ভারতীয় সঙ্গীতজগতে এক যুগের অবসান। প্রয়াত 'নাইটেঙ্গেল' লতা মঙ্গেশকর। তবে, তিনি অবিনশ্বর। তাঁর কণ্ঠের যাদুতে অমর এই প্রবাদ প্রতীম শিল্পী। হিন্দিতে তাঁর কালজয়ী গান চিরকালীন। বাংলা সহ নানা আঞ্চলিক ভাষাতেও গেয়েছেন বহু একক গান। ডুয়েটে গেয়েছেন মহম্মদ রফি, কিশোর কুমার, মুকেশের সঙ্গেও।
লতা সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য…
১ শিল্প-সাংস্কৃতির পরিমণ্ডল ও পরিবারেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
লতা মঙ্গেশকরের বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর থিয়েটার গ্রুপের কর্ণধার। মারাঠি ভাষায় গানও গাইতে পারতেন। ফলে ছোট থেকেই শিল্প-সাংস্কৃতির পরিমণ্ডলেই বেড়ে ওঠা লতার। জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লতা ও তাঁর বোন আশার লক্ষ্য ছিল বাবার ব্যাটন ধরে রাখা। স্টারডাস্টকে দেওয়া এক পুরনো সাক্ষাৎকারে লতা বলেছিলেন, 'একবার বাবা তাঁর শিষ্যকে একটি রাগ অনুশীলনের নির্দেশ দেন। তাঁর অনুশীলনের কাছেই আমি অন্য গান সংক্রান্ত কাজই করছিলাম। শুনতে পাই রাগে গন্ডোগোল রয়েছে। আমি বাবার শিষ্যটিকে শুধরে দিয়েছিলাম। এরপর বাবা ফিরে এসে বুঝতে পারেন না তাঁর মেয়ের মধ্যেই এক শিষ্যত্ব গ্রহণের সব গুণ রয়েছে। সেই শুরু।'
২ লতার প্রথম গান চলচ্চিত্র থেকে বাতিল হয়েছিল।
'নাচু ইয়া গাদে-খেলু শারি মানি হাউস ভরি', ১৯৪২ সালে মারাঠি চলচ্চিত্রের জন্য এই গানটি গেয়েছিলেন লতা। এটাই তাঁর জীবণে গাওয়া প্রথম প্লেব্যাক। তবে দুর্ভাগ্যের যে ওই ছবি থেকে এই গানটি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
৩ লতা মঙ্গেশকর একবার গান রেকর্ড করার সময় অজ্ঞান হয়ে পড়েন
কম্পোজার নৌশাদের সঙ্গে গান রেকর্ডিয়ের সময় একবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন লতা। ফাস্টপোস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন, 'এক গ্রীষ্মের দুপুরে রেকর্ডিং চলছিল। সবাই জানে মুম্বইতে কেমন দরম পড়ে। তখন স্টুডিওতে বাতানুকূল যন্ত্র থাকতো না। পাখাও বন্ধ ছিল। খুব গরম করছিল, তারপরই আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।'
৪ লতা তাঁর নিজের গাওয়া গান শুনতেন না।
বলিউড হাঙ্গামার সঙ্গে কথা বলার সময় লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন যে, তাঁর নিজের গাওয়া তিনি শোনেন না, কারণ ওই গানের মধ্যে হাজারো খুঁত থাকে।
৫ লতা মঙ্গেশকরের প্রিয় সঙ্গীত পরিচালক মদমনোহন
মদনমোহনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা তাঁর আজাবীন মনে থাকবে বলে জানিয়েছিলেন লতা। ২০১১ সালে 'তেরে সুর অৌর মেরে গীত' নামক এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, 'অন্যান্যদের থেকে মদনমোহনজির সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। অনেকটা যেন নিজের ভাইবোনের মতো।'
৬ রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
১৯৯৯-এর ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন লথা মঙ্গেশকর। সংসদ তাঁর জন্য নয় বলে স্বীকার করেছিলেন প্রবাদপ্রতীম এই সঙ্গীতশিল্পী। সাংসদ পদ থেকে ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও অবশ্য তা গ্রাহ্য হয়নি। তবে, সাংসদ থাকাকালীন কোনও পারিশ্রমিকই নেননি লতা মঙ্গেশকর।
৭ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে লতা হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বজনীন।
দেশের মত বিদেশেও সমান সমাদৃত ছিল লতা মঙ্গেশকরের গান। লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে প্রথম যিনি গান গেয়েছেন। ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাদের দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কারে (অফিসার অফ দি লেজিয়ান অফ অনার) ভারতীয় এই সঙ্গীত শিল্পীকে সন্নানিত করেছিল।
৮ গিনেস বুখ অফ ওয়াল্ড রেকর্ডে নাম রয়েছে লতার।
গিনেস বুক অফ রেকর্ডসের ১৯৭৪ সালের সংস্করণ লতা মঙ্গেশকরকে সর্বাধিক রেকর্ড করা শিল্পী হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এরপরও বইটি থেকে লতার নাম সরানো হয়নি, তবে রফির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন মহম্মদ রফি। বইটি লতার নাম তালিকাভুক্ত করতে থাকে তবে রফির দাবির কথাও উল্লেখ করে। পরে লতার বোন আশাকে সর্বাধিক রেকর্ড করা শিল্পীর তকমা দেওয়া হয়। বর্তমানে, পুলাপাকা সুশীলা এই সম্মানের অধিকারী।
৯ লতা ওপি নায়ারের সঙ্গে কাজ করেননি।
বিখ্যাত সব সঙ্গীত ও চলচ্চিত্র পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করলেও লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে কাজ হয়নি ওপি নায়ারের।
১০ লতার শেষ রেকর্ডিং কবে?
লতা মঙ্গেশকর তাঁর শেষ গান 'সৌগন্ধ মুঝে ইস মিত্তি কি' রেকর্ড করেছিলেন, যেটি ময়ূরেশ পাই সুর করেছিলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং দেশের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ হিসেবে। চলচ্চিত্রটি ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ মুক্তি পায়।
Read in English
আরও পড়ুন- ‘রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে লতাদিদির ছবি দেখে রেকর্ডিংয়ে যেতাম…’, গলা বুজে এল রহমানের
আরও পড়ুন- ইশা আম্বানির বিয়েতে গায়ত্রী মন্ত্রোচ্চারণ করেন লতা, সেটাই তাঁর কার্যত শেষ রেকর্ডিং
আরও পড়ুন- Lata Mangeshkar Last Rites Live Updates: শেষযাত্রায় লতা মঙ্গেশকর, শেষকৃত্যে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী