স্কুলে আরও বাড়ানো হয়েছে গরমের ছুটি। আপাতত ২৬ জুন পর্যন্ত রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে থাকবে গরমের ছুটি। গরমে বাচ্চাদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত। দার্জিলিং ও কালিম্পং ছাড়া রাজ্যের সব জেলার জন্যই গরমের ছুটি বাড়ানোর এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে সরকারি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চিকিৎসকদের।
১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি দেওয়া হয়েছিল। সোমবার ফের ছুটির সেই সময়সীমা ১১ দিন বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২৬ জুন পর্যন্ত গরমের ছুটি থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা দফতর। গরমে শিশুদের সুরক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে সরকার। বেসরকারি স্কুলগুলিও যাতে ছুটি বাড়ানোর পথে হাঁটে সেব্যাপারেও আবেদন জানিয়েছে সরকার।
এমনিতেই করোনার জেরে একটানা প্রায় দু'বছর ধরে বন্ধ ছিল রাজ্যের স্কুল, কলেজ-সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার জেরে মাসের পর মাস ধরে শিকেয় উঠেছিল লেখাপড়া। বিশেষ করে গরিব পরিবারের বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে দারুণ সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল।
এবার গরমের ছুটিও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখন ফের এক দফায় বাচ্চাদের শারীরিক পরিস্থিতির 'দোহাই' দিয়ে গরমের ছুটি বাড়ানো আদতে কতটা সঙ্গত তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
বিশিষ্ট চিকিৎসক পূর্ণব্রত গুন বলেন, ''এটা সঙ্গত বলে মনে করি না। গরম এখন কমার দিকে। সেই গরম এখন আর নেই। গরমের জন্য যদি স্কুল দিনের পর দিন বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে তো পড়াশোনাই হবে না। এটাকে আমরা সমর্থন করছি না। বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি তো হবেই, ওদের মানসিক দিকটিরও ক্ষতি হবে। স্কুলে যা হয় সেটা তো বাড়িতে সম্ভব নয়। গরমের ছুটি বাড়ানোর মানেই নেই।''
আরও পড়ুন- বঙ্গে আরও বাড়ল গরমের ছুটি, কবে থেকে খুলছে স্কুল?
অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক বিশিষ্ট চিকিৎসক বলেন, ''এখন তো বর্ষা এসে যাচ্ছে। একটানা ছুটি বাড়ানোর বদলে পরিস্থিতি অনুযায়ী দফায়-দফায় ছুটি দিলে ভালো হতো। সরকার যা ভালো বুঝেছে করেছে।''
স্কুলে ছুটি বাড়ানো প্রসঙ্গে কী বলছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা? গড়িয়ার হরিমতী গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত বলেন, ''বাচ্চাদের পড়াশোনার অন্য কোনও মাধ্যম নির্বাচন করা উচিত। ওদের অত্যন্ত অসুবিধা হচ্ছে। গরমের কারণে ১১ দিন ছুটি বেড়েছে। এদিকে স্কুল খুললেই ওদের ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষা। পড়াশোনার ক্ষেত্রে একটু চাপ হয়ে যাচ্ছে। একমাস কোনও পড়াশোনা হয়নি। এবার যাতে অনলাইনে পড়াশোনা চলে সেটা দেখতে হবে।''
আরও পড়ুন- বিক্ষোভের নামে তাণ্ডবে তপ্ত বেথুয়াডহরিও, ব্যবসা বনধের ডাক
এদিকে, উত্তরবঙ্গে পুরোদস্তুর বর্ষা ঢুকলেও এখনও দক্ষিণবঙ্গে অধরা ঝেঁপে বৃষ্টি। এর উপর ভ্যাপসা গরমে জেরবার হচ্ছেন দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দারা। রবিবার পানিহাটির দই-চিঁড়ের মেলায় প্রবল গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। ভ্যাপসা গরমে টেলাঠেলিতে অসুস্থও হয়েছেন অনেকে। গোটা দক্ষিণবঙ্গেই অস্বস্তিকর গরমে জেরবার পরিস্থিতি। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই স্কুলে ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকারের।