ছবি: সাঁঝবাতি
পরিচালক: লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল মুখোপাধ্যায়
অভিনয়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী, দেব, পাওলি
রেটিং: ৩/৫
সাধারণ চিত্রনাট্য, ততধিক সাধারণ লোকেশন কিন্তু কেবলমাত্র অভিনয়ের জোরে কোনও ছবি যে দর্শককে একক্ষণ পর্দায় দিকে মনোযোগী করে তুলতে পারে তার উদাহরণ লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল মুখোপাধ্যায়ের ছবি। নিজেদের প্রথম ছবিও সাবলীলভাবে গল্প বলার ছলে বলে গিয়েছিলেন তারা। 'সাঁঝবাতি'-ও তার ব্যতিক্রম নয়। বাঙালির খুব চেনা, বা বলা চলে কাছের বাস্তব এই ছবি।
পড়াশোনা বা কাজের সূত্রে বিদেশে রওনা দেয় ছেলে-মেয়েরা। এ শহরে পড়ে থাকে বৃদ্ধ বাবা-মা এবং তাদের আশা-আকাঙ্খা, না পাওয়া ভালবাসার আড়ালে একরাশ অবজ্ঞা। বার্ধক্য যেন শাস্তি রূপে নেমে আসে তাদের কাছে। সন্তানরা তাদের দেখভাল করতে চায় না, বরং বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে ভিটেমাটি টুকুও বেচে দিতে চায়। তারউপর যন্ত্রনা পাড়ার প্রোমোটার। এমনই এক চেনা গল্পে সৌমিত্র (ছানাদাদু) ও লিলি চক্রবর্তীর (সুলেখা) সঙ্গী দেব (চাঁদু) এবং পাওলি (ফুলি)। ছানাদাদুর ছেলে-মেয়ে চান তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে আর সুলেখা-র ছেলের বক্তব্য বাড়ি বিক্রি করতে দিতে হবে। এখানেই অসহায়ের সহায় চাঁদু-ফুলি। নির্ভেজাল, নিঃস্বার্থ ভালাবাসায় ছাকাভাঙা সম্পর্ক।
ছবিতে দেব-পাওলির চরিত্রের নাম চাঁদু ও ফুলি। ফোটো- দেবের ইনস্টাগ্রাম
আরও পড়ুন, প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো: চোখের সামনে সত্যি হল কাঙ্খিত কল্পদৃশ্য
চিত্রনাট্য মূলত দেব-পাওলিকে ঘিরেই এগিয়ে চলে। মাঝে ফ্ল্যাশব্যাকে আসেন দেবের প্রেমিকা সায়নী এবং লিলি-র প্রয়াত সন্তানের প্রেমিকা সোহিনী। সাদামাটা, বাঙালির ড্রয়িংরুমের চেনা প্লট। দর্শকের আবেগকে নাড়িয়ে দিতে পেরেছেন পরিচালকদ্বয়। প্রথমেই বলেছিলাম ঘটনার ঘনঘটা ছাড়া কোনও অতিশয্য নেই সিনেমা জুড়ে। তবে যা আছে তা হল অভিনয়। সৌমিত্র ও লিলি চক্রবর্তীকে নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। তবে চমকে দিয়েছেন দেব। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পাশে মার্জিত অভিনয় করে যাওয়াটা মুখের কথা নয়। পাওলিও তাঁর মতো করে ভাল।
আরও পড়ুন, কলকাতায় দুষ্কৃতিদের হাতে আক্রান্ত পরিচালক দেবলীনা মজুমদার
তবে সংলাপের ধরণ ছোটপর্দা-র মতো, অযাচিত আবেগময়। চিত্রনাট্যে যুক্তি খুঁজলে সবটা পরিষ্কার নাও হতে পারে। তবে শীর্ষ রায়ে সিনেমাটোগ্রাফি ভাল। দর্শকের ধর্য্যের জন্য বাহবা প্রাপ্ত ছবি সম্পাদনাও। কিন্তু একেবারেই মন ছুঁয়ে যায় না ছবির গান। বাঙালির প্রায় নিত্য হয়ে যাওয়া বাস্তব, কিছু কিছু জায়গায় বেমানান হলেও দর্শককে আনন্দ দেবে।