বিশ্বকাপের ঠিক আগেই দল ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তারপর থেকেই অশান্ত ওপার বাংলার ক্রিকেট। দলের দুই সিনিয়র মোস্ট ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল প্রকাশ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়িতে নেমে পড়েছেন। একসময় অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন। তবে এখন পরস্পরের দিকে মুখ তুলে পর্যন্ত তাকাননা। এতটাই খারাপ সম্পর্ক! বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন চলতি বছরের শহরটি এই বিষয় খোলাখুলি জানিয়েছিলেন। আর বাংলাদেশ বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণার পর থেকেই সেই সম্পর্ক অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে।
কী ঘটেছে?
গত মঙ্গলবার ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছিল বিসিবি। তবে বিশ্বকাপগামী দল থেকে বাদ দেওয়া হয় সিনিয়র তারকা তামিম ইকবালকে। নির্বাচকরা জানিয়েছিলেন, পিঠের ইনজুরির জন্যই তামিমকে নেওয়া হয়নি। তবে সাকিব এক সাক্ষাৎকারে বলে দেন, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তিন নম্বরে ব্যাট করতে রাজি হননি তামিম। এখানেই না থেমে সতীর্থকে 'শিশুসুলভ', 'এমনকি আদর্শ টিমম্যান নন' এমনটাও বলে দেন বিস্ফোরকভাবে। ওয়ার্ল্ড কাপের ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগেই তামিম নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। সাকিব সেই ঘটনাতেও অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। বলে দেন, আরও আগে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।
সাকিবের বয়ান: "দলের স্বার্থে ক্রিকেটারদের যেকোনও পজিশনে ব্যাট করা উচিত। দল সর্বদাই অগ্রাধিকার পাবে। সে তুমি যতই ১০০, ২০০ করো না কেন! ব্যক্তিগত কীর্তি নিয়ে কী হবে? স্রেফ নিজের কামানোর জন্য? দলের জন্য তাহলে তুমি মোটেই অনুগত নও। মানুষ তো এসব জিনিস বোঝেও না।"
"কেন ওঁকে এমন প্রস্তাব দেওয়া হল? দলের জন্য। এতে ভুল কী রয়েছে? যদি তুমি এই প্রস্তাবে সম্মত হও, তাহলে তুমি টিম ম্যান।এমনভাবে যদি না ভাবো, তাহলে টিমম্যান মোটেও নও তুমি। তুমি তাহলে ব্যক্তিগত কীর্তি, সাফল্য, খ্যাতি, যশের জন্য খেলছ। দলের জন্য নও।"
তানিমের বক্তব্য কী?
জুলাইয়ে অবসর ঘোষণা করেন ইউটার্ন নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবসর ভেঙে ফিরে আসেন তামিম। তারপর থেকেই জাতীয় দলে তারকার জায়গা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। এমনকি বিশ্বকাপের ঠিক আগেই পিঠের চোটের জন্য কয়েক সপ্তাহ বিশ্রামও নেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রত্যাবর্তন ঘটে তামিমের।।হাফসেঞ্চুরিও হাঁকান। এই সিরিজ শেষের পরেই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করা হয়। তারপর তামিম নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সরাসরি বলে দেন, তাঁর কোনও ফিটনেস ইস্যুই নেই।
সেই পোস্টে তিনি বলেন, "নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের পর নিজের শারীরিক আপডেট নির্বাচকদের জানিয়ে রেখেছিলাম। আমার হালকা ব্যথা থাকতে পারে (বিশ্বকাপের চলাকালীন)। তাই দল নির্বাচনের সময় এই বিষয়গুলো যেন মাথায় রাখা হয়।" তামিম আরও জানিয়ে দেন, তিনি এক বিসিবি আধিকারিককে তিন নম্বরে ব্যাট করার প্রস্তাব খারিজ করে দেন। "উনি আমাকে বললেন, যদি তুমি খেল, তোমাকে ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বরে ভাবা হচ্ছে। সেই সময় আমার মনের অবস্থা কী হয়েছিল, সেটা বুঝতে হবে। সবেমাত্র একটা ভালো ইনিংস খেলেছি। বেশ ভালো লাগছিল। হঠাৎ করেই এমন আলোচনা শুরু হয়ে গেল। এটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। ১৭ বছর একই পজিশনে ব্যাটিং করছি। তিনে অথবা চারে ব্যাটিং করার কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। মিডল অর্ডারে কখনই খেলিনি। তাই স্বভাবতই এমন আলোচনা ভালভাবে নিইনি।"
"উনি যা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাতে মোটেই ভাল লাগেনি আমার। মনে হচ্ছিল জোর করে আমাকে থামানোর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। সরাসরি বলে দিই, এমন মানসিকতা থাকলে আমাকে বিশ্বকাপে যেন ভাবা না হয়। এই নোংরা বিষয়ে থাকতে চাইনি।" বলে দেন তামিম ইকবাল।
বিশ্বকাপের ঠিক আগেই এই নাটকীয়তার অর্থ একটাই। অটোমেটিক কোয়ালিফাই করেও ওয়ার্ল্ড কাপের সমস্ত প্রস্তুতি, প্ল্যানিং আপাতত বিশ বাঁও জলে। এই বিতর্ক সরিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভাল ফল করতে পারবে? সেটাই আপাতত দেখার।