ভারতীয় ফুটবলে কোচিং করিয়ে যাওয়া অন্যতম সফল কোচ। গত মরশুমেও কোচিং করিয়েছেন কেরালা ব্লাস্টার্সের। তবে অতিমারীর পরেই দেখলেন কোনো ক্লাবের অফার নেই তাঁর কাছে। বর্তমানে সম্প্রচারকারী চ্যানেলে ফুটবল বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে এলকো সাঁতোরিকে। প্রাক্তন ক্লাবের আইএসএলের অভিষেক ম্যাচেই ডার্বি দ্বৈরথ দেখতে উদগ্রীব হয়ে ছিলেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে অকপট ডাচ কোচ-
ডার্বি উপভোগ:
আমার চেনা দুই দল-ই নতুন পরিচিতি নিয়ে ডার্বিতে নামল। এই ডার্বি দেখতে মুখিয়ে ছিলাম। কীভাবে এই মেগা ম্যাচের জন্য দুই দল প্রথম একাদশ সাজায় তা নিয়েও কৌতূহল ছিল। স্টেডিয়ামে দর্শক ছিল না। তবে সেই উত্তেজনা, চাপ, টেনশন পূর্ণ মাত্রায় বর্তমান ছিল।
আরো পড়ুন: মারাদোনার সঙ্গে একটাও ছবি নেই! আক্ষেপ নিয়েই কফিনবন্দি দিয়েগোর ‘শিক্ষক’
ইস্টবেঙ্গলের উন্নতির ক্ষেত্র:
বেশ কিছু জায়গায় ইস্টবেঙ্গলকে উন্নতি করতে হবে। যেভাবে ৩-৪-৩ ছকে জ্যাক মাঘোমা এবং এন্থনী পিকলিংটন শ্যাডো স্ট্রাইকার হিসাবে অপারেট করছিল, বেশ লেগেছে। তবে ওদের সমস্যা হল কোনো প্রপার স্ট্রাইকার নেই। দ্বিতীয়ার্ধে ওদের ফিটনেস লেভেলেও বেশ ঘাটতি দেখা গেল। তাই ওদের দুটো ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে: স্ট্রাইকার এবং ফিটনেস। গোলকিপার দেবজিত মজুমদারের উচ্চতাও সমস্যার।
ইস্টবেঙ্গলের যেখানে ভুল হল:
ইস্টবেঙ্গলের খুব বেশি ভুল হয়নি। তবে আমার মনে হয়েছে, রয় কৃষ্ণের শট আটকানো উচিত ছিল দেবজিতের। একদম মাঝখান দিয়ে বল জালে জড়াল। লিড নেওয়ার পরেই এটিকে মোহনবাগান ৫-৪-১ ছকে চলে গেল। এই রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি ইস্টবেঙ্গলের কাজ আরও কঠিন করে দিয়েছিল। তবে ইস্টবেঙ্গল এদিনই প্রথম টুর্নামেন্টে নামল। নিজেদের পারফরম্যান্সে ওরা খুশি হতেই পারে।
রবি ফাউলারের ডার্বি ট্যাকটিক্স:
রবি ফাউলার নিজের ট্যাকটিক্স ধরে রেখেছে আগাগোড়া। ফুটবল খেলার উদ্দেশ্য নিয়েই রণকৌশল সাজিয়েছিল ফাউলার। ওঁর স্টাইলেই বেঙ্গালুরু একসময় ফুটবল খেলত। বেঙ্গালুরু স্ট্রাইকারদের বলের যোগান দেওয়ার জন্য লং বল স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল। তবে জ্যাক মাঘোমা এবং এন্থনি পিলকিংটন যেভাবে মসৃণ খেলা অপারেট করছিল তা বেশ লেগেছে। তবে স্ট্রাইকারের সঙ্গে আরও তালমিল বাড়াতে হবে। আশা করি আগামী দিনে ফাউলারের ইস্টবেঙ্গল আরো উন্নতি করবে।
ভারতে ইংরেজ কোচ সফল নয়, এই মিথ ভাঙবেন রবি ফাউলার:
কোচের দক্ষতা নিয়েই আলোচনা হওয়া উচিত। কোন দেশ থেকে এসেছেন, তার পরিবর্তে। আমরা স্প্যানিশ কোচেদের আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার কথা বলি। তবে এই স্টাইল অনেকটাই এসেছে নেদারল্যান্ডস থেকে। গুয়ার্দিওলা ২০০৮ এ বার্সেলোনায় এই স্টাইলে খেলার পরে স্পেন জাতীয় দলও এভাবে খেলে সফল হয়। তার আগে কিন্তু আন্তর্জাতিক ফুটবলে স্পেন সেরকম আলোচিত ছিল না ফুটবল মহলে।
এটিকে মোহনবাগান কি অপ্রতিরোধ্য:
একদমই নয়। গতবারেই একমাত্র দল হিসেবে আমার কেরালা ব্লাস্টার্স দুবার মরশুমে ওদের হারিয়েছিল। দুটো স্ট্র্যাটেজিতে এটিকেএমবি-কে হারানো যেতে পারে: ওরা যদি প্রতি আক্রমণভিত্তিক খেলা খেলে, তাহলে মাঝমাঠ থেকে কোনোভাবেই যেন কাউন্টার এটাক তৈরি না হয়। পাল্টা হিসাবে লং বল থিওরিতে স্ট্রাইকারদের কাছে বল পাঠাতে হবে।
পরের প্ল্যানিং হল, সাইড ব্যাকদের স্ট্রাইকারের পিছনে উঠে আসতে হবে। এটিকেএমবি যখন পাঁচ ডিফেন্ডারে খেলে তখন প্রতিপক্ষ প্লেয়াররা মাঝমাঠে হঠাৎ উঠে এলে উইং ব্যাকদের মিডফিল্ডে যেতে পারে না। গত বছর আমরা হোলিচরণ নার্জারির কাছে এভাবেই আমরা বল সাপ্লাই করতাম।
আন্তোনিও লোপেজ হাবাস ফ্যাক্টর:
ওঁর ডিফেন্সিভ ট্যাকটিক্স আমাকে হোসে মরিনহোর কথা মনে পরিয়ে দেয়। ওঁর রক্ষণাত্মক ফুটবল আমার বেশ লাগে। এই সবসময় হাবাসকে মরিনহোর সঙ্গে তুলনা করি। ওঁর দলেও কোয়ালিটি ফুটবলাররা রয়েছে যাঁরা এই স্ট্র্যাটেজিতে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
প্লে অফে কোন দল যেতে পারে:
এটিকে মোহনবাগান, বেঙ্গালুরু এফসি, এফসি গোয়া এবং মুম্বই সিটি এফসি প্লে অফে উঠতে পারে। বাকিদের নিয়ে সংশয় থাকলেও এটিকে মোহনবাগান যে প্রথম দল হিসেবে প্লে অফে যোগ্যতা অর্জন করবে, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
কোচ হিসেবে ভবিষ্যৎ:
এই অতিমারীর জন্য কবে আবার কোচিংয়ে প্রস্তাব পাব, জানা নেই। ভারত থেকে এবার কোচিংয়ে কোনো প্রস্তাব না পেয়ে কিছুটা অবাকই হয়ে গিয়েছি। হতে পারে আমি খোলামেলা কথাবার্তা বলতে পছন্দ করি। এবং অধিকাংশ সময়েই আমাকে ভুল বোঝা হয়। আপাতত স্টার স্পোর্টসে ফুটবল বিশেষজ্ঞের ভূমিকার কাজ বেশ উপভোগ করছি।
Read the full interview in ENGLISH
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন