প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ বা তাঁর পূর্বসূরী গোয়ার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্কর, এঁরা কেউই নন- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং সরাসরি রাফাল কেলেঙ্কারিতে যুক্ত। বললেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।
একই সঙ্গে রাহুল উল্লেখ করেন যে, সীতারামণ তাঁর দু ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ভাষণে একবারের জন্যও অনিল আম্বানির সংস্থার নাম উল্লেখ করেননি, যদিও মূল আপত্তির জায়গা ছিল কী করে হ্যালের বদলে ওই সংস্থা অফসেট চুক্তি পেল।
সীতারামণ বলেছিলেন, রাহুল গান্ধী তাঁর সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েস ম্যাক্রঁর একটি ব্যক্তিগত আলাপচারিতার উল্লেখ করে গত বছর লোকসভায় বলেছিলেন যে ম্যাক্রঁ তাকে জানিয়েছেন রাফাল যুদ্ধবিমানের দাম নিয়ে কোনও গোপনীয়তা চুক্তি নেই।
আরও পড়ুন, শিব সেনা সঙ্গে থাক না থাক, ভোটের জন্য তৈরি হন: অমিত শাহ
রাহুল উঠে দাঁড়িয়ে এ বিষয়ে স্পষ্ট করতে চাইলে লোকসভা অধিবেশনে তুমুল হৈ হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
কংগ্রেস সদস্যরা সীতারামণের বক্তব্যের মাঝে বাধা দিতে থাকে এবং লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি ও তাঁর বিবৃতি দাবি করতে থাকেন। সীতারামণ রাহুলের নাম উল্লেখ করার পর অধিবেশনের অবস্থা সামলাতে আসরে নামতে হয় অধ্যক্ষ সুমিত্রা মহাজনকে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভাষণ শেষ হওয়ার পর রাহুল তাঁর বক্তব্য পেশ করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
রাহুল গান্ধী বলেন, ২০১৮ সালের মার্চে ম্যাক্রঁর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের পর তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বলেন, যে ভারতীদের অর্থ এই চুক্তিতে ব্যবহৃত হচ্ছে, কিন্তু দামের ব্যাপারটা তাঁদের কাছে গোপন রাখা হচ্ছে- এ বিষয়টি বিস্ময়কর। রাহুল বলেন, এর উত্তরে ম্যাক্রঁ তাঁকে জানিয়েছিলেন যে দামের বিষয়টি গোপনীয়তা চুক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়।
রাহুল বলেন, সীতারামণের অন্য বিবৃতি প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া অলাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যিনি ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন যে চুক্তির অফসেট পার্টনার হিসেবে অনিল আমবানির রিলায়েন্স ডিফেন্সের নাম প্রস্তাব করেছিল ভারত সরকার। ৩০ হাজার কোটি টাকার অফসেট চুক্তি রিলায়েন্সের পাওয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে তিনি দস্যুতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন বলেও মনে করিয়ে দেন রাহুল।
সীতারামণের উদ্দেশে রাহুল বলেন, “ম্যাডাম, শুধু সরকারের মিথ্যেকে ঢাকার চেষ্টা করা ছাড়া এই কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার ব্যাপারে আমি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি না, আমি মনোহর পারিক্করকেও অভিযুক্ত করছি না।“ রাহুল বলেন, “আপনারা যুক্ত বলে এখনও পর্যন্ত আমার কাছে কোনও প্রমাণ নেই।“ মোদী এ ব্যাপারে সরাসরি যুক্ত বলেই তাঁর অভিযোগ।
এরপর তিনি সীতারামণকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কেন অনিল আম্বানির নাম উল্লেখ করলেন না। “মূল কথা হল অনিল আম্বানি এই কনট্র্যাক্ট পেল কী করে? কে পাইয়ে দিল?“
প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে এড়িয়ে এবং কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই মোদী এই চুক্তির ঘোষণা করে দেন বলে অভিযোগ করে রাহুলের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী যখন এই বাইপাস সার্জারি করছেন, তখন কোনও আপত্তি উঠেছিল কি না।
রাহুলের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সীতারামণ বলেন, “আমাকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে“- বলা হয়েছে, “প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিথ্যে বলছে।“
তিনি আরও বলেন, তাঁর গর্ব করার মত কোনও খানদান নেই, তিনি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে উঠে এসেছেন।
সীতারামণ একই সঙ্গে বলেন রাহুলের পদবী- খানদান তাঁকে প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্য়াবাদী বলার অধিকার দেয় না।
এই সময়ে ফের একবার নিজের বক্তব্য পেশ করার সুযোগ চান রাহুল গান্ধী, তবে এবার আর তাঁকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। এরপর বিরোধী সদস্যরা রাফাল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবি তুলে অধিবেশন ত্যাগ করেন।
সংসদের বাইরে রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের সামনে বলেন, সীতারামণ তাঁকে মিথ্যাবাদী বলার বিষয়টি নিয়ে নাটক করছেন।
কংগেরেস সভাপতি বলেন, সীতারামণ তাঁর কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দেননি, এবং অনিল আম্বানির নামও উল্লেখ করেননি।
Read the Full Story in English