১০ বছরে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর রাস্তা-ঘাট, রাস্তার আলো, জল সরবরাহে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূল প্রার্থী। পঞ্চায়েত থেকে সরাসরি নগরনিগমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ২০১২-এর ১সেপ্টেম্বর। কার্যত উন্নয়নের মাপকাঠিতে আগের থেকে অগ্রগতি হয়েছে। একথা স্বীকার করছেন ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা থেকে শাসক-বিরোধী নেতৃত্ব। তবে এখনও উন্নয়নের কাজ বাকি রয়েছে বলেও তাঁরা জানিয়েছেন। নিকাশি নালা ও জল দাঁড়ানো নিয়ে সমস্যা আছে বলে স্বীকার করেছেন এই ওয়ার্ডের প্রথম কাউন্সিলর।
চড়িয়াল খালের পাশে খালপুল সংলগ্ন রাস্তার ধারে শংকর পোড়েলের চায়ের দোকান। খালের পাশের রাস্তাটি খানা-খন্দে ভর্তি। পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা হওয়ার পর কী উন্নতি চোখে পড়ছে? শংকরের জবাব, 'এই রাস্তা ছাড়া এখানকার সমস্ত রাস্তাই ভাল। রাস্তায় বাতি রয়েছে। সরকারি জায়গায় বসবাস করায় বাড়ি তৈরির প্রকল্পের সুযোগ পাচ্ছি না।' জোকার বাসিন্দা অরূপ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, 'এখানে নিকাশি নালার হাল খুব খারাপ। বর্ষায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছিল। তবে হ্যা, রাস্তা-ঘাটের উন্নতি হয়েছে। গ্রীণ পার্কের বাসিন্দা বাসুদেব শীলের বক্তব্য, রাস্তা, আলো হয়েছে। পানীয় জলের সমস্যা যে টুকু রয়েছে তা-ও পূর্ণ হয়ে যাবে। তাছাড়া সমস্ত সরকারি প্রকল্প এখানে দলমত নির্বিশেষে সকলেই পাচ্ছি।' অভিযোগের পাশাপাশি উন্নয়নের কথা মেনে নিয়েছেন সাধারণ বাসিন্দারাও।
এখানকার বিদায়ী কাউন্সিলর শেফালি প্রামাণিক এবারের তৃণমূল প্রার্থী। জোকা মেট্রোর কাছে একটি আবাসনে প্রচার করছিলেন তিনি। এই ওয়ার্ডের প্রথম কাউন্সিলর হিসাবে পঞ্চায়েত ও পুরসভার মধ্যে কী পার্থক্য দেখেছেন? শেফালি বলেন, 'বামফ্রন্টের সময় এই এলাকা পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে না ছিল রাস্তা, না ছিল পানীয় জল। দু-একটা রাস্তা ভাল ছিল। রাস্তায় আলো ছিল না। প্লাস্টিকের জলের লাইন পাতা ছিল। যার জন্য দু'দিন ছাড়া-ছাড়া পাইপ ফেটে যেত। বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছাত না। ২০১৫-তে আমি পৌরপ্রতিনিধি হই। পাকা রাস্তা হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় জল পৌছিয়েছে, চারিদিকে আলো, কোথাও অন্ধকার নেই। পার্ক হয়েছে, স্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়েছে।'
সাধারণ মানুষ থেকে বিরোধীরা নিকাশি নালা নিয়ে সমস্য়ার কথা বলেছে। পানীয় জলের কিছুটা সমস্যা রয়েছে। বৃষ্টিতে দীর্ঘ সময় জল দাঁড়ানোর কথা বলছে। কী বলবেন.. কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে শেফালি প্রামাণিক বলেন, 'আমরা এখানে ড্রেন করেছি। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় এখনও ড্রেন করা যায়নি। তবে আমার এই ওয়ার্ডে খুব একটা জল দাঁড়ায় না। তবে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় এবার জল দাঁড়িয়েছিল। কাল সেখানে মিটিং করেছি। মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে এসেছি। এবছর তাঁরা বৃষ্টির মধ্যে খুব কষ্ট পেয়েছে। বৃষ্টির সময়ও সেখানে ছিলাম। পাম্প বসিয়ে জল সরিয়েছি। আগামি দিনে আমাদের বোর্ড ক্ষমতায় আসার পর এই সমস্যার সমাধানের জন্য আমি কর্পোরেশনে গিয়ে প্রস্তাব রাখব। পানীয় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অর্থানুকূল্যে জোকায় ওভারহেড জলের ট্যাঙ্ক হয়েছে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। করোনা পরিস্থিতির জন্য কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। ২২-য়ে গার্ডেনরিচের পরিশুদ্ধ পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে। আমার লক্ষ্য, রয়েছে সাধারণ মানুষের সাধ্যে মধ্যে একটা কমিউনিটি হল তৈরি করা।'
দীর্ঘসময় জোকা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে ছিল। একসময়ের পঞ্চায়েত প্রধান এবার সিপিএমের প্রার্থী বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ভাবে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ করেননি তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরাও। সিপিএম প্রার্থীর বক্তব্য, 'উন্নয়ন প্রকল্পে মানুষের অংশকগ্রহণ নেই। কর্পোরেশন হওয়ায় উন্নতি অবশ্যই বেড়েছে। কারণ তখন উন্নয়নের যে টাকা বরাদ্দ হত কর্পোরেশন হওয়ার পর সেই অর্থের পরিমান বেড়েছে। তাই উন্নয়ন করা সুবিধা। সুজন চক্রবর্তী সাংসদ হওয়ার সময় আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল এসেছিল। এটাকে নষ্ট করা হয়েছে বড় বড় ডীপ টিউবয়েল বসিয়ে। মাঝে-মধ্যে জল বন্ধ করা হয়।'
ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুললেন সিপিএম প্রার্থী। তাঁর বক্তব্য, 'ড্রেনেজ সিস্টেম একেবারেই ভাল না। চড়িয়াল খাল বুজিয়ে নির্মান কাজ হচ্ছে। এর ফলে জলপ্লাবন হয়ে যাবে। জল জমেও যাচ্ছে। খাল সংস্কার হয় না। ময়লা তুলে দিচ্ছে। পলি সরানো হচ্ছে না। জোকা অঞ্চলে পুকুরের গার্ডওয়াল পঞ্চায়েতের সময় করা। রাস্তায় প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে তার ভিত্তি আমাদের সময়ে করা। প্রাথমিক স্কুলে বৈদ্যুতিকরণ পঞ্চায়েতের সময় করা হয়েছে।'
বাড়ি বাড়ি প্রচার করছেন বিজেপি প্রার্থী অনিন্দিতা ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, 'কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে ডোবা। বাড়িতে ছাদ নেই। বর্ষাকালে বাড়ির ভিতর জলময় হয়ে যায়। নিদারুন কষ্টে ভোগে বাসিন্দারা। অনেক জায়গায় ড্রেন নেই। পুকুরগুলো একঘণ্টা বৃষ্টি হলে গঙ্গা হয়ে যায়। ভিতরের রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট লাইট জলে না। অন্ধকার থাকে। এখানকার মেয়েরা দূরদূরান্তে প্রাণ হাতে নিয়ে কাজে যায়। সেদিকে উন্নয়নের চেষ্টা করব। আমফানে প্রচুর বাড়িতে ক্ষতি হয়েছে। পানীয় জল নেই সর্বত্র।'
১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছে ১১,৪৭৫। মোট বুথ ১৩টি। এই ওয়ার্ডে রাজনৈতিক হিংসা তুলনামূলক নেই বললেই চলে, জানিয়েছেন বাসিন্দারা। সিপিএম বলছে এখানে লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। বিজেপিও বলছে লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। তৃণমূল প্রার্থীর বক্তব্য, করোনা বা আমফান-ইয়াসের সময় বিজেপি প্রার্থীকে দেখা যায়নি। আর সিপিএম প্রার্থী পঞ্চায়েতে থাকার সময় কী কাজ করেছে তার জবাব ভোটেই দেবে সাধারণ মানুষ। বিধানসভা নির্বাচনে এলাকায় এলাকায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের যে উদ্দীপনা ছিল তা কিন্তু অনেকটা উধাও। বিজেপির বক্তব্য, ভয়ে অনেকে ময়দানে নামতে পারছে না। তবে তাঁরা ভোট বিজেপিকেই দেবে। এদিকে খালপুলের পাশে তৃণমূল পার্টি অফিসে বসে, স্থানীয় তৃণমূল নেতা অরূপ কুমার মাইতি বলেন, বিধানসভা ভোটের পর এখানে একজনও বিজেপি কর্মীর গায়ে হাত পড়েনি। বাড়ি ভাংচুর করা হয়নি। আমাদের এলাকায় শান্তি রয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন