এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসাবে বদলি হতে পারেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের তরফে বৃহস্পতিবার এমন সিদ্ধান্ত হয়। সুপারিশ পাঠানো হয়েছে দেশের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানার কাছে। তবে, কলেজিয়ামের সদস্য প্রধান বিচারপতি ছাড়াও, বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, এ এম খান উইলকার সেই সুপারিশে এখনও পর্যন্ত অনুমোদন দেননি বলেই জানতে পেরেছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
চলতি বছর বাংলা বিধানসভা ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষে ২৯ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্বভার নেন বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল। এরপর থেকে তাঁর কাজ ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। ভোট পরবর্তী নানা বিষয়ের মামলায় বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছিলেন বিচারপতি বিন্দাল।
পাশাপাশি, নারদ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি অরিন্দম সিনহা। নারদ মামলায় এ বছর মে মাসে সিবিআই গ্রেফতার করে রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম সহ শাসক দলের বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রকে। গ্রেফতার করা হয়েছিল বাংলার আরেক প্রাক্তন মন্ত্রী ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। পরে, সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত তাঁদের চারজনেরই জামিন মঞ্জুর করে। যার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ধৃতদের জামিন নাকচ করার দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানায় সিবিআই। কলকাতা হাইকোর্ট সেই আবেদন গ্রহণ করেছিল এবং নিম্ন আদালতের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে।
যা নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়। নারদ মামলাগ্রহণে কলকাতা হাইকোর্টের পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা জানিয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালকে চিঠি দেন বিচারপতি অরিন্দম সিনহা। তাঁর প্রশ্ন, সিবিআইয়ের আবেদন মেনে মামলা স্থানান্তরের প্রক্রিয়ার মধ্যে হাইকোর্ট নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কী ভাবে নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করল?
আরও পড়ুন- স্কুল বন্ধে কোপ শিক্ষায়, বাড়ির দেওয়ালেই ব্ল্যাকবোর্ড এঁকে ছাত্র পড়ান মাস্টারমশাই
ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও উত্তেজনা ছড়ায়। মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। পরে, নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত মামলার শুনানির জন্য পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া হয়। এই বেঞ্চের নির্দেশে বর্তমানে রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলার শাসক দল তৃণমূল।
কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্বগ্রহণের আগে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে কাজ করেছেন বিচারপতি বিন্দাল। চার মাসের জন্য ছিলেন জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। এরপরই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসাবে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আসেন। সুপ্রিম কোর্টে না গেলে ২০২৩ সালের ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের কাজের মেয়াদ রয়েছে।
বর্তমানে, এলাহাবাদ, কলকাতা, ছত্তিশগড়, গুজরাট, হিমাচলপ্রদেশ, কর্নাটক ও তেলেঙ্গানা হাইকোর্টে স্থায়ী প্রধান বিচারপতি নেই। অস্থায়ী প্রধান বিচারপতিরাই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সিকিম হাইকোর্টের প্রদান বিচারপতি হলেন মিনাক্ষী মদন রাই। দেশের মধ্যেই তিনিই এখন হাইকোর্টের একমাত্র মহিলা প্রধান বিচারপতি।
গত ৩রা সেপ্টেম্বর হাইকোর্টগুলিতে নিয়োগের জন্য ১০ মহিলা সহ ৬৮জন বিচারপতির নাম সুপারিশ করেছিল কলেজিয়াম। যার প্রেক্ষিতে কেন্দ্র এখনও কিছু জানায়নি। তবে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে কলেজিয়াম যে ৯ বিচারপতির নাম সুপারিশ করেছিল তাতে স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন