নতুন বছরের শুরুতেই অবাক করা কাণ্ড। মঙ্গলবার কংগ্রেসের 'ভারত জোড়ো যাত্রা' উত্তরপ্রদেশে প্রবেশ করেছে। আর যাত্রা যোগীরজ্যের ভূমি ছুঁতেই রাহুল গান্ধীকে চিঠি লিখে এই যাত্রার জন্য শুভ কামনা জানালেন অযোধ্যার রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাস। 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র সাফল্য প্রার্থনার পাশাপাশি যাত্রার উদ্দেশ্যের প্রশংসা করছেন তিনি।
এই যাত্রকেই নানাভাবে কটাক্ষ করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। কংগ্রেসের সেই কর্মসূচিকেই রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের প্রশংসায় অস্বস্তি বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের। সত্যেন্দ্র দাসের পদক্ষেপের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ভিএইচপি জানিয়েছে পুরোহিতের উচিত ছিল কংগ্রেসের ইতিহাস বিবেচনা করা। তবে, সত্যেন্দ্র দাসের সাফ দাবি, বিষয়টিকে রাজনীতির মোড়কে দেখা উচিত নয়। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বলেছেন, 'যাঁরা ভগবান রামকে খোঁজেন প্রভু সর্বক্ষণ তাঁদের আশীর্বাদ করেন।'
'ভারত জোড়ো যাত্রা' অংশগ্রহণের জন্য সমাজের নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে কংগ্রেস। সেইরকমই যাত্রার অংশ হতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল অযোধ্যার রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাসকে। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের আরও বেশ কয়েকজন সাধুকেও আমন্ত্রণ করা হয়। কংগ্রেস নেতৃত্বকে সত্যেন্দ্র দাস আগেই জানিয়েছিলেন যে, তিনি চিঠিতে আমন্ত্রণের উত্তর দেবেন।
সেই মতই মঙ্গলবার যাত্রা উত্তরপ্রদেশে ঢুকতেই সত্যেন্দ্র দাসের চিঠি কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে যায়। রাহুল গান্ধীকে দেওয়া চিঠিতে পুরোহিত লিখেছেন, 'আপনি সুস্থ থাকুন এবং দীর্ঘ জীবন লাভ করুন। দেশের উন্নতির জন্য আপনি যে কাজটি করছেন তা হচ্ছে সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায়। ভগবান রাম লালার আশীর্বাদ সর্বদা আপনার সঙ্গে রয়েছে।'
কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা অযোধ্যা নিবাসী গৌরব তিওয়ারি জানান, তিনি ও দলের অন্যান্যরা অযোধ্যার অনেক মন্দির এবং সাধুদের কাছে যাত্রার আমন্ত্রণপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রত্যেকেই তাঁদের আশীর্বাদ করেছিলেন। তিওয়ারি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “উত্তর প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি আমাদের কাছে আমন্ত্রণের একটি মুদ্রিত চিঠি পাঠিয়েছিল, তার উপর আমরা হাতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম লিখেছিলাম। অযোধ্যায় অনেক সাধুকে এই ধরনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমরা সত্যেন্দ্র দাসজির সঙ্গেও দেখা করেছিলাম এবং তিনি বলেছিলেন যে, তিনি একটি চিঠি দিয়ে যাত্রাকে আশীর্বাদ করবেন, যা আমি দলীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছি।'
৮২ বছর বয়সী সত্যেন্দ্র দাস গত তিন দশক ধরে অযোধ্যার রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ২০২০ সালের অগাস্টে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাম জন্মভূমিতে একটি বিশাল মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং সেটি ২০২৩ সালের শেষের দিকে উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে।
ভিএইচপি অযোধ্যার মুখপাত্র সহরাদ শর্মার মতে কোনও রাজনৈতিক দলের তরফে পুরোহিতের চিঠি লেখা উচিত হয়নি। শর্মা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'কাউকে আশীর্বাদ দেওয়া তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, কিন্তু সত্য হল যে, আশীর্বাদ শুধুমাত্র তাঁদেরই সাহায্য করে যাঁদের বিবেক এবং মন আছে। যাঁরা আসলে সমাজকে একত্রিত করার জন্য কাজ করতে চায়।'
সত্যেন্দ্র দাসের বিবেচনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভিএইচপি মুখপাত্র। সহরাদ শর্মা বলেন, 'রাম মন্দিরের পুরোহিত হওয়ার কারণে, তাঁর প্রথমে এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা উচিত ছিল যে এঁরা সেই লোক যাঁরা- রাম সেতু ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং রামের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তাঁর আশীর্বাদ দেওয়ার আগে এসব ভাবা উচিত ছিল। যাইহোক, আমরা নিশ্চিত যে ঈশ্বরের আশীর্বাদ কেবলমাত্র তাদের কাছেই পৌঁছায় যাদের হৃদয় কোনও কলুষতা নেই এবং যাঁদের লক্ষ্য অকৃত্রিম।'
যার পাল্টা পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাস দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'আমি কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তি নই, শুধু একজন পুরোহিত। যে আমার কাছে আশীর্বাদের জন্য আসে, আমিও তাদেরই আশীর্বাদ করি। আমি তাঁদের চিনি যারা আমার কাছে আমন্ত্রণ নিয়ে এসেছিল। আমার কাছে রাহুল গান্ধীর যাত্রার জন্য আশীর্বাদ চাওয়া হয়েছিল এবং আমি তাদের আশীর্বাদ করেছি।'
সত্যেন্দ্র দাসের সংযোজন, 'আমরা মানুষ, আমরা যাই করি না কেন কেউ কেউ তা পছন্দ করে, আবার কোরার খারাপ লাগে। কিন্তু সাধুর আশীর্বাদে কারোর যেন খারাপ না হয়।'