লাদাখে অস্থিরতার বিশদ বিবরণ সহ জেনারেল নারাভানের স্মৃতিকথা এমন এক সময়ে সামনে এসেছে যখন ভারত-চিন এখনও সীমান্ত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য সামরিক এবং কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চালাচ্ছে।
প্রাক্তন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নারাভানের বইটি এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তার প্রাক্তন প্রধান জেনারেল এম এম নারাভানের স্মৃতিকথা পর্যালোচনা করছে। পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে ভারতীয় সেনার সঙ্গে চিনের সংঘর্ষের পর কেটে গেছে ৩ বছরের বেশি সময়। কী ঘটেছিল সেই দিন?
নিজের আত্মজীবনীতে তা নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে। সংঘর্ষের ঘটনাটি চিনা সরকার যাতে ভুলে না যায়, সে ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে ৩১ আগস্ট, ২০২০ রাতে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পূর্ব লাদাখে তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে সেই আত্মজীবনীতে।
প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে তাঁর স্মৃতিকথা 'ফোর স্টারস অফ ডেসটিনি'-তে সেই রাতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন শেয়ার করেছেন । ১৮ ডিসেম্বর সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া 'ফোর স্টারস অফ ডেসটিনি' স্মৃতিকথার কিছু অংশ প্রকাশ করে। এই বইটির প্রকাশক পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউসকে পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বইটির সফট কপি শেয়ার না করতে বলা হয়েছে।
এই পুরো মহড়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও কোনও না কোনও স্তরে জড়িত ছিল বলে এই স্মৃতিচারণে দাবি করা হয়েছে। তাঁর স্মৃতিকথা 'ফোর স্টারস অফ ডেসটিনি'-তে নারভানে রাজনাথ সিংয়ের নির্দেশাবলীর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, বিদেশ মন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) এর মধ্যে সেই রাতে ফোন কলের কথাও বর্ণনা করেছেন। স্মৃতিকথায় গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষ এবং অগ্নিপথ পরিকল্পনা সহ ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে চিনের সঙ্গে সামরিক সংঘাতের বিশদ বিবরণ রয়েছে। এর আগে চলতি মাসেই বইটি বাজারে প্রকাশের কথা ছিল।
সেনাবাহিনীর পর্যালোচনার কারণে বই প্রকাশে বিলম্ব ? সেই প্রতিক্রিয়ার জন্য জেনারেল নারাভানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেননি। জেনারেল নারাভানে বলেন, 'আমার যা করার ছিল আমি করেছি এবং পাণ্ডুলিপিটি প্রকাশকদের কাছে জমা দিয়েছি কয়েক মাস আগে। বিলম্ব হয়েছে কি না তা প্রকাশকদের উপর নির্ভর করে। তারা আমাকে সবকিছু বলবে এমনটা আশা করা যায় না'।
প্রাক্তন সেনাপ্রধান তাঁর স্মৃতিচারণে আর কী লিখেছেন?
প্রাক্তন সেনাপ্রধান তাঁর আত্মজীবনী ‘ফোর স্টারস অফ ডিসটিনি’-তে জানিয়েছেন, ২০২০ সালের ১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে আগ্রাসন চালিয়েছিল চিনের সেনা। ভারতীয় জওয়ানরা বাধা দিলে, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষের ফলে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তজেনা বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে জানিয়েছেন নারাভানে। প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে বলেছেন, চিন ছোট প্রতিবেশীদের ভয় দেখানোর জন্য “আক্রমনাত্মক কূটনীতি” এবং “উস্কানিমূলক” কৌশল অবলম্বন করছে এবং এই কারণেই ভারতীয় সেনাবাহিনী ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে প্রতিশোধ নিয়েছে।
নারভানে তার স্মৃতিকথা ‘ফোর স্টারস অফ ডেসটিনি’-তে গালওয়ান উপত্যকায় ভয়াবহ সংঘর্ষের বিষয়ে বলেছেন যে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ১৬ জুনের কথা কখনই ভুলবেন না, কারণ দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) প্রথমবারের মতো ভারতের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত বাঁধা পেয়েছিল। এম এম নারাভানে তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন- গালওয়ান ছিল আমার পুরো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দুঃখের দিনগুলোর একটি। একদিনে ২০ জনকে হারানো কঠিন ছিল।
ভারতের প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে চিন সম্পর্কে অনেক কথা তুলে ধরেছেন। তিনি তার বইতে উল্লেখ করেছেন চিন কখনই ১৬ জুনের ঘটনা ভুলবে না, যখন তার সেনাবাহিনীকে মারাত্মক পাল্টা আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি গালওয়ান উপত্যকার ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
প্রাক্তন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে তাঁর বইতে লাদাখে ২০ সেনা সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছেন। দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো চিনা বাহিনীকে মারাত্মক পাল্টা আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনী যা দেখিয়েছে তা “যথেষ্ট”।
২০২০ সালের জুনে, লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ও চিনা সেনাবাহিনীর মধ্যে হিংসাত্মক সংঘর্ষ হয়েছিল। এই ঘটনায় ২০ ভারতীয় সেনা জওয়ান নিহত হয়। প্রাক্তন সেনা প্রধান এই ঘটনা নিয়ে তার বইয়ে লিখেছেন, “এটি আমার পুরো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দুঃখের দিনগুলির মধ্যে একটি ছিল।” নারভানে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন।
প্রাক্তন সেনাপ্রধান লিখেছেন, 'প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং এটি সম্পূর্ণ সামরিক সিদ্ধান্ত। ‘আপনার যা ঠিক মনে তাই করুন।’
ভারত কোনো ধরনের হুমকি বরদাস্ত করবে না!
নারাভানের বইটিতে চিনা উসকানিতে ভারতের প্রতিক্রিয়ার উপর আলোকপাত করেছেন। প্রাক্তন প্রধান দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে ভারত তার প্রতিবেশীর কাছ থেকে কোনো ধরনের হুমকি সহ্য করবে না। তিনি বিশ্বাস করেন যে গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনাবাহিনীকে জবাব দিয়ে ভারত দেখিয়েছে যে ভারতীয় সেনাবাহিনী তার চিনা কৌশলকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করবে। তিনি বলেছেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনী চিনকে জবাব দিতে সর্বদা প্রস্তুত।