শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে নাম না করে মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে শোভনের উদ্দেশে এদিন মমতা বলেন, ‘‘আমরা যাঁরা রাজনীতি করি, তাঁদের দায়বদ্ধতা, বিশ্বসাযোগ্যতা অনেক বড়। একটা মানুষ রাজনীতিতে তখনই শোভা পান, যখন সমাজ, পরিবারের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা থাকে, সমাজ সংস্কারে দায়বদ্ধতা থাকে। গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে। রাজনৈতিক কারণে কে কী বলল, তাতে যায় আসে না’’। উল্লেখ্য, দীর্ঘকালের জীবনসঙ্গী রত্না চট্টোপাধ্যায় ও সন্তানদের ছেড়ে আলাদা থাকেন শোভন। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই তাঁর সংসার ভেঙেছে বলে এদিন ফের সরবও হয়েছেন শোভন-পত্নী রত্না। সেই প্রেক্ষিতে এদিন শোভনের বিজেপিতে যোগদানের পর মমতার এমন মন্তব্য রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন: উনি যেদিন আসবেন, সেদিনই বিজেপি ছাড়বেন শোভন: বৈশাখী
বিজেপিতে যোগ দিয়ে কী বলেছেন শোভন?
বিজেপিতে যোগদানের পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন শোভন। বিজেপি সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে মমতার ‘কানন’ বলেন, ‘‘আমি যখন তৃণমূলে ছিলাম ,পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছিলাম"। সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফলের পর দেশজুড়ে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির ব্যাপক সাফল্যের কথাও এদিন উল্লেখ করেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। বিজেপিতে যোগদানের মাধ্যমে দলের রাজনৈতিক জমি বাংলায় আরও পোক্ত করার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক এদিন বলেন, "আমরা একসঙ্গে সকলে কাজ করব’’। আর এরপরই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে শোভন বলেন, ওঁর মতো শিক্ষাবিদের যোগদান খুব কার্যকারী হবে’।
আরও পড়ুন: শোভনের বিজেপিতে যোগদান দেখে হাসছেন রত্না! কেন?
কী বললেন মুকুল রায়?
দিল্লির বিজেপি সদর দফতরে এদিন একদা সতীর্থ শোভনকে গেরুয়া অঙ্গবস্ত্র পরিয়ে পুনরায় সতীর্থ করে নেন মুকুল রায়ই। আনুষ্ঠানিক যোগদানের আগে দীর্ঘক্ষণ মুকুল-শোভনকে আলাপ আলোচনাও করতে দেখা গিয়েছে। প্রাক্তন সতীর্থের বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে মুকুল এদিন বলেন, ‘‘শোভন বাংলার রাজনীতিতে বড় নাম। মমতার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হওয়ার নেপথ্যে শোভনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। সাড়ে ৩ দশকের রাজনৈতিক জীবন শোভনের। কলকাতার মেয়র পদে থেকেছেন। ফলে তাঁর যোগদানে বিজেপির ক্ষমতা বাড়বে বলে আশা করছি। আগামী নির্বাচনে তৃণমূল বিরোধী দলেরও তকমা পাবে না’’। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতা তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘পাগলে কিনা বলে ছাগলে কিনা খায়! যে কোনও ভোটেই দাঁড়ালেন না, সে ভোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করছে’’।
আরও পড়ুন: ডাহা ফেল মমতা-পিকে, মুকুলের হাতে ‘সমীক্ষার ফল’
সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান দল হিসাবে তৃণমূলকে রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলে দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিশেষত কলকাতা পৌর এলাকা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সংগঠনের ক্ষেত্রে শোভন চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন বলেই মনে করা হয়। আর তাই শোভনকে তৃণমূলে ফেরানোর শেষ চেষ্টা করতেই তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন খোদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিকে, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে বেনজির সাফল্য পেলেও, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ ফল করেছে পদ্ম শিবির। তাছাড়া, আগামী বছর কলকাতা পুরসভার নির্বাচনকেও পাখির চোখ করছে বিজেপি। এই দুই বিশেষ লক্ষ্যে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে দলে নবাগত শোভন চট্টোপাধ্যায় বিশেষ কার্যকারী ভূমিকা পালন করবেন বলে মনে করছে গেরুয়া শীর্ষ নেতৃত্ব।