পুলওয়ামা-কাণ্ডের বারো দিনের মাথায় আকাশপথে প্রত্যাঘাত করল ভারত। বিদেশমন্ত্রকের সচিব বিজয় গোখেল জানিয়েছেন, "ভারত 'অসামরিক এবং সতর্কতামূলক' পদক্ষেপে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে জৈশ-এ-মহম্মদের একটি প্রধান জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়েছে।"
১৯৭১-র ভারত-পাক যুদ্ধের পর পাকিস্তানের আকাশপথে ঢুকে পড়ে এটাই ভারতের প্রথম হানা। ১৯৯৯-এর কার্গিল যুদ্ধের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ী পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে আকাশপথে হানা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সে বার ভারত নিজেদের আকাশসীমায় থেকে মিরাজকে ব্যবহার করেছিল কার্গিল পাহাড়ে পাকিস্তানের পোস্টগুলির উপর লেসার-নির্দেশিত বোমা নিক্ষেপে।
দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে গোখেল বলেন, "আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর ছিল জৈশ-এর জঙ্গিরা ভারতে ফের হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই জৈশ-এর বৃহত্তম ঘাঁটির উপর এই অভিযান চালানো জরুরি হয়ে পড়েছিল।"
আরো পড়ুন: জইশের সবথেকে বড় ঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারত: বিদেশমন্ত্রক
গোখেল আরও জানান, ভোররাতের এই অভিযানে জৈশ-এর বহুসংখ্যক জঙ্গি, প্রশিক্ষক এবং সিনিয়র কমান্ডার নিহত হয়েছে। এই জঙ্গি ঘাঁটিটি চালাতো জৈশ প্রধান মাসুদ আজহারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ আজাদ।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর খবর অনুযায়ী, ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমানের হানায় নিয়ন্ত্রণরেখার আশেপাশে বহু জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর আবার দাবি করেছেন, ভারতীয় যুদ্ধবিমান "মুজফ্ফরবাদ সেক্টর থেকে পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ" করে এবং বালাকোটে "বোমা ফেলে" এবং "দ্রুত ও কার্যকরী প্রত্যুত্তর পায় পাক বিমানবাহিনীর থেকে"।
ভারতীয় বায়ুসেনার সূত্র উদ্ধৃত করে এএনআই জানিয়েছে, আজ ভোররাত সাড়ে তিনটে নাগাদ মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমানের একটি স্কোয়াড্রনের হানায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর একটি বড় জঙ্গি ঘাঁটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সূত্র উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়েছে, ১২ টি মিরাজ বিমান এই হানায় অংশ নিয়েছিল। অভিযানে জঙ্গি ঘাঁটির উপর ফেলা হয়েছে এক হাজার কেজি বোমা।
এদিকে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছেন দিল্লির ৭, লোককল্যাণ মার্গে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকও চলছে বলে জানা গিয়েছে। এএনআই আরও জানিয়েছে, ভারতীয় বায়ুসেনা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর 'হাই অ্যালার্ট' জারি করেছে এবং পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রত্যাঘাতের প্রতিরোধে আকাশপথে যাবতীয় সমরসজ্জা সুসংহত করেছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত সরকারের তরফে এ বিষয়ে প্রথম টুইটটি করেছেন। রাহুল গান্ধী এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালও টুইট করে বায়ুসেনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এই মাসের গোড়ায় জয়সলমীরে আয়োজিত হয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনার মহড়া 'এক্সারসাইজ বায়ুশক্তি'। এই মহড়ায় দিনে-রাতে বা মেঘলা আবহাওয়ায় নির্দিষ্ট টার্গেট চিহ্নিত করে লক্ষ্যভেদের ক্ষমতা পরীক্ষিত হয়েছিল। কার্গিল যুদ্ধের তুলনায় যে ভারত এখন আরও বেশি প্রস্তুত আকাশ-অভিযানে, এই মহড়ায় তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।