কাটমানি নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছিল রাজ্য়-রাজনীতি। ফের লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের গলসির গোহগ্রামে তৃণমূল চালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। বিজেপি নয়, দলের অভ্যন্তর থেকেই উঠেছে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ। দল চালাতে গেলে নানা ভাবে টাকা নেওয়া হয়, তা কার্যত স্বীকারও করে নিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান রিঙ্কু ঘোষ। এদিকে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, "দল চালানোর জন্য কাটমানির প্রয়োজন হয় না। তবে প্রমাণ হলে শাস্তির ব্যবস্থাও আছে।"
কাটমানির অভিযোগে একটা সময় গ্রাম-বাংলায় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির একাধিক কর্তাকে বাড়িছাড়া পর্যন্ত হতে হয়েছিল। দীর্ঘ দিন তাঁরা বাড়িতে ঢুকতে পারেননি। এবার দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কাটমানির অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য। অনলাইন টেন্ডার প্রক্রিয়াকে অফলাইন করার উদ্যোগ কেন নেওয়া হয়েছে তা নিয়েই মূলত অভিযোগ।
গলসির গোহগ্রাম পঞ্চায়েতের টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়েই কাটমানির অভিযোগ সামনে এসেছে। চলতি সপ্তাহে অর্থ উপসমিতির সভা ঘিরেই সদস্যদের মধ্যে চরম বিতর্ক বেধে যায়। উপপ্রধান বিমল ভক্তের অভিযোগ, "পঞ্চায়েত প্রধান রিঙ্কু ঘোষ সরকারী টেন্ডার অফলাইনে করতে চাইছেন। প্রথমে বিডিও-র ঘারে দায় চাপাতে চাইছিলেন। মূলত নেতাদের পরামর্শেই অফলাইনে টেন্ডার করতে চাইছেন প্রধান। ঢালাই রাস্তা, নর্দমা, পুকুরঘাট তৈরীর টেন্ডার ডাকা নিয়েই গন্ডগোল। প্রথমে অনলাইনে টেন্ডার প্রক্রিয়া চালু করার সিদ্ধান্ত হলেও টেন্ডার নোটিশ জারি করা হয়নি। অফ লাইন টেন্ডার হলেই কয়েকজন নেতার পকেট ভরতে পারে। কিছু ঠিকাদার বিনা প্রতিযোগিতায় বরাত পেয়ে তাঁদের ওই 'পার্সেন্টেজ' দেবেন। অনলাইনে করলে সেটা হবে না।"
আরও পড়ুন, ‘আজ যা চলছে, কাল থেকে তাও চলবে না’, সাফ কথা বাস মালিকদের
দ্রুত গতিতে কাজ সম্পন্ন করার জন্যই টেন্ডার প্রক্রিয়া অনলাইন থেকে অফলাইন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান। দল চালাতে যে নানা ভাবে টাকা নেওয়া হয় তা-ও স্বীকার করেছেন তিনি। বরাদ্দ গৃহনির্মাণ প্রকল্প থেকে টাকা নেওয়াকেই তিনি কাটমানি বলে মনে করেন। রিঙ্কু ঘোষ বলেন, "দল চালাতে টাকা নেওয়া হয়। সেটা সবাই জানে। তা নাহলে দল চলবে কীভাবে। বিডিও সাহেব বলছিলেন অনলাইন করলে কাজটা দেরী হতে পারে। দ্রুত গতিতে কাজের জন্য অফলাইনের কথা বলেছিলেন তিনি।"
পঞ্চায়েত প্রধান অফলাইন টেন্ডার নিয়ে গলসি ২ নম্বর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের ওপর দায় চাপাতে চেয়েছেন। কিন্তু বিডিও সঞ্জিত সেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "এই ধরনের কোনও কথাই আমি বলিনি। বরং ই-টেন্ডারকে আমরা উৎসাহ দিয়ে থাকি। ৫ লক্ষ বা তার থেকে বেশি টাকার কাজ করলে ই-টেন্ডার করার কথা। তবে গলসি পঞ্চায়েত সমিতি দেড় লক্ষ টাকার কাজেও ই-টেন্ডার করে থাকে। ৫ লক্ষ টাকার কম কাজেও অনলাইনে টেন্ডার করলে কোনও বাধা নেই।"
আরও পড়ুন, ‘গ্রাম-গঞ্জে ফের সক্রিয় চিটফাণ্ডের কারবার’, সতর্কবানী মুখ্যমন্ত্রীর
কাটমানি নিয়ে সোচ্চার হয়েছিল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তোলপাড় হয়ছিল রাজ্য-রাজনীতি। এদিন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, "এত ছোট স্তরের বিষয়গুলো আমাদের কাছে আসে না। এসব সভাধিপতি বা জেলাশাসকের বিবেচনার ব্যাপার। তবে নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রমাণিত হলে পদেও থাকতে পারবেন না।" তবে কাটমানি নিয়ে দল চলে না বলেও মন্ত্রী দাবি করেছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন