Fact Check: শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর থেকে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে একের পর এক সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে নৃশংস নির্যাতনের খবর উঠে এসেছে। আর হিন্দুদের উপর হওয়া এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছিলেন ইসকনের আলোচিত সংগঠক তথা বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। এমনকি রাজপথে নেমে প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন তিনি।
এবার সেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি পোস্ট। যেখানে মোট তিনটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে। ছবিগুলিতে একটি গাড়ির ভিতরে গেরুয়া পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তিকে একজন মহিলাকে অশালীনভাবে স্পর্শ করতে দেখা যাচ্ছে।
ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী গাড়ির ভিতরে একজন মহিলাকে শ্লীলতাহানি করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ছবিগুলি শেয়ার করে লিখেছেন, “প্রভু পাদ চিন্ময়ের গাড়ির চিপায় নারী পাদ।” (সব বানান অপরিবর্তিত।)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ছবিগুলির সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বা বাংলাদেশের কোন হিন্দু ধর্মগুরুর সম্পর্ক নেই। ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি রাজস্থানের কেশত্রপাল মন্দিরের পুরোহিত বাবা বালকনাথ। তার বিরুদ্ধে গত অক্টোবর মাসে একটি গাড়ির ভিতরে এক কলেজ ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করা হয়।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী হলেন বাংলাদেশে হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্ম প্রচারক ও ধর্মগুরু। পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে হওয়া অত্যাচারের প্রধান প্রতিবাদী মুখও তিনি। তাই তিনি যদি কোন মহিলার শ্লীলতাহানি বা যৌন হেনস্থা করে থাকেন তাহলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই বাংলাদেশ তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রথম শ্রেণির বাংলা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন বা তথ্য পাওয়া যায়নি যা থেকে এই দাবির সত্যতা প্রমাণ হয়।
আরও পড়ুন লাভ জিহাদের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজের মেয়েকেই বিয়ে? ভাইরাল ভিডিওর সত্যিটা জানুন
তাই এরপর ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে ছবিগুলি নিয়ে গুগুলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে চলতি বছরের ২০ অক্টোবর একটি এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও পাওয়া যায়। সেই ভিডিওটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে এটি দেখা যায় যে তার ফ্রেমের সঙ্গে ভাইরাল ছবিগুলির হুবহু মিল রয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজস্থানের সিকার জেলায় গাড়ির ভিতরে একটি মেয়েকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে বাবা বালকনাথের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত করেছে পুলিশ।
राजस्थान : सीकर जिले में कार में रोमांस कर रहे बाबा बालकनाथ पर पुलिस ने रेप की FIR दर्ज की।
— Satyapal Arora 💯% FB (@JanAwaaz3) October 20, 2024
पीड़िता का आरोप है कि बाबा ने तंत्र-मंत्र के सहारे परेशानियां दूर करने का भरोसा दिया और इज्जत लूटता रहा।
ये भाजपा को सनातन के नाम पर वोट भी दिला रहा था pic.twitter.com/oaWl7OSWhj
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী সার্চ করলে ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর ভাইরাল ছবিগুলি-সহ The Free Press Journal-এ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি গাড়ির মধ্যে এক তরুণীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে রাজস্থানের সিকার জেলায় কেশত্রপাল মন্দিরের পুরোহিত বাবা বালকনাথের বিরুদ্ধে। নির্যাতিতা ওই কলেজ ছাত্রীর অভিযোগ, বালকনাথ তন্ত্র বিদ্যার মাধ্যমে তার সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার দাবি করে প্রসাদ খেতে দেয়। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই তরুণী অচৈতন্য হয়ে পড়েন। তার পর তাকে গাড়ির মধ্যে একাধিকবার ধর্ষণ করেন বালকনাথ। নির্যাতিতার বয়ানের উপরে ভিত্তি করে সিকারের উদ্যোগ নগর থানায় বালকনাথের বিরুদ্ধে একটি এফএইআর দায়ের করেছে পুলিশ।
এখানে উল্লেখ্য, কিওয়ার্ড সার্চের সময় ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ইসকনের গুরুত্বপূর্ণ মুখ চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলায় চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারী-সহ আরও ১৯ হিন্দু সংগঠনের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘির মাঠে আয়োজিত হিন্দু সংগঠনের সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করার অভিযোগে এই মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু সেই প্রতিবেদনের কোথাও চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে কোনও মহিলাকে যৌন হেনস্থা করার কথা উল্লেখ করা হয়নি। নিচে বাবা বালকনাথের ছবির সঙ্গে চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীর একটি ছবি তুলনা দেখা যাবে।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজস্থানের কেশত্রপাল মন্দিরের পুরোহিত বাবা বালকনাথের ছবি শেয়ার করে বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মগুরু চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে মিথ্যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
[এই ছবিটির সত্যতা যাচাই করেছে bangla.aajtak.in, যা অনলাইনে ভুল তথ্য এবং ডিপফেক ভিডিও শনাক্তকরণে Shakti collective-এর অংশ]