Advertisment

Explained: ফ্রাঙ্কেনস্টাইন! দুই তালেবানের সঙ্গে কতটা জটিল পাকিস্তানের সম্পর্ক?

হামলার দায় নিয়েছে তেহরিক-ই-জিহাদ পাকিস্তান (টিজেপি)।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Taliban

১৯৯৬ সালে কাবুলের চারিক রোডে একটি ট্যাংকের ওপরে তালেবান কমান্ডার। (এক্সপ্রেস আর্কাইভ ছবি)

শনিবার (৪ নভেম্বর) ভোরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মিয়ানওয়ালি ট্রেনিং এয়ার বেসে হওয়া একটি জঙ্গি হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সংবাদমাধ্যম ডনের রিপোর্ট অনুযায়ী পাক সামরিক বাহিনী, 'পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের মিয়ানওয়ালিতে চিরুনি ও ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শেষ করেছে। নয় জঙ্গিকে হত্যা করেছে।' তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সদ্য গঠিত সহযোগী সংগঠন তেহরিক-ই-জিহাদ পাকিস্তান (টিজেপি) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারই মধ্যে শুক্রবার থেকে বেলুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া সীমান্ত প্রদেশে ধারাবাহিক লড়াইয়ে অন্তত ১৭ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে।

Advertisment

অশান্তির বর্তমান প্রেক্ষাপট
সাম্প্রতিক হামলাগুলি এমন এক সময়ে হল, যখন পাকিস্তান জোর করে আফগান শরণার্থীদের বহিষ্কার করছে। যাদের মধ্যে অনেকেই হয় কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানের বাসিন্দা। নতুবা পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেছেন। আফগানিস্তানের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। তালেবানের পশ্চাদপসরণমূলক শাসনের মধ্যেই যারা, 'প্রত্যাবর্তন' করতে বাধ্য হচ্ছেন- বিশেষ করে মহিলারা, যাদের পড়াশোনা বা কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে না- তাঁরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে চলেছেন। রাষ্ট্রসংঘ এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলির পাশাপাশি আফগান তালিবানরাও পাকিস্তানের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে। তারা পাকিস্তানের এই কাজকে 'অমানবিক' বলেছে।

বহু পাক সেনার মৃত্যু
পাকিস্তান অবশ্য তার ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবস্থার উল্লেখ করে এবং সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধে জড়িত থাকার জন্য নথিবিহীন আফগানদের অভিযুক্ত করে নিজেদের পদক্ষেপকে ন্যায্য বলে দাবি করেছে। এটা সত্যিই যে গত কয়েক বছরে পাকিস্তানে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বেড়েছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (সিআরএসএস) প্রকাশিত অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ২০২৩ সালের প্রথম নয় মাসে লড়াইয়ের জেরে কমপক্ষে ৩৮৬ জন সদস্যের মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছে। যা আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর কারণগুলো জটিল এবং বহুস্তরীয়। এই সব মৃত্যু পাকিস্তান আর আফগানিস্তান, উভয় জায়গাতেই ঘটেছে।

দুই তালেবানের গল্প
১৯৮৯ সালে সোভিয়েতের দখলদারিত্বের অবসানের পর, আফগানিস্তানে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এই পরিস্থিতি থেকে তালেবানের জন্ম হয়। এই সংগঠন একটি ইসলামিক মৌলবাদী গোষ্ঠী। যা মূলত পশতুনদের নিয়ে গঠিত। পশতুনরা আফগানিস্তানের প্রধান নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী। সেইসঙ্গে উত্তর এবং পশ্চিম পাকিস্তানেও পশতুনদের বাস। ১৯৯৬ সাল নাগাদ, তালেবান কাবুল দখল করে। পাশাপাশি, আফগানিস্তানের বেশিরভাগ ভূখণ্ডে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। কিন্তু, ২০০১ সালে পরিস্থিতিটা বদলে যায়। ৯/১১ জঙ্গি হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে রাজি হয়নি তালেবানরা। সেই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আক্রমণ চালায় মার্কিন আগ্রাসনের সঙ্গে শুরু হয় ২০ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধ ও দখলদারিত্ব।

Afghan refugee
আফগানিস্তানের তোরখামের একটি শরণার্থী শিবিরে আফগান শিশুরা। (এপি ছবি/ইব্রাহিম নরুজি)

তেহরিক-ই-তালেবান
যদিও তালেবান শাসনকে দ্রুত ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান উভয় দেশে পশতুন অঞ্চলে আশ্রয় নেয় তালেবানরা। তারা আমেরিকানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটেই পাকিস্তানি তালেবান, টিটিপির আবির্ভাব ঘটে। পাকিস্তান স্পষ্টতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ'কে সমর্থন করে। পাকিস্তানি জিহাদিরা ২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) তৈরির জন্য একত্রিত হয়। সংগঠনটি নিজেদের আফগান তালেবানের অংশ বলে দাবি করে। শেষ পর্যন্ত আমেরিকান থেকে মুক্ত, একটি কঠোর ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে তারা পাকিস্তানে প্রভাব বাড়াতে শুরু করে।

আরও পড়ুন- মাদক যখন সাপের বিষ! কেন এই প্রাণঘাতী নেশার দিকে ছুটছেন যুবক-যুবতীরা?

সেনা স্কুলে হামলা
শুরুর বছরগুলিতে, টিটিপি পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলা চালাত। তার মধ্যে ২০১৪ সালে এই সংগঠনের সদস্যরা পেশোয়ারের একটি সেনা স্কুলে হামলা চালায়। যাতে ১৩২ স্কুলপড়ুয়া-সহ মোট ১৪৯ জন প্রাণ হারান। ২০১৮ সাল থেকে, টিটিপি সরাসরি সামরিক ঘাঁটিগুলোকে আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিতে শুরু করে। সীমান্তের দুই পাশে হাজার হাজার যোদ্ধা নিয়ে আজ টিটিপি পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বৃহত্তম জঙ্গি সংগঠন।

pakistan Taliban Death
Advertisment