বিদ্রোহে কি তবে ইতি টানলেন শচিন পাইলট? রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার জয়পুরে ফিরলেন সে রাজ্য়ের প্রাক্তন উপমুখ্য়মন্ত্রী। এদিন জয়পুরের বাসভবনে সাংবাদিক বৈঠকে পাইলট বলেন, ''আমার বিরুদ্ধে যে মন্তব্য় করা হয়েছে, তাতে আমি মর্মাহত, স্তম্ভিত ও কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু আগামী প্রজন্মের কাছে উদাহরণ তৈরি করতে চেয়েছিলাম, তাই কোনও প্রতিক্রিয়া দিইনি''।
এদিন পাইলট আরও বলেছেন, রাজনীতিতে 'ব্য়ক্তিগত শত্রুতা'র কোনও জায়গা থাকা উচিত নয়। তাঁর কথায়, 'প্রতিহিংসার রাজনীতি' করা উচিত নয়।
এদিকে, রাহুল-প্রিয়াঙ্কার হস্তক্ষেপে কংগ্রেসের অন্দরে মাসব্যাপী টোনাপোড়েন, বিপর্যয় হয়তো শেষ হল। কিন্তু কতদিন তা স্থায়ী থাকবে? হাত শিবিরে প্রকট হয়ে দেখা দেওয়া নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব সত্যিই কি মিটলো? দলে ফিরলেও গেহলট-পাইলট আবারও কি একযোগে কাজ করতে পারবেন? আপাতত শতাব্দী প্রাচীন দলের অন্দরেই নানা প্রশ্ন ভিড় করছে।
আপাতত অ্যাডভান্টেজ অশোক গেহলট, বর্তমানে পরিস্থিতি অন্তত এমনটাই ইঙ্গিত করছে। সরকার বাঁচানো থেকে নিজের শিবিরেরবিধায়কদের ধরে রাখতে পারা। পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদের কৌশলে আপাতত মরু রাজ্যের মসনদে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারল কংগ্রেস। দেখার যে প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী পাইলটকে ফের নিজের জায়গা ছাড়েন কিনা অশোক গেহলট।
উল্টোদিকে রয়েছেন 'বিদ্রোহী' শচিন পাইলট শিবির। আপাতত সুর কিছুটা নরম তাঁদের। রাহুল-প্রিয়াঙ্কা সহ দলের হাইকম্যান্ডের আশ্বাসকে ঢাল করেই দলে ফেরার রাস্তা পাকা করেছেন পাইলট। তাঁর শিবিরের এক নেতার কথায়, ২০২৩ সালে আগামী বিধানসভা ভোটের আগেই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসানো হতে পারে শচিন পাইলটকে। আপাতত তাঁকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার প্রস্তাব দিয়েই ঠান্ডা রাখা হবে। তবে, দিল্লির চেয়ে রাজস্থানের রাজনীতিতেই বেশি আগ্রহী রাজেশ পাইলটের পুত্র। এখানেও 'যদি', 'কিন্তু' রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল না হলে শচিনের 'ঘর ওয়াপসি' যে কার্যত অকারণেই ছিল তা প্রমাণিত হবে।
সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে দু;ঘন্টার কথায় 'কী করণীয়' তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে কমিটি গঠনের আশ্বাস মিললেও শচিন ইঙ্গিত পান যে, গেহলটকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি থেকে সরানো আপাতত সম্ভব নয়। এরজন্য তাঁকে ধৈর্য ধরতে হবে। কিন্তু, নেতৃত্ব বদলে বেশি সময় লাগলে তা যে কোনও কাজের হবে না তা হাইকম্যান্ডকে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন কংগ্রেসের 'তরুণ তুর্কি' নেতা।
আপাতত ঠিক হয়েছে যে 'বিদ্রোহী' ১৮ বিধায়কের মধ্যে যাঁদের ক্যাবিনেট ও মন্ত্রিসভা থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের পদ ফেরিয়ে দেওয়া হবে। সংগঠনেও স্থান দেওয়া হবে পাইলট শিবিরের নেতাদের। এছাড়া 'বিদ্রোহী' সব বিধায়কের উপর থেকে মামলা প্রত্যাহার করা হবে।
শচিনকে বাগে এনে সরকার বাঁচাতে পারল কংগ্রেস। চওড়া হাসি হাত শিবিরের নেতাদের। এ কাজে অবশ্য নেপথ্যে থেকে কাজ করে গিয়েছেন দলের বর্ষীয়ান নেতা আহমেদ প্যাটেল ও এআইসিসি-র তরফে দলের সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেসি বেণুগোপাল। এর আগে দলের মধ্যে নবীণ-প্রবীন সমস্যা মেটাতে রাহুল গান্ধী হস্তক্ষেপ না করায় তাঁর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু এবার আহমেদ প্যাটেল ও কেসি বেণুগোপালের পরামর্শেই সমাধান সূত্র নিয়ে এগিয়ে আসেন রাহুল। আর তাতেই বরফ গলে। পাইলটকে দলে ধরে রাখতে কৌশলী ও প্রসংশনীয় ভূমিকা ছিল প্রিয়াঙ্কা গান্ধীরও।
স্বল্পকালীন মেয়াদে সমস্যা মিটল, রাজস্থানে ক্ষমতা ধরে রাখলো কংগ্রেস। কিন্তু, তা কতদিন? এই প্রশ্নেই মরু রাজ্যের রাজনীতিতে জল্পনা শুরু।
Read in English