দিল্লি হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার বাটলা হাউস শ্যুটআউট মামলায় ট্রায়াল কোর্টের দেওয়া আরিজ খানের মৃত্যুদণ্ড খারিজ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। এই শ্যুটআউটে ২০০৮ সালে দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেলের ইনস্পেক্টর মোহনচাঁদ শর্মা নিহত হয়েছিলেন। হাইকোর্ট অবশ্য ৮ মার্চ, ২০২১ সালের ট্রায়াল কোর্টের রায়কে বহাল রেখেছে। যেখানে আরিজ খানকে ৩০২ ধারা (খুন), ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ৩৩৩ (স্বেচ্ছায় সরকারি কর্মচারীকে কাজে বাধা দিতে গুরুতর আঘাত করা), অস্ত্র আইন-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া বহাল রেখেছে।
নিম্ন আদালত খানকে দোষী সাব্যস্ত করার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছিল আর আরিজকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল। ট্রায়াল কোর্টের পাঠানো মৃত্যুদণ্ডের রায়ের নিশ্চিতকরণের জন্য মামলারও শুনানি করছিল বেঞ্চ। আইনি পদ্ধতির অংশ হিসেবে, যখন একটি ট্রায়াল কোর্ট একজন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, তখন মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য রায়টি হাইকোর্টের দ্বারা পরীক্ষা করা হয়। বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুল ও বিচারপতি অমিত শর্মার ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, 'বাটলা হাউসে যে গোলাগুলি চলেছিল, তা পূর্বপরিকল্পিত ছিল না।'
বেঞ্চ বলেছে যে এটি সরকারপক্ষেরই মামলা ছিল যে সন্দেহভাজন আতিফ আমিন ওরফে বাসিরকে গ্রেফতারের জন্য একটি অভিযান চালানো হয়েছিল। পুলিশের দল ফ্ল্যাটে পৌঁছেছিল এবং পরে গুলি চালানো হয়েছিল। আদালত উল্লেখ করেছে যে তদন্তকারীদের কাছে আরিজ খান সম্পর্কে পূর্বে কোনও তথ্য ছিল না। কারণ সে সন্দেহভাজন নয় বা সেই পর্যায়ে তদন্ত করা ব্যক্তিও ছিল না। আদালত আরও জানিয়েছে যে, আরিজ খানকে কোনও বিচারাধীন মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি।
হাইকোর্ট এই মামলায় আরিজ খানকে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার নির্দেশ বহাল রাখার সময় বলেছে যে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য এবং অন্যান্য প্রমাণযোগ্য উপাদান মিলেছে। ঘটনাস্থলে খানের উপস্থিতি এবং 'ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আক্রমণকারী পুলিশ দলের ওপর তার গুলি চালানোর ঘটনা' খানের দোষ প্রমাণ করেছে। বেঞ্চ অবশ্য বলেছে যে, 'প্রয়াত ইনস্পেক্টর মোহনচাঁদ শর্মার মৃত্যুর জন্য কোনও নির্দিষ্ট অভিযুক্তকে দায়ী করে খুনের গুলিটি করার কথা রেকর্ডে নেই। এই পর্যায়ে, এটি উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে এই আদালত এই সত্যটি সম্পর্কে সচেতন যে ঘটনার সময়, দেশ একজন পুলিশ অফিসারকে হারিয়েছিল। যিনি কর্তব্যের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর অবদান কৃতজ্ঞ জাতি কখনও ভুলবে না। যাইহোক, বর্তমান মামলার পরিস্থিতি, যেমনটি এখানে আলোচনা করা হয়েছে, এটি একটি বিরলের মধ্যে বিরল মামলার বিভাগে পড়ে না।'
আরও পড়ুন- সম্ভাব্য স্থল অভিযানের প্রস্তুতিতে ইজরায়েল, অন্ধকারে ডুবে থাকা গাজা ব্যস্ত খাবার সংগ্রহে
খানের সংশোধনের ব্যাপারে আদালত বলেছে যে খানের ওপর একটি মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন করা দরকার। সেই মূল্যায়ন এমনটা কখনও বলেনি যে আরিজ খানের সংশোধন হওয়া সম্ভব না। ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান বিহেভিয়ার অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস থেকে প্রাপ্ত তার মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন রিপোর্ট উল্লেখ করে আদালত জানিয়েছে যে, খানের 'একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব রয়েছে। মানসিক বা মানসিক ব্যাধির কোনও প্রবণতা নেই। সেই জন্য যাবজ্জীবনই খানের একটি উপযুক্ত শাস্তি হবে।'