রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপাল সংঘাত এবার চরমে পৌঁছোল। মমতা সরকারের আচরণে তিনি ‘অপমানিত’, এমন বিস্ফোরক অভিযোগই করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। রেড রোডে পুজো কার্নিভাল ঘিরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমায় ডেকে অপমান করা হয়েছে। ৪ ঘণ্টা ধরে বসিয়ে রাখা হয়েছিল, কিছু দেখানো হয়নি (ব্ল্যাক আউট)’’। তাঁকে ‘সেন্সর’ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল।
ঠিক কী বলেছেন রাজ্যপাল?
সাংবাদিকদের রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমায় ডেকে ওইদিন (পুজো কার্নিভালের দিন) অপমান করা হয়েছে। ৪ ঘণ্টা ধরে বসেছিলাম, কিছু দেখানো হয়নি (ব্ল্যাক আউট)। আমন্ত্রণের পর কীভাবে ব্ল্যাক আউট করা হল? এই অপমান শুধু আমায় করা হয়নি। বাংলার মানুষকে অপমান করা হয়েছে, বাংলার সংস্কৃতিকে অপমান করা হয়েছে। আমি খুবই ব্যথিত ও মর্মাহত। আমি আমার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করে যাব’’। রাজ্যের প্রথম নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁর সঙ্গে এই ব্যবহার করা হল, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল। রাজ্যপাল আরও বলেন, ‘‘৪ ঘণ্টা ওখানে ছিলাম, এক সেকেন্ডের জন্যও আমাকে দেখানো হয়নি। রাজ্যের প্রথম নাগরিককেই ব্ল্যাক আউট! কেউ আমায় বলেছেন, এটা জরুরি অবস্থার মতো, এটাও একরকমের সেন্সরশিপ। রাজ্যপালকে এমন জায়গায় বসানো হয়েছে, যেখান থেকে একটা অনুষ্ঠানও দেখা যায়নি। ২০-২৫ জন লোক সামনে ঘিরে ছিল সবসময়’’। উল্লেখ্য, রেড রোডে শারদ কার্নিভালের দিন রাজ্যপালের বসার জন্য আলাদা মঞ্চ গড়া হয়েছিল। সেখানেই বসেছিলেন রাজ্যপাল।
বিস্ফোরক অভিযোগ রাজ্যপালের, কী বলেছেন?#WestBengal https://t.co/txJTsqjNQ9 pic.twitter.com/0kk2TUaBWG
— IE Bangla (@ieBangla) October 15, 2019
আরও পড়ুন: ‘উদ্বেগজনক পরিস্থিতি রাজ্যে’, জিয়াগঞ্জের খুন নিয়ে সরব রাজ্যপাল, পাল্টা তোপ তৃণমূলের
এ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কার্নিভালে রাজ্যপালকে আড়ালে রেখে বসানো হয়েছে। এটা অপমানজনক। ৪ ঘণ্টা বসেছিলেন, তাঁর খারাপ লেগেছে। মুখ্যমন্ত্রী অসহিষ্ণুতার কথা বলছেন, তাঁরাই আবার এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন। তবে এটা সরকার ও রাজ্যপালের ব্যাপার’’। অন্যদিকে, পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় বলেন, ‘‘রাজ্যপালের এহেন মন্তব্য দুঃখজনক’’।
আরও পড়ুন: জিয়াগঞ্জে শিক্ষক পরিবার খুনে গ্রেফতার রাজমিস্ত্রি
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ‘হেনস্থা’র ঘটনায় রাজ্যপালের ‘ভূমিকা’ একেবারেই ভাল চোখে দেখেনি শাসক শিবির। যাদবপুর ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের বিক্ষোভে আটক বাবুলকে উদ্ধারে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর জলঘোলা হয়। এরপর সম্প্রতি জিয়াগঞ্জে সপরিবারে শিক্ষক খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সরব হন রাজ্যপাল। এ ঘটনাতেও রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করতে মাঠে নামেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। সেই প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এদিন যে ভাষায় অভিযোগ করলেন রাজ্যপাল, তা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।