সাইরাস মিস্ত্রি মৃত্যু: মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার চারোটির কাছে এক সেতুর ডিভাইডারে গাড়ি ধাক্কা মারার পর রবিবার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রি। মৃত্যুকালে রেখে গেলেন স্ত্রী ও দুই ছেলেকে।
কে এই সাইরাস মিস্ত্রি?
সাইরাস মিস্ত্রি হলেন শাপুরজি, পালোনজি গ্রুপের মালিক এবং টাটা গ্রুপের সবচেয়ে বড় শেয়ার হোল্ডার। তিনি পালোনজি মিস্ত্রির ছেলে। ২০১২ সালে তিনি টাটা সন্সের ষষ্ঠ চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। টাটা পরিবারের বাইরে তিনিই দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি এই গ্রুপের প্রধান হন। মাত্র চার বছরের জন্য এই পদে ছিলেন সাইরাস। টাটা গ্রুপের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের প্রধান। মিস্ত্রিকে ২৪ অক্টোবর, ২০১৬ সালে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সালে তাঁকে হোল্ডিং কোম্পানির বোর্ডের পরিচালক পদ থেকেও অপসারণ করা হয়েছিল।
এই অপসারণের আগে অবধি সাইরাস মিস্ত্রি এবং রতন টাটার মধ্যে সম্পর্ককে বন্ধুত্বপূর্ণ হিসেবেই দেখা হত। কিন্তু, তাঁর জমানায় টাটা কোম্পানিতে শেয়ার হোল্ডারদের রিটার্ন কমেছিল। রতন টাটার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে বেশ কয়েকটি কারণে। যেমন, ব্রিটেনে টাটা স্টিল পোর্ট প্ল্যান্টের প্রস্তাবিত বিক্রয় বিদেশে টাটার ব্যবসা বৃদ্ধির সদিচ্ছার অভাব হিসেবে বিভিন্ন মহলের কাছে বার্তা যায়। ডকোমো গ্রুপের সঙ্গে বর্ধিত বিরোধও মিস্ত্রির অপসারণের কফিনে অন্যতম পেরেক হিসেবে মনে করা হয়। জাপানি গোষ্ঠীর সঙ্গে এই বিরোধের জন্য টাটাদের ১০০ কোটির বেশি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়।
লন্ডনের স্বনামধন্য ইম্পেরিয়াল কলেজের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সাইরাস মিস্ত্রি টাটা কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার আগে পরিবারের নির্মাণ ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তিনি টাটা ইন্ডাস্ট্রিজ, টাটা স্টিল, টাটা কেমিক্যালস এবং টাটা মোটরসের ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম ফলপ্রসূ হয়েছিল যখন তিনি ফোর্বস গোকাক, ইউনাইটেড মোটরস (ইন্ডিয়া) এবং শাপুরজি পালোনজি অ্যান্ড কোং-এর মতো আরও কয়েকটি কোম্পানির পরিচালক হন।
আরও পড়ুন- মাদ্রাসার সংখ্যা কত খোঁজ নিচ্ছে যোগী প্রশাসন, ক্ষুব্ধ মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড
টাটাদের সাথে মিস্ত্রি পরিবারের সম্পর্ক ১৯৩০ সালে শুরু হয়েছিল। যখন শাপুরজি পালোনজি মিস্ত্রি এফই দিনশ এস্টেট থেকে টাটা সন্সের ১২.৫ শতাংশ শেয়ার কিনেছিলেন। মিস্ত্রিরা পরবর্তীতে টাটা পরিবারের কাছ থেকে আরও বেশি অংশীদারিত্ব অধিগ্রহণ করে, এসপি গ্রুপের হোল্ডিং প্রায় ১৬.৫ শতাংশে নিয়ে যায়। টাটা কোম্পানিতে তার অংশীদারিত্ব বজায় রাখার জন্য মিস্ত্রি ৯০-এর দশকে টাটা সন্স রাইট ইস্যুতে ৬০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছিলেন।
জেআরডি টাটা, যিনি ১৯৩৮ সালে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, প্রাথমিকভাবে টাটা সন্সের একটি বড় অংশীদারিত্বে মিস্ত্রকে পছন্দ করেননি। যাইহোক, তাঁরা পরে হাত মিলিয়েছিলেন। আর, গত দুই দশক ধরে পরস্পরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়, যখন পালোনজি মিস্ত্রির মেয়ে আলু, রতন টাটার সৎ ভাই নোয়েল টাটাকে বিয়ে করেন।
টাটা গোষ্ঠীর অন্যতম কর্তা রতন টাটার সঙ্গে মতবিরোধের পর, মিস্ত্রিকে গত বছরের ২৪ অক্টোবর টাটা সন্স বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়। মিস্ত্রি পরে বিষয়টি ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালে (এনসিএলটি) নিয়ে গিয়েছিলেন।
Read full story in English