ব্রিটেনে শিশুরা খুব জ্বর এনং স্ফীত ধমনীর কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, যা ডাক্তাররা আশঙ্কা করছেন করোনাভাইরাস সম্পর্কিত। সোমবার পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার সোসাইটি (PICS) বলেছে তারা দেখেছে, গত তিন সপ্তাহ সময়ে সব বয়সের শিশুদের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন তন্ত্রে প্রদাহ (multi-system inflammatory state)পরিলক্ষিত হচ্ছে যার জন্য জরুরি পরিচর্যা প্রয়োজন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই সংখ্যাটা ১০ থেকে ২০-র মধ্যে।
PICS জানিয়েছে, ব্রিটেনে শিশুদের মধ্যে SARS-CoV-2 জনিত লক্ষণ বা অপরিচিত সংক্রামক কোনও প্যাথোজেনের প্রভাব এ ধরনের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) জাতীয় পর্যায়ে সতর্কতা জারি করেছে, এবং চিকিৎসকদের বলেছে এ ধরনের উপসর্গের ঘটনা দেখা গেলেই রিপোর্ট করতে হবে। শুধু ব্রিটেনে নয়, ইতালি ও স্পেনেও কর্তৃপক্ষ এ ধরনের ঘটনার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে।
শরীরের বিভিন্ন তন্ত্রে প্রদাহ (multi-system inflammatory state) কী?
এই বিরল রোগের ফলে রক্তনালীতে প্রদাহ পরিলক্ষিত হয়, যার জেরে রক্তচাপ কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে সারা শরীরে এবং এর ফলে ফুসফুস ও অন্যান্য স্থানে তরল নির্মিত হয়। এটা অনেকটা কাওয়াসাকি রোগের মতই। গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে এই রোগে অসুস্থদের ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড এবং অন্যান্য অঙ্গের সম্পূর্ণ পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।
সেক্স হরমোনের কারণেই কি কোভিড সংক্রমণে মহিলাদের মৃত্যুহার কম?
উপসর্গগুলি কী কী?
শিশুদের মধ্যে পেটের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তার সঙ্গে থাকছে হৃদজনিত প্রদাহ। এরই সঙ্গে থাকছে টক্সিক শক সিনড্রোম এবং কাওয়াসাকি ডিজিজ।
টক্সিক শক সিনড্রোম হল দুর্লভ এক রোগ যাতে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। এই রোগে কিছু নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে এবং ক্ষতিকর টক্সিন শরীরে ছড়িয়ে দেয়। সময়মত চিকিৎসা না হলে তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। এর উপসর্গ হল অত্যধিক জ্বর, মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, কাশি, পেট খারাপ, ঝিমুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ও ফ্লুয়ের মত অন্যান্য লক্ষণ। এই রোগে যাঁরা অসুস্থ তাঁদের এমনকি আইসিইউ-তে ভর্তি করতে হতে পারে।
কাওয়াসাকি রোগ হল এমন এক রোগ যাতে রক্তনালীতে প্রবল প্রদাহ দেখা যায়। সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়।
রোগের কারণে প্রদাহ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক আকার নেয় হৃৎপিণ্ডে, কারণ এর ফলে যে করোনারি আর্টারি হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন করে, তাতে প্রদাহ হয়। এর জেরে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, গায়ে চুলকানি, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ঠোঁট লাল বওয়া ও ফেটে যাওয়া, জিভ লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
এ রোগের সঙ্গে কী কোভিড-১৯-এর সম্পর্ক রয়েছে?
এ উপসর্গ যে সব শিশুর মধ্যে রয়েছে, তাদের মধ্যে সামান্য কয়েকজনের শরীরে কোভিড-১৯-এর হদিশ মিলেছে। ফলে এখনও স্পষ্ট নয় যে এর সঙ্গে সার্স কোভ ২ ভাইরাসের যোগসাজশ রয়েছে কিনা।
এটা কি উদ্বেগের বিষয়?
হেলথ সার্ভিস জার্নালে NHS-এর সংশ্লিষ্ট পদাধিকারী সাইমন কেনি এক চিঠিতে লিখেছেন সৌভাগ্যের বিষয় যে কাওয়াসাকির মত রোগ দুর্লভ এবং বর্তমানে শিশুদের কোভিড-১৯-এর মত রোগের মত জটিলতা দেখা দিচ্ছে, তবে চিকিৎসকের এর মধ্যে কোনও সংযোগ রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে যাতে শিশু ও অল্পবয়সীদের দ্রুত চিকিৎসা করা যায়।
হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল কী, তা বিতর্কিতই বা কেন?
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে কোনও কোনও চিকিৎসক বলছেন এই রোগ সংক্রমণ পরবর্তী প্রদাহজনিতও হতে পারে। এরকমও হতে পারে যে তারা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে প্রদাহ শুরুর আগেই নিস্তার পেয়েছে বা টেস্টে ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়েনি।
আশঙ্কা করা হচ্ছে অল্পবয়সী কোনও কোনও কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যেও সেপসিস, মাল্টিপল অর্গান ফেলিওর ঘটতে পারে এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন