Advertisment

Gauri Lankesh Murder: শুটার গ্রেফতার, আগেও ধরা পড়েছিল ওয়াগমারে

পুলিশ জানিয়েছে, গৌরী লঙ্কেশ হত্যার আগে বিভিন্ন জায়গায় ওয়াগমারে আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। মঙ্গলবার ওয়াগমারের গ্রেফতারির খবর সামনে আসার আগেই শ্রীরামসেনের মুখ্য কর্মী তথা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রমোদ মুতালিক এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
wagmare has previous criminal record

অমিত কালের কাছ থেকে মেলা একটি ডায়েরিতে লেখা সাংকেতিক নাম থেকে ওয়াগমারের হদিশ পায় পুলিশ।

গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডে পরশুরাম অশোক ওয়াগমারেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  ধৃ্ত ওয়াগমারেই গৌরী লঙ্কেশের উপর গুলি চালিয়েছিলবলে সন্দেহ পুলিশের। গত বছর সেপ্টেম্বরে নিজের বাড়ির সামনে খুন হন গৌরী। পুলিশের দাবি, অপরাধের ইতিহাস রয়েছে ওয়াগমারের। সে উগ্র দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলির সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে জানা গেছে।

Advertisment

কর্নাটকের বিজয়পুরা জেলার সিনধাগি এলাকার বাসিন্দা ওয়াগমারে (২৬) পরশু, কোহলি, বিল্ডার, ইত্যাদি একাধিক নামেও পরিচিত ছিল। সিনধাগি এলাকাতেই এক আত্মীয়ের বাসনের দোকানে কাজ করত সে। মঙ্গলবারই তাকে আদালতে পেশ করে পুলিশ। বিশেষ তদন্তদল আদালতে ওয়াগমারের দেওয়া একটি বয়ান পেশ করেছে, যাতে সে হত্যাকাণ্ডে নিজের যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছে।

২০১২ সালে সিনধাগি শহরে পাকিস্তানের পতাকা টাঙিয়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরির চেষ্টা করার জন্য হিন্দু দক্ষিণপন্থী সংগঠন শ্রীরাম সেনার যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, ওয়াগমারে সেই দলটির মধ্যেও ছিল বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন, Gauri Lankesh Murder: গৌরী খুনে হেফাজতে আরও ৩

বিশেষ তদন্তদলের পক্ষ থেকে তদন্তকারী অফিসার এম এন আনুটেক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডে সিনধাগি থেকে পরশুরাম ওয়াগমারে নামে ২৬ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে তোলা হলে বিচারক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ব্যক্তিকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তের ক্ষতি হতে পারে বলে, এই যড়যন্ত্রে তার ভূমিকা কী তা এখনই নির্দিষ্ট করে জানানো যাচ্ছে না।
.
ওয়াগমারেকে তার সিনধাগির বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। উগ্র দক্ষিণপন্থী সংগঠন সনাতন সংস্থা ও তাদের গণসংগঠন হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির সঙ্গে যুক্ত ৪ জনকে গত ৩১ মে গ্রেফতার করার পর ওয়াগমারের নাম সামনে আসে।

সনাতন সংস্থার গোপন কাজকর্ম চালানোর একটি ইউনিটের মূল পাণ্ডা এবং পুণের হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির প্রাক্তন আহ্বায়ক অমিত কালে, সনাতন সংস্থার গোয়ার আশ্রমের বাসিন্দা অমিত ডেগওয়েকর, বিজয়পুরা অঞ্চলে সংগঠনের কাজে উগ্রপন্থী যুবকদের নিয়োগকারী মনোহর এডাভে, এবং উদুপীর প্রাক্তন হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির কর্মী সুজিত কুমার ওরফে প্রবীণের কাছ থেকে পাওয়া কিছু নথি পত্র থেকেই প্রথমবার ওয়াগমারের কথা জানতে পারে তদন্তদল।

অমিত কালের কাছ থেকে মেলা একটি ডায়েরিতে লেখা সাংকেতিক নাম থেকে ওয়াগমারের হদিশ পায় পুলিশ। গৌরী লঙ্কেশের হত্যাতদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করেছিল বিশেষ তদন্ত দল। সেই ফুটেজ থেকে হত্যাকারীর উচ্চতা ও ওজন সংক্রান্ত প্রোফাইলের সঙ্গে ধৃতের প্রোফাইলও মিলিয়ে দেখা হয়েছে।

আরও পড়ুন, Gauri Lankesh: প্রসঙ্গ গৌরী লঙ্কেশ, একটি খোলা চিঠি

ওয়াগমারের উচ্চতা পাঁচ ফিট এবং তার শারীরিক কাঠামো মজবুত। ২০১৭ র ৫ সেপ্টেম্বরের সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা যাচ্ছে গৌরী লঙ্কেশ বাড়ির গেট খুলে ঢোকার সময়ে তাঁকে যে গুলি করছে তার আকার-আকৃতিও একইরকম।

বিশেষ তদন্তদল এই মামলায় প্রথম চার্জশিট দাখিল করে কেটি নবীন কুমারের বিরুদ্ধে। সে সনাতন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এবং হত্যাকারীদের সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ। সনাতন কুমার পুলিশের কাছে জানিয়েছে, হিন্দু এবং হিন্দু দেবদেবীর বিরুদ্ধে লেখালিখি করার জন্যই গৌরী লঙ্কেশকে খুন হতে হয়েছে।

ওয়াগমারেকে এই খুনে কাজে লাগায় অমোল কালে, মনোহর এডাভে এবং সুজিত কুমার। এরা সনাতন সংস্থা ও হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছোট একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এরাই নবীন কুমারকেও এ কাজে নিযুক্ত করেছিল বলে জানা গেছে।

সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, হত্যার তিন মাস আগে থেকে বেঙ্গালুরুর একটি বাড়িতে থাকত ওয়াগমারে। সে বাড়িতে তার থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল সুজিত কুমার। আরও একটি বাড়িকে অল্প সময়ের জন্য  ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে একটি বাড়ির হদিশ মেলায় ওয়াগমারেকে পাকড়াও করতে সুবিধে হয়েছে বিশেষ তদন্তদলের।

পুলিশ জানিয়েছে, গৌরী লঙ্কেশ হত্যার আগে বিভিন্ন জায়গায় ওয়াগমারে আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নিহাল ওরফে দাদা বলে এক ব্যক্তির নামও উঠে এসেছে, যাকে এখনও ধরা যায়নি।

বিশেষ তদন্তদল আদালতে ওয়াগমারের ১৪ দিনের হেফাজত চাওয়ার সময়ে উল্লেখ জানিয়েছে গৌরী লঙ্কেশের হত্যাকাণ্ডের দিন তাকে মোটরসাইকেলে করে যে ব্যক্তি ঘটনাস্থল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল, তাকে এখনও খোঁজা হচ্ছে।  সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, গৌরী হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে ঘটনাস্থলে রেইকি চালিয়েছিল মনোহর এডাভে, এমনটাই সন্দেহ করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার ওয়াগমারের গ্রেফতারির খবর সামনে আসার আগেই শ্রীরামসেনের মুখ্য কর্মী তথা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রমোদ মুতালিক এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সে সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির নেতারাও। সাংবাদিক সম্মেলনে মুতালিক দাবি করেন তাঁর পরিচিত সিনধাগিরির দুই যুবককে খুঁজে পাওয়া য়াচ্ছে না। ওয়াগমারের সঙ্গে শ্রীরামসেনার কোনওরকম সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে মুতালিক জানান, ‘‘আমাদের কাজকর্মের সঙ্গে এমন অনেকেই যুক্ত থাকেন, যাঁরা সংগঠনের সদস্য নন।’’

বিশেষ তদন্তদলের ফরেন্সিক রিপোর্ট অনুযায়ী, গৌরী লঙ্কেশ ও কন্নড় ভাষার গবেষক ও লেখক এম এম কালবুর্গিকে একই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩০ অগাস্ট খুন হন কালবুর্গি।

ব্যলিস্টিক তথ্য থেকে মনে করা হচ্ছে, গৌরী ও কালবুর্গিকে ৭.৬৫ এম এমের যে দেশি পিস্তল দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, বামপন্থী চিন্তাবিদ গোবিন্দ পানসারে হত্যকাণ্ডেও সেই একই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।  গোবিন্দ পানসারে ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে খুন হয়েছিলেন। একইসঙ্গে ব্যালিস্টিক তথ্য থেকে ইঙ্গিত মিলছে, পানসারে হত্যায় যে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল, যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকর হত্যাকাণ্ডেও তার মধ্যে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল। ২০১৩ সালের ২০ অগাস্ট পুণেতে খুন হন নরেন্দ্র দাভোলকর।

journalist gauri lankesh karnataka
Advertisment