/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/01/new-cover.jpg)
ডিজিটাল যাপনের যুগে রোববারগুলোও কেটে যায় স্মার্ট ফোন কিমবা ল্যাপটপ স্ক্রিনে বুঁদ হয়েই। একঘেয়ে ঠেকলে গন্তব্য বড় জোর শপিং মল। আর সেখানেও তো সেই একই থোড় বড়ি খারা। সেই 'সেলফি', 'স্টেটাস' 'আপলোড'। প্রাণ খুলে গান-গল্প-আড্ডা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। হারানো স্বাদ এবার একটু অন্য মোড়কে ফিরে পাচ্ছে শহর কলকাতা। হিউম্যান লাইব্রেরি। শহরে প্রথম হিউম্যান লাইব্রেরির আসর বসছে ৬ জানুয়ারি।
পিন পতন স্তব্ধতা, তাক থেকে থরে থরে সাজানো বই-এর থেকে পছন্দ মতো একটা তুলে নিয়ে খাতায় এন্ট্রি করা, লাইব্রেরিতে যেমনটা হয়, তার সঙ্গে কিন্তু মিল নেই এই আসরের। বরং এখানে মানুষ কথা বলে যেতে পারে অনর্গল। প্রশ্ন করতে পারে, সরাসরি পেতে পারে উত্তর। এই-ই হল হিউম্যান লাইব্রেরি। এ ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল ইনদোর। সে ২০১৬ সালের ঘটনা। তারপর একে একে হায়দরাবাদ, দিল্লি, গুরুগ্রামেও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হিউম্যান লাইব্রেরির ভাবনা।
আরও পড়ুন, নিভে যাওয়া আঁচে বাঁচতে থাকা খুদেদের নিয়ে শীতের শহরে অন্যরকম উদযাপন
নতুন বছরের গোরাতেই আমাদের শহরে বসছে বই-মানুষের বৈঠক। রাজারহাট নিউটাউনের রবীন্দ্রতীর্থে বেলা ১২ টা থেকে ৩ টে ৪৫ পর্যন্ত। ঘন্টা চারেক সময়ের মধ্যে 'গল্প' শোনাবেন সমাজের নানা স্তর থেকে আসা মানুষ। এদের কেউ 'সিঙ্গল মাদার', কেউ রূপান্তরকামী, কেউ লড়াই করছেন সমাজের নানা জীর্ণ ধারণার বিরুদ্ধে, কারোর আবার দাম্পত্য জীবনের দগদগে ঘা শুকোয়নি এখনও। এরাই গল্প বলবেন, জীবনের গল্প। প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করার গল্প, বিধি নিষেধের চৌকাঠ পেরোনোর গল্প। আসলে জীবন থেকেই তো গল্প তৈরি হয়। তাই কাহিনী গাঁথার চেয়ে অনেক বেশি জীবন্ত তা।
বই নিঃসন্দেহে বন্ধু হতে পারে। কিন্তু সাদা কালো অক্ষরকাঁধে একটা ভরসার হাত রাখতে পারে না বোধয়। মুখোমুখি বসে জীবনের গল্প শুনতে চায় মানুষ। গল্প থামিয়ে দুটো কথা বলতে চায়। হিউম্যান লাইব্রেরির কলকাতা চ্যাপ্টারের দায়িত্বে থাকা দেবলীনা সাহা এই উদ্যোগ নিয়ে খুব উত্তেজিত। বললেন, " সমাজের চেনা ছক ভাঙতেই এমন উদ্যোগ নিলাম। আমার নিজের কোনোদিন হিউম্যান লাইব্রেরির অভিজ্ঞতা হয়নি। দেশের নানা শহরে হচ্ছে, তাহলে আমরা পারব না কেন? নানা সামাজিক ট্যাবু ভাঙতে চেয়েছি বরাবর। এবার সেই সুযোগ এল। যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনাই বারণ, সেই সব গল্প কাউকে তো বলতেই হবে"।