Advertisment

কৌশলী তৃণমূল কেন রাজ্যসভার পঞ্চম আসনের প্রার্থীকে সমর্থন দিল?

হিসাব বলছে, শুধু তৃণমূল কংগ্রেসের বাড়তি বিধায়কদের ভোটের দ্বারা জয় পাওয়া সম্ভব নয় নির্দল প্রার্থীর। এক্ষেত্রে নজর থাকবে কংগ্রেস ও সিপিএম বিধায়কদের প্রতি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
raya sabha election

শুক্রবার রাজ্য়সভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন দীনেশ বাজাজ।

বিনাযুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনী ছাড়বে না তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার রাজ্যসভা নির্বাচনে এ রাজ্যের পঞ্চম আসনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দীনেশ বাজাজের মনোনয়নপত্র দাখিলের পর এই মনোভাব স্পষ্ট। এদিনের মনোনয়নের ফলে রীতিমত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেন কংগ্রেস ও সিপিএমের জোটপ্রার্থী তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এদিকে, বিজেপি হুঙ্কার ছেড়েও শেষমেশ এই নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। ফলে তারা এখন দর্শকাসনে।

Advertisment

এবার এ রাজ্যে রাজ্যসভার পাঁচটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে। শাসকদল তৃণমূল চার আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ওই চার আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের জয় একপ্রকার নিশ্চিত। বাকি একটি আসনে কংগ্রেস ও সিপিএম প্রার্থী করেছে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যকে। পাটীগণিতের হিসাবে কংগ্রেস ও সিপিএম বিধায়কদের মিলিত ভোট এক জায়গায় পড়লে বিকাশবাবুর জয়ও যে নিশ্চিত তা বলাই যায়। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দীনেশ বাজাজ বিকাশবাবুর জয়ের পথে বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন।

তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়ে দিয়েছে, তাদের সমর্থন দীনেশ বাজাজের দিকে। এই নির্দল প্রার্থী তৃণমূলের কাছে ভোট চেয়েছেন। দলের বাড়তি বিধায়করা (বাকি চারটি আসনের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ভোটের পর) নির্দল প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে তৃণমূল জানিয়েও দিয়েছে। বুধবারই তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব নির্দল প্রার্থীর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। শুক্রবার মনোনয়ন জমার সময় শেষের ৩০ সেকেন্ডে প্রার্থীর দৌড়ের দৃশ্যও দেখল বঙ্গ বিধানসভা। রাজ্যসভার প্রার্থীর মনোনয়ন জমাকে কেন্দ্র করে এমন দৃশ্য বিধানসভা অতীতে কখনও দেখেছে বলে কেউ স্মরণও করতে পারছেন না।

কেন এই নির্দল প্রার্থী? কেনই বা তাঁকে সমর্থন করল তৃণমূল কংগ্রেস? তৃণমূল কংগ্রেসের চার প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ, মৌসম বেনজির নূর, দীনেশ ত্রিবেদী এবং সুব্রত বক্সীর জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই। পঞ্চম আসনে প্রার্থী দিলে জয়ের বিষয়ে সংশয় ছিল তৃণমূলের। তৃণমূল প্রার্থী হেরে গেলে প্রচার হতে পারে রাজ্যের শাসক দলের প্রার্থী রাজ্যসভার ভোটে বাম-কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে পরাজিত হল। ফলে সন্তর্পণে সেই রাস্তা এড়িয়ে গেল ঘাসফুল শিবির। বরং ঘুরপথে চাপ বাড়ালো কংগ্রেস ও সিপিএমের উপর। দীনেশ বাজাজের স্পষ্ট কথা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিয়েছেন যে বাড়তি তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়কদের ভোট তিনি পাবেন। তবে শুধু তৃণমূলই নয়, বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি বিধায়কদের কাছেও ভোট চাইছেন বাজাজ।

হিসাব বলছে, শুধু তৃণমূল কংগ্রেসের বাড়তি বিধায়কদের ভোটের দ্বারা জয় পাওয়া সম্ভব নয় নির্দল প্রার্থীর। এক্ষেত্রে নজর থাকবে কংগ্রেস ও সিপিএম বিধায়কদের প্রতি। রাজনৈতিক মহলের মতে, একটু ঘুরিয়ে বিরোধীদের মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে ঘাসফুল শিবির। সেক্ষেত্রে এক-আধটা ভোটও যদি বিরোধী শিবির থেকে নির্দল প্রার্থীর ঝুলিতে আসে তাহলেই কেল্লা ফতে। আর যদি নির্দল প্রার্থী জয় ছিনিয়ে আনতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তৃণমূলের মুখের হাসি আরও চওড়া হবে।

এদিকে বিজেপি আবার মনোনয়ন পত্র তুলে চমক দিতে চেয়েছিল। কিন্তু হাতে গোনা বিধায়ক নিয়ে যে যুদ্ধ জয় করা যাবে না, তা ভাল করেই জানে এ মুহূর্তে নির্বাচনী অঙ্কে তুমুল সফল বিজেপি। শুক্রবার সকালেও বিজেপি পরিষদীয় দলের নেতা মনোজ টিগ্গা জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভায় লড়াই করার কোনও ঝুঁকি নিতে চাইল না। তাহলে ফের বিধায়ক কেনা-বেচার অভিযোগ ওঠার সম্ভাবনা থাকত অথবা তৃণমূল বা জোট প্রার্থীর কাছে পরাজয়ের গ্লানিও ভোগ করতে হল না।

CONGRESS Cpm bjp tmc
Advertisment