এশিয়ান গেমসের প্রথম দিনেই ইতিহাস লিখেছেন ভারতীয় সাঁতারু সজন প্রকাশ। ৩২ বছর পর দ্বিতীয় ভারতীয় সাঁতারু হিসেবে এশিয়াডের ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ের ফাইনালে উঠেছেন তিনি। পদকহীন ভাবেই জার্কাতার অ্যাকোয়াটিক সেন্টার ছেড়েছেন সজন।
কেরলের ইদুক্কি জেলার বছর চব্বিশের সাঁতারুর মন পড়ে আছে দেশে। ভয়াবহ বন্যায় তাঁর ঘরবাড়ি ধুয়ে গিয়েছে। এমনকি শেষ তিন দিন তাঁর পরিবারের পাঁচজন সদস্যের কোনও খোঁজ নেই। এই মানসিক পরিস্থিতিতেই এশিয়াডে দেশের জন্য লড়ছেন প্রকাশ।
প্রকাশ তৃতীয় দ্রুততম কোয়ালিফায়ার হয়ে ফাইনালে উঠেও পদক জিততে পারেননি। হয়তো সে মনোনিবেশ করতেই পারেনি। কিন্তু আটজনের ফাইনালে পাঁচে শেষ করেছেন তিনি। পুরোট করতে তিনি সময় নিয়েছেন ১ মিনিট ৫৭.৭৫ সেকেন্ড। এটাও একটা জাতীয় রেকর্ড। শেষবার এশিয়ান গেসমের ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ের ফাইনালে উঠেছিলেন খাজান সিং। সিওলে রুপো জিতেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের জন্ম: বিশ্ব সাইকেল চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রথম পদকজয়ী আন্দামানের এসো আলবেন
গতকাল সন্ধ্যায় ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ কথা বলেছিল প্রকাশের মা শান্তিমলের সঙ্গে। তিনি বললেন, “প্রকাশ অত্যন্ত ভেঙে পড়েছে। কিছুতেই ফোকাস করতে পারছে না। এরকমটা না-হলে ও পদক জিততে পারত।” ২০১৬ রিও অলিম্পিকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন প্রকাশ। পদুচেরিক নেইভেলিতে মায়ের সঙ্গে থাকেন প্রকাশ। তাঁর দাদু, কাকা ও আরও তিন পরিবারের সদস্যের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এশিয়ান গেমসের কথা ভেবেই এত কথা ছেলেকে বলেননি মা। ভয় পেয়েছিলেন যে, জানতে পারলে প্রকাশের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়বে। কিন্তু শান্তিমল জানিয়েছেন যে, গেমস ভিলেজের কেউই প্রকাশকে সব জানিয়েছেন। এরপরই প্রকাশ রাতে মা’কে ফোন করে সবটা জানতে চান। তখনই শান্তিমল জানান, “আমরা সব হারিয়েছি। বাড়ি, জমি সব। পরিবারের কাউকেও খুঁজে পাচ্ছি না।”
সজন প্রকাশ
শান্তিমল মনে করছেন যে, তাঁর পরিবারের নিখোঁজ সদস্যরা কোনও নিরাপদ আশ্রয় আছেন। প্রকাশের সঙ্গে তাঁর এক মিনিটের বেশি কথা হয়নি। ফোনটা কেটে গিয়েছিল। এরপর থেকে চেষ্টা করেও আর মা-ছেলের যোগাযোগ হয়নি। শান্তিমল বলেছেন, তাঁরা প্রত্যন্ত এলাকায় থাকেন। এখানে যোগাযোগের খুবই সমস্যা।অর্জুন পুরষ্কারপ্রাপ্ত সাঁতারু নিশা মিল্লেতই প্রকাশের মেন্টর। তিনিও বিশ্বাস করেন যে, প্রকাশের মানসিক অবস্থা এরকম না-হলে তিনি ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে দেশের জন্য পদক আনতে পারতেন। যদিও প্রকাশের সামনে আরও একটা সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে নিজেকে প্রমাণ করার। ৪x২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে নামবেন তিনি। প্রকাশের মা তাঁকে শক্তি জুগিয়েছেন। বললেন, “আমি ওকে খেলায় মন দিতে বলেছি। ও প্রচণ্ড কঠোর পরিশ্রম করেছে। ওকে বলেছি এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।”