প্রতি বছর আড়াই ইঞ্চি হারে ধস নামতে শুরু করেছিল উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠে। প্রায় ৭০০ বাড়িতে ফাটল চিহ্নিত করা হয়েছে। আরও ৮৬টি বাড়িকে বিপজ্জনক বলেও ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জেনেছে ৮৬টি বাড়িকে বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করার পাশাপাশি সেগুলিকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাসিন্দাদের সেই সকল বাড়ি ছাড়ার ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। বিভিন্ন রাস্তা এবং বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ার প্রায় সপ্তাহখানেক পরে, প্রশাসন রবিবার একে ভূমিধস এবং তলিয়ে যাওয়া অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, উত্তরাখণ্ডের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ), জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজি (এনআইএইচ)-সহ বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকদের মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হওয়ার পরে জোশীমঠের ঘটনাকে ধস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
জোশীমঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে কর্ণপ্রয়াগেও একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছে। দেরাদুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং দুই বছর ধরে এক গবেষণায় দেখেছে গেছে যে জোশীমঠ এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলি সাড়ে ছয় সেন্টিমিটার হারে মাটির নিচে বসে যাচ্ছে। যা প্রতি বছরের হিসাবে দেড় ইঞ্চি।
রবিবার পর্যন্ত জোশীমঠের ৬৮টি পরিবারকে অস্থায়ী ত্রাণকেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই আরও ৯০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হবে বলেই প্রশাসনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)-এর মতে, ‘ভূগর্ভস্থ পদার্থ সরে যাওয়ার কারণে ভূমি বসে গিয়েছে।’
যা অনেক কারণে ঘটতে পারে। এর অন্যতম কারণ হতে পারে মনুষ্যসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক। যেমন, ওই অঞ্চল থেকে খনিজ পদার্থ বা জল, তেল কিংবা অন্য কোনও প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ। পাশাপাশি ভূমিকম্প, মাটির ক্ষয় এবং মাটির সংকোচনও এই ধসের অন্যতম কারণ।
আমেরিকা ভিত্তিক সংস্থার ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে যে এই ধরনের ঘটনা ‘গোটা রাজ্য বা প্রদেশের মতো খুব বড় এলাকায় যেমন ঘটতে পারে। তেমনই ঘটতে পারে আপনার বাড়ির উঠোনের কোণের মত খুব ছোট এলাকায়ও।’ আর, এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে যে জোশীমঠের ধসের প্রকৃত কারণ কী? জোশীমঠের ধসের সঠিক কারণ এখনও অজানা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে অপরিকল্পিত নির্মাণ, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, জলের প্রাকৃতিক প্রবাহে বাধা এবং জলবিদ্যুৎ কার্যক্রমের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। শুধু তাই নয়, এলাকাটি একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। যার জেরে ঘনঘন ভূমিকম্পের প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই অঞ্চলে এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ৫০ বছর আগেই উল্লেখ করা হয়েছিল। এই ব্যাপারে সতর্কও করেছিল এমসি মিশ্র কমিটির রিপোর্ট। সেই রিপোর্টে এই এলাকায় অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক দুর্বলতাগুলোকে চিহ্নিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।