পঞ্চায়েত নির্বাচনে এবার মনোনয়নপত্র দাখিল করার জন্য বরাদ্দ ছিল এক-টানা মোট ২৪ ঘন্টা। গত শুক্রবার থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া শুরু হয়েছে, বৃহস্পতিবার ছিল শেষ দিন। শেষমেশ দেখা গেল গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক আসনে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথম চার দিন জোরদার প্রচার চলতে থাকে তৃণমূলের থেকে বিরোধীরা বেশি মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে। কেন পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস? শেষ দুদিন তৃণমূলের লঙজাম্পে রীতিমতো প্রশ্নও উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
শনিবার পর্যন্ত তৃণমূল, কংগ্রেস-বিজেপি ও সিপিএমের থেকে মনোনয়ন জমায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। গ্রামপঞ্চায়েতের আসনে বিজেপি ৩,৩২০, সিপিএম ২,৫২৭টি এবং তৃণমূলের ৫১৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন শনিবার পর্যন্ত। পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল আরও পিছিয়ে ছিল। এমনই পরিস্থিতি ছিল গত মঙ্গলবার পর্যন্ত। এই পরিসংখ্যান দেখিয়েই মনোনয়নে বিরোধীরা এগিয়ে বলে চিৎকার জুড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। মনোনয়নে যে কোনও বাধা দেওয়া হচ্ছে না সেই তত্ত্বই খাড়া করেছিল ঘাসফুল শিবির। বরং তারা পিছিয়ে বলে দাবি করে আসছিল। রাজনৈতিক মহলের মতে, তা যে নেহাতই রণকৌশল ছিল তা একেবারেই স্পষ্ট।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে এরাজ্যে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হয় এই অভিযোগ জোরালো হয়েছিল ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গত দুবছর ধরে দাবি করে আসছেন পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রথমত, মনোনয়ন জমার শুরুতে এই তত্বের শীলমোহর দেওয়ার চেষ্টা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, দলের টিকিট না পেয়ে প্রথমেই যাতে বিদ্রোহীদের বিরোধী শিবিরে হাজিরার সংখ্যা না বেড়ে যায়। তৃতীয়ত, গোঁজ প্রার্থীর সংখ্যা রোধ করাও তৃণমূলের মনোনয়ন কৌশলের অন্য়তম লক্ষ্য ছিল বলে মনে করে অভিজ্ঞমহল।
আরও পড়ুন- পরিচারিকা হয়েও পঞ্চায়েত প্রধান, প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন মমতা, সেই ঝর্ণাও কেন তৃণমূল ছাড়লেন?
রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে মোট ৭৩,৮৮৭টি আসনে শেষমেষ তৃণমূল কংগ্রেস মনোনয়ন জমা দিয়েছে ৮৫,৮১৭টি। যে দল ১০হাজার আসনে প্রার্থী দেয়নি মঙ্গলবার পর্যন্ত, বৃহস্পতিবারের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর দেখা গেল তৃণমূল কংগ্রেস বাড়তি ১১,৯৩০টি মনোনয়ন জমা দিয়েছে। দুদিনে প্রায় ৭৪ হাজার মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে বিজেপি মোট প্রার্থী দিয়েছে ৪৮,৩৮১, সিপিএম ও কংগ্রেসের জমা মনোনয়নের সংখ্যা যথাক্রমে ৪০,৪২৯ এবং ১৪,২০৫টি।
শেষবেলায় গিয়ে দেখা যাচ্ছে কয়েক হাজার আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাছাড়া বিরোধীদের থেকে হাজার হাজার প্রার্থী বেশি দিয়েছে তৃণমূল। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, বিরোধীরা প্রার্থী পায়নি। কিন্তু প্রথম চার দিন বিরোধীদের থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় পিছিয়ে থেকে এক ঢিলে তিন পাখি মারল তৃণমূল কংগ্রেস।