Ke Apon Ke Por actors profile blocked: বিশ্বজিৎ ঘোষ, পল্লবী শর্মা, সিমরান উপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল মল্লিক, লিজা সরকার-সহ 'কে আপন কে পর' ধারাবাহিকের অধিকাংশ প্রধান চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা রীতিমতো আক্রান্ত হয়েছেন সোশাল মিডিয়ায়। ফেসবুকে এঁদের ব্যক্তিগত প্রোফাইলগুলি আচমকা ব্লক হতে থাকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে। শেষমেশ সাইবার সেলের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা জানালেন ঠিক কী ঘটেছে বিগত প্রায় একমাস ধরে।
''পল্লবী শর্মা, আমাদের ধারাবাহিকের নায়িকার একটি ফেক প্রোফাইল ছিল ফেসবুকে এবং সবাই ভাবত ওটাই আসল প্রোফাইল কারণ ওখানে ৬৫ হাজার ফলোয়ার ছিল। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই না জেনে ওই প্রোফাইলকে অ্যাড করেছিলেন'', জানালেন ওই ধারাবাহিকের অভিনেত্রী পায়েল দেব, ''পল্লবীর একটি প্রোফাইল ছিল ফেসবুকে কিন্তু ও সেভাবে অ্যাক্টিভ থাকত না। আর ওরকম ফেক প্রোফাইল অনেক আছে ফেসবুকে তাই ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি। ওই প্রোফাইলটি থেকে যখন বিভিন্ন লোককে পার্সোনাল মেসেজ করা শুরু হয়, তখন খুব সিরিয়াস হয়ে যায় বিষয়টা। যাতে পল্লবীর সম্পর্কে সকলের ভুল ধারণা না হয়, তাই আমাদের কো-অ্যাক্টর তিতলি আইচের প্রোফাইল থেকে লাইভে এসে পল্লবী সবাইকে গোটা ঘটনাটি খুলে বলে।''
আরও পড়ুন: ''একটুও আতঙ্কিত নই, আমি অত্যন্ত বিরক্ত'', ফেসবুকের ঘটনা নিয়ে আর কী বললেন 'কে আপন কে পর' নায়ক
পল্লবীর ওই লাইভের পর থেকেই শুরু হয় সমস্যা। প্রথমত পল্লবীর ফেক প্রোফাইলটি থেকে এমন কথা বলা হয় যে অভিনেত্রীকে নাকি টিমের সবাই জোর করে লাইভ করতে বাধ্য করেন। তার পরে আসল ঘটনা শুরু। অন্য একটি প্রোফাইল থেকে 'কে আপন কে পর' টিমের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রোফাইলগুলি রিপোর্ট ব্লক করা শুরু হয়। পায়েল জানালেন যে বা যারা ব্লক করত, তারা ব্লক করা প্রোফাইলের স্ক্রিনশট দিয়ে একটি করে স্টেটাস দিত, 'ওয়ান উইকেট ডাউন', 'টু উইকেট ডাউন' ইত্যাদি লিখে। নীচে রইল তেমন একটি নমুনা।
'কে আপন কে পর' অভিনেতা ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ''জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে এই ব্লক করা শুরু হয়। সবার প্রথমে ব্লক করা হয় পল্লবী শর্মার ফেক প্রোফাইলটি। এই ফেক প্রোফাইলটিই বা কেন ব্লক করা হয় জানা নেই। কারণ আমাদের ধারণা ছিল ওই প্রোফাইলটি থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। তার পরে ব্লক হয় লিজা সরকারের প্রোফাইল। তার পরে একে একে ব্লক হতে থাকে তিতলি আইচ, বিশ্বজিৎ ঘোষ ও আমার প্রোফাইল। কয়েকজনের প্রোফাইল ব্লক করতে পারেনি যেমন পায়েল দেব কারণ পায়েল সেই সময় প্রোফাইল ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেয়।''
খুব পরিকল্পনা করেই ব্লক করা হতো প্রোফাইলগুলি। ইন্দ্রনীল জানালেন, ''প্রথমে যে প্রোফাইলটি ব্লক করতে হবে, তার একটি ফেক প্রোফাইল খোলা হতো একই প্রোফাইল পিকচার ও কভার ফোটো দিয়ে। তার পরে আসল প্রোফাইলটি ব্লক করা হতো।'' গোটা বিষয়টি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে কিছুদিন আগে লালবাজারের সাইবার সেলের দ্বারস্থ হন 'কে আপন কে পর'-এর মুখ্য চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রী, বিশ্বজিৎ ঘোষ ও পল্লবী শর্মা। এছাড়া অভিনেত্রী লিজা সরকারও টিটাগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: একলাফে ৯০ পয়েন্ট বাড়ল চ্যানেল রেটিং! সেরা তিনে ‘কৃষ্ণকলি’, ‘ত্রিনয়নী’, ‘নকশিকাঁথা’
''অ্যাকাউন্ট ব্লক করার পরে অভিযুক্ত প্রোফাইলটি থেকে মেসেজ আসত যে, আমাকে টেক্সট করো, তাহলে রিভাইভ করে দেব'', বলেন ইন্দ্রনীল, ''যাঁদের প্রোফাইল ব্লক হয়েছে তাঁদের মধ্যে অনেকেই ফেসবুকে নিজের আইডি প্রুফ দিয়ে রিভাইভ করতে পেরেছে নিজের প্রোফাইল। আমার নিজের প্রোফাইলও রিভাইভ করতে পেরেছি কিন্তু তিতলি আইচ ও লিজা সরকারের প্রোফাইল এখনও রিভাইভ করা যায়নি।''
এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী লিজা সরকার জানালেন, ''আমি ৩০ জুলাই টিটাগড় থানায় এফআইআর করেছি। আমি আসলে কমপ্লেন করেছিলাম যাতে এর পিছনে যে বা যারা আছে তারা যেন ধরা পড়ে। আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা আইডি দিয়েও রিকভার করা যাচ্ছে না কারণ আমার ভাল নাম সম্প্রীতা, ডাক নাম লিজা। আর লিজা নামেই ছিল ওই প্রোফাইল। তাই আইডি মিলবে না। কিন্তু যে এই কাজগুলো করছিল, সে এখনও অ্যাক্টিভ। এতদিন সিমরানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা ঠিক ছিল। গত শুক্রবার ওর অ্যাকাউন্টও ব্লক হয়ে গেছে।''
আরও পড়ুন: বাড়ির কাজের মেয়ের ‘বউ’ হয়ে ওঠার গল্পই এখন দর্শকের অভ্যাস
কিন্তু এমন একটি অদ্ভুত আচরণ কেন করছে এক বা একাধিক ব্যক্তি সেটাই প্রশ্ন এখন 'কে আপন কে পর' টিমের কাছে এবং টেলিজগতেও। কারণ এই গোটা বিষয়টি জানেন অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরাও। ইন্দ্রনীল বলেন, ''ব্যক্তিগত রাগ না অন্য কোনও কারণ সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। কিন্তু ব্যক্তিগত রাগ থাকলে একে একে সবার প্রোফাইল কেন ব্লক হবে? হয়তো কোনও অ্যাটেনশন সিকার অথবা কোনও সাইকোপ্যাথও থাকতে পারে এর পিছনে। পুলিশ তো তদন্ত করছে। নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়িই আমরা জানতে পারব কী ব্যাপার।''
পায়েল, ইন্দ্রনীল ও লিজা জানালেন সাইবার সেলের পক্ষ থেকে বার বারই এই বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, নানা তথ্যের জন্য। ওদিকে অভিযোগ জানানোর পরেও সম্ভবত সতর্ক হয়নি অপরাধী। সোমবার আবারও অজ্ঞাতপরিচয় কেউ ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের ফেসবুক পাসওয়ার্ডটি বদলানোর চেষ্টা করে। তৎক্ষণাৎ মোবাইলে পাসওয়ার্ড রিসেটের নোটিফিকেশন আসায় সতর্ক হয়ে যান অভিনেতা।
টিম 'কে আপন কে পর' এখন শুধু অপরাধী বা অপরাধীদের ধরা পড়ার অপেক্ষায়।