নারীদেহে ইউট্রাস এবং ওভারি এই দুটি অঙ্গ যেন স্থিতিশীলতা দান করে। এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় যতদিন মেনস্ট্রুইয়েশন চলতে থাকে ততদিন কিন্তু সাংঘাতিক স্বস্তি। এর পরবর্তী পর্যায়েই যত গোলমাল! কেন? বেশিরভাগ সময় দেখা যায় এই পরবর্তী স্তরেই ওভারিয়ান ক্যান্সারের মত রোগের জন্ম নেয়।
কী কারণে হয় এই রোগটি?
যদিও বা সঠিক কোনও তথ্য নেই, তারপরেও চিকিৎসকরা অনুমান করেন জেনেটিক অ্যাডাপশন এর কারণে এটি হতে পারে। তারা বলেন যখন ওভারিয়ান ক্যান্সার রূপ নিতে শুরু করে ঠিক তখনই ডিম্বাশয়ের কাছের কোষগুলি ডিএনএ তে পরিবর্তন বিকাশ করে। এবং পরিবর্তন স্বরূপ কোষগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায় সঙ্গেই সংখ্যায় বিপুল পরিমাণে বাড়তে থাকে। এবং এই ক্যান্সার কোষগুলি মিলেই টিউমার তৈরি করে। যখন সুস্থ কোষগুলি আর কাজ করতে পারে না, নিজেদের ক্ষমতা হারায় তখনই এই কোষগুলি সাংঘাতিক মাত্রা গঠন করে, এবং শরীরের নানান অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কী ধরনের উপসর্গ দেখা যায়?
চিকিৎসকরা বলছেন, যখন একদম প্রথমে এটি ফরমেশন শুরু করে ঠিক তখন এটির কোনও উপসর্গ চোখে পড়ে না। এবং মেনোপজের পর এই সমস্যা দেখা দিলে লক্ষণ পেতে বেশ অসুবিধা হয়। তবে বেশ কিছুদিন পার হলেই শরীরে নানা ইঙ্গিত দেখা যায়...
- প্রথম যেই বিষয়টি দেখা যায় তার মধ্যে নয়তো ঋতুস্রাব ভয়ানক মাত্রায় হতে থাকে নয়তো হয়ই না।
- তলপেটে মারাত্মক ব্যথা এবং ফুলে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- খাবার খেতে শুরু করলেই অল্পতে পেট ভরে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়।
- অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া।
- পেলভিস পেশী অঞ্চলে অত্যন্ত অসুবিধা সহ্য করা।
- কোমর তথা পেট দিয়ে অত্যধিক যন্ত্রণা।
এবং সবথেকে বেশি যে সমস্যা দেখতে পাওয়া যায় তার মধ্যে, ঘনঘন মূত্র ত্যাগ করা। তাই এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কত ধরনের ওভারিয়ান ক্যান্সার হয়?
কোষের ধরন অনুযায়ী এই ধরনের ক্যান্সারের প্রকৃতি নির্বাচন হয়। তবে এর থেকে বাঁচার উপায় একটিই, সময় থাকতে অপারেশন... এবং ভীষণ সাবধানে থাকা, নইলে একবার টুইস্ট হয়ে গেলে ভীষণ বিপদ!
এপথেলিয়াল ওভারিয়ান ক্যান্সার :- এটি সবথেকে সাধারণ ফরমেশন। এটি সেরাস কার্সিনোমা এবং মিউসিনাস কার্সিনোমা এই দুই ধরনের প্রকারকে অন্তর্ভুক্ত করে।
স্ট্রমাল টিউমার :- এই জাতীয় ক্যান্সারের প্রকৃতি ধরা পড়লে অন্যগুলোর তুলনায় ভয় একটু কম এবং প্রাথমিক পর্যায়েই নির্ণয় করা সম্ভব, অপারেশন সম্ভব।
যে কারণগুলি আরও এই রোগের মাত্রা বাড়াতে পারে?
প্রথম, বয়স বাড়লেই ওভারিয়ান ক্যান্সার বাড়ে। ৪০ এর নীচে খুব একটা দেখা যায় না। মেনোপজের পর থেকে খুব সাবধানে থাকুন, নয়তো মুশকিল!
দ্বিতীয়, অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে অথবা ওবেসিটি থাকলে। বিশেষ করে তলপেটের কাছে চর্বি এবং মেদ এই সমস্যা বাড়াতে পারে। এবং এগুলি উচ্চ মাত্রার ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে।
তৃতীয়, অনেক দেরিতে সন্তান হলেও এই সমস্যা দেখা যায়। যারা ৩৫ বছরের পরে সন্তানের মা হন, তাদের মধ্যে এই রোগের সম্ভাবনা বেশি। এবং যারা ফুল টাইম প্রেগনেন্সি কাটান না, তারাও এর সম্মুখীন হতে পারেন।
চতুর্থ, মেনোপজের পর হরমোন থেরাপি গ্রহণ করলে বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন গ্রহণে এই সমস্যা বাড়তে পারে।
পঞ্চম, জেনেটিক হরমোন অর্থাৎ বাড়িতে কিংবা পরিবারে যদি কেউ এই জাতীয় ক্যান্সারের বাহক হন, তবে আপনার শরীরেও এটি আসতে পারে।