তাঁর নাকের নীচ দিয়ে কখনও কিছু বেরিয়ে যেতে পারে? তিনি একসময় ইন্ডাস্ট্রির প্রিয় ব্যোমকেশ ছিলেন তারপর হলেন সোনাদা, আর এখন? তিনি হারিয়ে যাওয়া মানুষটাকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এই প্রথম দীপক চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায় তাঁকে দেখা যাবে। স্বপন কুমারের চিত্রিত এই গোয়েন্দা চরিত্র হারিয়েছে বহু বছর আগে। তাকে ফেরানো প্রসঙ্গেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথোপকথনে স্বপনকুমারের পর্দার 'দীপক' আবির চট্টোপাধ্যায়।
শহরে বাদামী হায়নাদের প্রভাব বাড়ছে। আর সেই সমস্যার সমাধান করতেই আসছেন দীপক বাবু। অত্যন্ত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি জানালেন কীভাবে রহস্য এবং রোমাঞ্চের পাশাপাশি এই শহরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। কলকাতার অলিগলিতে যদি রহস্যের গন্ধ পান, আবির কী করবেন? বাদামী হায়নার কবলে রিলিজের আগেই জানালেন সেসব কথা।
দীপক চট্টোপাধ্যায় করতে গিয়ে আবির চট্টোপাধ্যায়কে কতটা বদলাতে হল কিংবা ভাঙতে হল?
বদলাতে হয়েছে। প্রতিটা চরিত্রের জন্য একজন অভিনেতাকে বদলাতে হয়। আর আমাকেও হয়েছে। অভিনয় করতে গিয়ে পরিচালক কীভাবে একটা চরিত্রকে বোঝাতে চেয়েছেন সেটা ভাবার চেষ্টা করেছি। আর একটা হচ্ছে, দীপক কেন এত বিরক্ত? একজন ওরকম জনপ্রিয় মানুষ তিনি যখন হারিয়ে যায়, কেন যায়? সেই মানুষটা হারিয়ে গেলে তাঁর কেমন লাগতে পারে! সবার একটা গল্প থাকে। আবার তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি।
যেহেতু রহস্য রোমাঞ্চ, গোয়েন্দা তোমার সাকসেসফুল একটা জনার, সেইজন্যই কি আলাদা কিছু করতে ইচ্ছে হয়েছিল?
আমার আলাদা করার ইচ্ছের থেকেও আমি এটা দেখি যে প্রযোজকরা আমায় কী সাজেস্ট করছেন। আর গোয়েন্দা গল্পের অর্থ কিছু তো রহস্য রোমাঞ্চ থাকবেই। এটাতেও আছে। হ্যা, উপস্থাপনা হয়তো বা একটু আলাদা। এবার কতটা আলাদা সেটা দর্শক বলতে পারবেন।
ব্যোমকেশ না দীপক সাহেব, কাকে এগিয়ে রাখবে?
দুজনের তুলনা করা যায় বলে, আমার মনে হয় না। আগে তো এটা দেখতে হবে যে দুজনে কতটা এক এবং কতটা আলাদা। তারপর তো এগিয়ে পিছিয়ে থাকার বিষয় এবং গল্প।
আবির চট্টোপাধ্যায়কে যদি জিজ্ঞেস করা হয় একটা রহস্য উন্মোচন করতে, সে কতদূর যেতে পারে সত্যের সন্ধানে?
মোটামুটি আমার চারপাশে যা ঘটে চলেছে, যা বয়স-অভিজ্ঞতা বলছে, সেটা যদি পর্যবেক্ষণ করি তাহলে বুঝতে হবে যে আমি কেন, কারওর পক্ষেই গোটা রহস্য উন্মোচন করা হয়তো বা সম্ভব না। আর তাঁর থেকেও বড় কথা, আমার সেই যোগ্যতা আছে কিনা। আমার উৎসাহ হয়তো আছে, কৌতূহল আছে। কিন্তু আমার নিজের ওপর যথেষ্ট সন্দেহ আছে যে রহস্য উন্মোচন করতে পারব কিনা।
বাঙালি কি গোয়েন্দার ক্ষেত্রে অত্যধিক ফেলুদা আর ব্যোমকেশ ওরিয়েন্টেড?
হ্যাঁ, অবশ্যই... এই নিয়ে তো কোনও সন্দেহ নেই।
শহর কলকাতার অলিগলিতে যদি নানা রহস্যের খোঁজ পাও? নিজেকে দীপক হিসেবে দেখবে নাকি অন্য কোনও গোয়েন্দা চরিত্রে?
এই রে! ( হাসি ).. না না! আমার এই শহরের অলিগলিতে রহস্য নিয়ে কোনও ইচ্ছে নেই। আসলে, বলতে পারো কোনও অভিপ্রায় নেই। আমি মানুষটা খুব সরল। এই শহরে বড় হয়েছি। অনেক ভাল স্মৃতি রয়েছে। সেইগুলো নিয়েই আমি আজীবন ভাল থাকতে চাই।
'খাজা সংলাপ আমি বলব না..', ছবির ডায়লগ অনুযায়ী প্রশ্ন করলে, আবিরের কোনোদিন এমন মনে হয়েছে এই সংলাপটা খাজা হয়ে গেল?
সৌভাগ্যক্রমে, আমার সঙ্গে এমন কোনোদিন কিছু হয়নি। এটা আমার একটা বিরাট পাওনা পরিচালকদের থেকে। কারণ, তারা বেশিরভাগ অধিকাংশই আমার সঙ্গে একযোগে কাজ করেছেন। যদি, কোনওদিন কোনও সাজেশন দিয়ে থাকি নিজের চরিত্রের ব্যাপারে তারা আমায় উৎসাহ দিয়েছেন। সুতরাং আজ অবধি এমন হয়নি যে এই সংলাপটা খুব খাজা হয়ে গেল, বা আমায় সেটা বলতে হল।
মানুষ কি গল্প পড়তে গেলে সত্যিই লজিক খোঁজে না? কী মনে হয়?
আমার মনে হয় বাঙালি সত্যিই লজিক খুঁজতে চায়। কারণ, আমরা নিজেদের খুব বুদ্ধিদীপ্ত মনে করি। কিন্তু আমরা সত্যিই কি লজিক খুঁজে পাই? আমার তো এই নিয়ে সন্দেহ আছে। এই উত্তরটা তারা নিজেরাই দিক।
আবিরকে যদি একটি গোয়েন্দা চরিত্র সৃষ্টি করতে বলা হয়, তাঁর আউটলুক কেমন হতে পারে?
আমি কোনও লেখক না.. ( হাসি )। তো, কাজেই আমার পক্ষে কোনো নতুন চরিত্র সৃষ্টি করা খুব চাপের। তাই, আমি এই কাজটা লেখকদের ওপরেই রাখলাম। তারা যেভাবে তৈরি করবেন। সেরকমভাবে আমার কাছে একটা চরিত্র এলে, কেবল স্ক্রিপ্ট দেখে আমি সেটাকে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করব।
সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে অত্যধিক ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে ট্র্যাজিক হয়?
হুম... ছবিটা রিলিজ করুক! দেখা যাক... ম্যাজিক হয় না ট্র্যাজিক হয়.. আমিও সেই অপেক্ষায় রয়েছি।