Advertisment

ডেপুটি স্পিকারের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল, স্কুলের মাঠে মেলার অনুমতি দিল স্থানীয় তৃণমূল নেতা

শাসকের দুই গোষ্ঠীর লড়াই প্রকট, বাদ যাচ্ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
in Rampurhat local tmc leader disobeyed Deputy Speakers order and allowed a fair to be held in the school grounds

স্কুলের মাঠে মেলার প্রস্তুতি চলছে। ছবি- আশিস মণ্ডল

ডেপুটি স্পিকারের নির্দেশকে ফুৎকারে উড়িয়ে স্কুলের খেলার মাঠে মেলা বসানোর অনুমতি দিলেন শাসক তৃণমূলেরই এক নেতা। প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপি। এই ঘটনায় অস্বস্তিতে রামপুরহাটের বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisment

বীরভূমের রামপুরহাট পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর আব্বাস হোসেনের দাদা আরশাদ হোসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা হিসাবেই পরিচিত। তিনি একাধারে রামপুরহাট পুরসভার ক্লার্ক পদে কর্মরত, অন্যদিকে সরকার মনোনীত রামপুরহাট হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি। তাঁর স্ত্রী রেজিনা সুলতানাও ওই স্কুলেরই পরিচালন সমিতির সদস্য। ফলের স্কুলের হর্তাকর্তা সব আরশাদ হোসেনই।

২০২০ সালের জুন মাসে আরশাদ হোসেনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে স্কুলের জায়গা বাণিজ্যিক হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টার গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় শাসক বাদে সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং স্কুলের প্রাক্তনীরা সরব হয়ে রাস্তায় নেমেছিল। চাপে পরে প্রাক্তনীদের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন রামপুরহাট বিধায়ক তথা তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী এবং স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরিস্কার জানিয়েছিলেন খেলার মাঠে বাণিজ্যিক কোনও কিছু করা যাবে না। আশিসবাবুর চাপে পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ শ্বেতপত্রের নামে একটি হ্যান্ডবিল প্রকাশ করে।

কিন্তু সেই নির্দেশকে উপেক্ষা করে ফের স্কুলের মাঠ ধ্বংস করে মেলা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে আরশাদ হোসেন নিজের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে মেলা করার অনুমতি দিয়েছেন। প্রতিবাদে ফের সরব বিজেপি, স্কুলের প্রাক্তনীরা।

বুধবার খেলার মাঠে মেলা করার প্রতিবাদে রামপুরহাট মহকুমা শাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় বিজেপির রামপুরহাট শহর কমিটি। সঙ্গে ছিলেন দলের মহিলা মোর্চার বীরভূম সাংগঠনিক সভাপতি রশ্মি দে, দলের জেলা সহ সভাপতি স্বরূপ রতন সিনহা। একই কপি জমা দেওয়া হয়েছে রামপুরহাট থানা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। দলের রামপুরহাট মণ্ডল সভাপতি সুরজিৎ সরকার বলেন, “আমরা আগেও খেলার মাঠে মেলার প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকা স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি আরশাদ হোসেন গায়ের জোরে মেলা বসাচ্ছে। এমনকি তাদের দলের বিধায়ক তথা ডেপুটি স্পিকারের নির্দেশকেও অমান্য করেছেন আরশাদ হোসেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আশিসবাবুর মদতেই এই মেলা বসছে।”

এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন প্রাক্তনীরা। প্রাক্তন ছাত্র অমিতাভ হালদার বলেন, "আমরা খেলার মাঠকে উন্নত করার দাবি জানিয়েছিলাম। আমাদের দাবি মেনে নিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকার। সেই মতো তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুল পরিচালন সমিতি সেই নির্দেশ অমান্য করে খেলার মাঠ ধ্বংস করে মেলা বসাচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।"

পরিচালন সমিতির সভাপতির গাজোয়ারিতে ক্ষুব্ধ স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশও। তাঁদের দাবি, আরশাদ হোসেন যতদিন সভাপতি পদে রয়েছেন সেই সময়কালের স্কুলের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। তাঁরাই প্রশ্ন তুলেছেন স্কুলের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য মেলা বসাতে হলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেই কেন বারবার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে? এর আগে বেশ কয়েকটি সংস্থা আবেদন করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি।

এবিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলম বলেন, “আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। মেলার অনুমতি আগের পরিচালন সমিতি দিয়েছেন। ফলে এখানে আমার পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কোন জায়গা নেই। তবে বিজেপি স্মারকলিপি দিয়েছে। এবিষয়ে সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করব।”

স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি আরশাদ হোসেন বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষ সাত বছরের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা জমা নিয়েছে। সেই কারনেই মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”

সংবাদমাধ্যমকে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমার নির্দেশেই ওই মাঠে মেলা বন্ধ করা হয়েছিল। আমি মহকুমা শাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গেও কথা বলেছি। জানিয়ে দিয়েছি স্কুল মাঠে মেলা করা যাবে না। অন্য কোন মাঠে মেলা করা হোক।"

রামপুরহাট মহকুমা শাসক আব্বাস নাকভির কথায়, “মেলার অনুমতি দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফলে এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে সে সময় পরীক্ষা চললে আমরা স্কুলের কাছে মেলা নিয়ে আপত্তি জানাব।”

tmc Birbhum Rampurhat
Advertisment