয়। মামলার রায় বের না-হওয়া পর্যন্ত টাকা ওই অ্যাকাউন্টে থাকে। অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে, নগদ (অপরাধের আয় হিসেবে) সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়। মামলায় অভিযুক্ত বেকসুর খালাস হলে, সুদ-সহ পুরো টাকা অভিযুক্তদের ফেরত দেওয়া হয়।

বাজেয়াপ্ত সোনা বা অন্য সামগ্রী নিয়ে ইডি কী করে?

বাজেয়াপ্ত সোনা বা অন্যান্য সাগ্রী একই পদ্ধতিতে ইডি লকারে রাখে। ২০১৮ সালে গোটা প্রক্রিয়াটির সরলীকরণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত আমানত অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ সরাসরি কোষাগারে জমা হয়। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার শাখায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট পিডি অ্যাকাউন্ট খোলে। এই অ্যাকাউন্টগুলোর আমানতের ওপর কোন সুদ দেওয়া হয় না। নগদ, সোনা এবং মূল্যবান সামগ্রী ওই অ্যাকাউন্ট থেকেই সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হয়।

বাজেয়াপ্ত অর্থ বা সম্পদ সংযুক্তির পরে কী হয়?

বাজেয়াপ্ত অর্থ বা সম্পদ সংযুক্তির অর্থই হল, অভিযুক্তকে সংযুক্ত সম্পদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা। আইনে বিচার শেষ না-হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তকে সম্পত্তি ভোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার বিধান রয়েছে। ইডি নগদ-সহ কোনও সম্পত্তি সংযুক্ত বা বাজেয়াপ্ত করার পরে, ১৮০ দিনের মধ্যে তা আদালতকে জানায়।

একবার সম্পত্তির সংযুক্তি নিশ্চিত হয়ে গেলে, ইডি বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির দখল নিতে পারে। যদি এটা স্থাবর সম্পত্তি হয়, ইডি সম্পত্তির মালিককে উচ্ছেদের নোটিশ দিতে পারে। অথবা, দখল করতে পারে। তবে, আদালতের এই সম্পত্তি সংযুক্তির নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা যেতে পারে। যাতে ঠিক হয়, এই সম্পত্তির মালিক তা ফিরে পাবে। না, তা ইডির দখলে থাকবে।

যেমন, কয়েক বছর আগে, ইডি তহবিল তছরুপের এক মামলায় রাঁচিতে একটি সম্পত্তি সংযুক্ত করেছিল। অভিযুক্ত আদালতে হেরে যায়। ইডি শেষ পর্যন্ত সম্পত্তিটি দখল করে এবং সেখানে তার শাখা অফিস খোলে। মামলায় অভিযুক্ত শেষ পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত হয়। আর, তার সম্পত্তিটি এখন সরকারের নামে নথিভুক্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে এখনও ইডির অফিস চলছে।

আবার এমনও কিছু সম্পত্তি থাকতে পারে, যেগুলো ইডি বা অন্য কোনও সরকারি দফতরের কাজেই লাগেনি। এমনটা তখনই দেখা যায়, যখন মামলার বিচার চলছে। এই ধরনের ক্ষেত্রে ইডির সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে বা আদালতের নির্দেশমতো কাউকে সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণকারী অথবা প্রশাসক করা হয়। বিচার শেষ হলে, সরকার সম্পত্তি নিলাম করতে পারে। এমন ক্ষেত্রে যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে বিচার চলে, সেখানে দেখা যায় যে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কাঠামোগুলো ভেঙে পড়েছে।

ED যখন একটি চলমান ব্যবসা, যেমন একটি হোটেল সংযুক্ত করে, তখন কী হয়?

নিয়ম অনুযায়ী, চলমান ব্যবসা বন্ধ করা হয় না। তা বাজেয়াপ্তও করা হয় না। অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি ট্রাইব্যুনাল বা হাইকোর্ট থেকে আইনি সুরক্ষা না-পান, তবে ইডি হোটেলের মতো বাণিজ্যিক প্রাঙ্গণ চালানোর জন্য সমস্ত লাভ দাবি করতে পারে। এই লাভের অর্থ আবার ইডির পিডি অ্যাকাউন্টে জমা হয়। অভিযুক্ত বেকসুর খালাস হয়ে গেলে, তাকে পুরো টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন- উদ্ধার মালিকহীন কোটি কোটি, তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি, বড় চ্যালেঞ্জ ED-র

সংযুক্ত সম্পত্তি বাসস্থান হলে, কী হয়?

কোনও বাসস্থান বাজেয়াপ্ত করার পর ED সংযুক্ত করলে, তা আদালতে জানায়। সংস্থার প্রাঙ্গণ থেকে অভিযুক্তকে উচ্ছেদ করার অধিকার রয়েছে ইডির। যাইহোক, যদি অভিযুক্ত যদি প্রাঙ্গণের বাইরে যেতে না-পারে, ইডি ভাড়া চাইতে পারে।

যেমন একটি তহবিল তছরুপ মামলায়, ইডি জয়পুরের এক ব্যক্তির বাসভবন সংযুক্ত করেছিল। তাকে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছিল। অভিযুক্ত পালটা আবেদনে জানিয়েছিল, এটাই তার একমাত্র বাসস্থান। তার ভিত্তিতে ইডি তাকে সেখানে থাকার অনুমতি দিয়েছে। আর, তার কাছ থেকে বাজারের হারে ভাড়া নিচ্ছে।

যানবাহন সংযুক্ত করা হলে কী হয়?

যানবাহন বাজেয়াপ্ত করে সংযুক্ত করলে, সেগুলো কেন্দ্রীয় গুদাম সংস্থার মালিকানাধীন গুদামে পাঠানো হয়। যেখানে ইডি গাড়িটি রাখার জন্য অর্থ দেয়। মামলা বছরের পর বছর চলতে থাকলে যানবাহন নষ্ট হয়ে যায়। বিচার শেষে অভিযুক্ত বা ইডি কেউই গাড়ি থেকে কিছুই পায় না। এমনও দেখা গিয়েছে যে ইডি অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করেছে।

Read full story in English

Court Order Black money ED
Advertisment