এ বছর বাংলা ওয়েব মাধ্যমের তিনটি প্রধান প্ল্যাটফর্মে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিরিজ এসেছে। ওয়েব ছবিও এসেছে কয়েকটি। তার মধ্যে রয়েছে জিফাইভ-এর ফুড অ্যান্থোলজি, হইচই অরিজিনালস ওয়েব ফিল্ম এবং কয়েকটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি যা পরে মুক্তি পেয়েছে ওয়েবে। হইচই, জিফাইভ ও আড্ডাটাইমস মিলিয়ে পাঁচটি ওয়েবসিরিজকে বাংলা ওয়েব মাধ্যমে বছরসেরা বলা যায়। আর দুটি ওয়েব ছবি বাকি সব ছবিগুলিকে উৎকর্ষতায় পিছনে ফেলেছে।
প্রথমে দেখে নেওয়া যাক এবছরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিরিজ কোনগুলি ছিল। এই তালিকায় থাকবে আড্ডাটাইমস-এর 'সেনাপতি' এবং 'সুফিয়ানা দ্বিতীয় সিজন'। হইচই-এর উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে রয়েছে-- 'চরিত্রহীন সিজন ২', 'জাপানি ডল', 'একেনবাবু ও ঢাকা রহস্য', 'মানভঞ্জন', 'আস্তে লেডিস', 'ব্যোমকেশ সিজন ৪', 'দুপুর ঠাকুরপো সিজন ৩', 'অডভুতুড়ে', 'মন্টু পাইলট' ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে জিফাইভ-এর উল্লেখযোগ্য সিরিজ 'কৃশানু কৃশানু' ও 'ভালবাসার শহর'।
বিষয়বস্তু, মেকিং ও অভিনয় যদি বিচার করা যায়, তবে সেরা পাঁচে থাকবে এই সিরিজগুলি--
সুফিয়ানা সিজন ২
আড্ডাটাইমস-এর 'সুফিয়ানা' এখনও পর্যন্ত বাংলা ওয়েব মাধ্যমের সেরা কাজগুলির মধ্যে একটি। ওই সিরিজের বহু প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় সিজনটি মুক্তি পেয়েছিল এবছর। প্রথম সিজনে আমরা দেখেছিলাম বয়ঃসন্ধির সুফি। এই সিজনে সুফির যৌবনকাল, যে সময়টা অশান্ত সত্তর। নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেই নির্মিত হয়েছে 'সুফিয়ানা সিজন ২'। তরুণী গায়িকা সুফির ভূমিকায় শাঁওলী চট্টোপাধ্যায়। এই সিরিজের মেকিং যেমন ভাল, তেমনই তিন প্রধান চরিত্রের অভিনয় অনবদ্য।
কৃশানু কৃশানু
জিফাইভ-এর এই সিরিজের শ্যুটিং পর্যায় থেকেই বাঙালি দর্শকের মধ্যে প্রবল উদ্দীপনা ছিল। এই সিরিজটি স্ট্রিমিং হওয়ার আগে অনেকেই ভেবেছিলেন এটি ভারতীয় ফুটবলের মারাদোনা কৃশানু দে-র বায়োপিক। কিন্তু এই সিরিজটিকে ঠিক বায়োপিক না বলে কৃশানু দে, কলকাতা ময়দান এবং সামগ্রিক ভাবে ফুটবল নিয়ে বাঙালির যে আবেগ-- এই সবকিছুর প্রতি একটি ট্রিবিউট বলা যায়। সর্বোপরি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষ। অত্যন্ত ভাল মানের এই সিরিজে সেকালের ফুটবল ও একালের ফুটবল-- দুটি সময়ই এসেছে।
ব্যোমকেশ সিজন ৪
হইচই-এর এ ব্যোমকেশ সিরিজের চতুর্থ কিস্তি মুক্তি পেয়েছিল এবছর। যদিও মাত্র দুটি এপিসোড কিন্তু সিরিজ তো বটে। অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও সুব্রত দত্তের যুগলবন্দি দর্শকের অত্যন্ত প্রিয়। চতুর্থ সিরিজের মেকিংও ভাল।
একেনবাবু ও ঢাকা রহস্য
বাংলা ওয়েবে এই নব্য গোয়েন্দাটি যে অত্যন্ত জনপ্রিয় তার ৫০ শতাংশ ক্রেডিট অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তীর। বাকি পঞ্চাশ শতাংশে থাকবেন চিত্রনাট্যকার-পরিচালক-চিত্রগ্রাহক ও অন্যান্য অভিনেতারা। হইচই অরিজিনাল সিরিজ একেনবাবু-র প্রথম দুটি সিজনের মেকিং খুব একটা চিত্তাকর্ষক ছিল না তবে চরিত্রটি জনপ্রিয় হয়েছিল নিঃসন্দেহে। এই বছর স্ট্রিমিং হয়েছে 'একেনবাবু ও ঢাকা রহস্য' সিরিজের এবং একেনবাবু-র এই তৃতীয় সিজনটি ফ্র্যাঞ্চাইজি-র সেরা।
অডভুতুড়ে
এই সিরিজটি অদ্ভুত একটি মানবিক সিরিজ যেখানে ভূত গৌণ, মানুষের গল্পই প্রধান। অন্য অনেক ভৌতিক সিরিজের মতো এখানে রগরগে ব্যাপারটা প্রায় নেই, বরং শিরশিরে অনুভূতি প্রবল। হইচই-এর এই সিরিজটি নিয়ে প্রচার খুব একটা বেশি হয়নি। কিন্তু অভিনয় খুবই ভাল এবং মেকিংও আকর্ষণীয়।
এবার চলে যাওয়া যাক ওয়েব ছবির প্রসঙ্গে। জিফাইভ-এর ফুড অ্যান্থোলজিতে তিনটি ছবি এসেছে এবছর। এছাড়া হইচই ও আড্ডাটাইমস মিলিয়ে বেশ কয়েকটি ছোট থেকে মাঝারি দৈর্ঘ্যের ছবি রয়েছে। তার মধ্যে সেরা এই দুটি--
৭ নম্বর সনাতন সান্যাল
জিফাইভ-এর এই ছবিটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকা নৈতিকতার কথা বলে। ছবির মেকিং তো ভাল বটেই, পাশাপাশি অভিনয়ও অনবদ্য। ছবিটি থ্রিলারধর্মী হলেও আসলে কিন্তু এই ছবি ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধের একটি আয়না। পাশাপাশি বহমানের মধ্যে স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলার একটি অসম্ভব ক্রোধ রয়েছে এই ছবিতে।
দ্য কেবিন গার্ড
সাধারণত এই ধরনের সিনেম্যাটিক ল্যাঙ্গোয়েজ কমই দেখা যায় বাংলা ছবিতে এবং বিশেষ করে ওয়েবে। এই ছবিটিও খুব বেশি প্রচার পায়নি। একটি প্রান্তিক মানুষের গল্প যে ক্রমশই অন্ধকারে বিলীন হতে থাকে। প্রধান চরিত্রে দেবপ্রসাদ হালদার, প্রীতম গঙ্গোপাধ্যায় অনবদ্য। পার্শ্বচরিত্রগুলিতেও প্রত্যেকেই অত্যন্ত ভাল। এ ছবি নির্মম এবং হয়তো কিছু দর্শকের কাছে অসহনীয়।