বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নয়াদিল্লি এবং অটোয়ার মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। ভারত কানাডায় ভিসা পরিষেবা বন্ধ করেছে। আর, কানাডাও ভারতে তার কর্মী সংখ্যা কমিয়েছে। অচলাবস্থার চলাকালীন, আমরা ভারত এবং কানাডার বাণিজ্য সম্পর্কের দিকে একবার নজর দিই।
ভারত-কানাডা বাণিজ্য
গত (২০২২-২৩) অর্থবর্ষে কানাডার সঙ্গে ভারতের মোট বাণিজ্য ছিল ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। যা গোটা বিশ্বে ভারতের মোট বাণিজ্যে অর্থাৎ ১.১ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের ০.৭%। দুই দেশের এই অংশীদারিত্বের পরিমাণটা গত পাঁচ বছর একই থেকে গেছে। যদিও, রফতানি এবং আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষ করে কোভিডের বছরে। তারপরও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বা আমদানি-রফতানি মোটামুটি সমানই থেকে গিয়েছে, বিশেষ করে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে। উদাহরণস্বরূপ, কানাডা ভারত থেকে ৪০০ কোটি ডলার পণ্য আমদানি করেছে। আবার, ভারতে ৪০০ কোটি ডলার পণ্য রফতানিও করেছে। এর ওপর ভারত ৫ কোটি ৮০ লক্ষ ডলারের সামান্য বেশি বাণিজ্য করেছে।
কানাডা থেকে ভারত যা আমদানি করে তার মধ্যে তিনটি শ্রেণির পণ্য প্রধান। আর, মূল্যের ভিত্তিতে তা মোট আমদানির ৪৬% (অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক)। সেগুলো হল:
১) খনিজ জ্বালানি, খনিজ তেল, বিটুমিনাস পদার্থ।
২) মোম কাঠের বা অন্যান্য তন্তুযুক্ত সেলুলোসিক উপাদানের সজ্জা, কাগজ বা পেপার বোর্ডের বর্জ্য।
৩) ভোজ্য সবজি এবং নির্দিষ্ট শিকড় ও কন্দ।
কানাডায় ভারত যা রফতানি করে, তার মধ্যে শীর্ষ তিনটি রফতানিকারক পণ্য, মোট রফতানির মাত্র ৩০%। সেগুলো হল:
১. ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য
২. লোহা বা ইস্পাত
৩. পরমাণু চুল্লি, বয়লার, যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশ।
আরও পড়ুন- ভারতে গায়ক শুভর সফর বাতিল! কেন নিষেধাজ্ঞায় আটকে গেল সংগীত?
কানাডা থেকে আমদানি করা দুটি প্রধান কৃষিপণ্য, যার সরবরাহকারী হিসেবে ভারতের কাছে কানাডা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তার মধ্যে প্রথমটি হল- মিউরেট অফ পটাশ (এমওপি)। এই সার ইউরিয়া এবং ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেটের পরে ভারতে তৃতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। ভারত,
২০২০-২১ সালে মোট ৫০.৯৪ লক্ষ টন এমওপি আমদানি করেছে। মূল্য প্রায় ১২২ কোটি ডলার।
২০২১-২২ সালে মোট ২৯.০৬ লক্ষ টন এমওপি আমদানি করেছে। মূল্য প্রায় ১০০ কোটি ডলার।
২০২২-২৩ সালে মোট ২৩.৫৯ লক্ষ টন এমওপি আমদানি করেছে। মূল্য প্রায় ১৪১ কোটি ডলার।
তার মধ্যে কানাডা থেকে আদমানি করেছে
২০২০-২১ সালে ১৬.১২ লক্ষ টন। যার মূল্য প্রায় ৩৯ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২১-২২ সালে ৬.১৫ লক্ষ টন। যার মূল্য প্রায় ১৯ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২২-২৩ সালে ১১.৪৩ লক্ষ টন। যার মূল্য প্রায় ৬৯ কোটি মার্কিন ডলার।
কানাডা গত বছর ভারতের বৃহত্তম এমওপি সরবরাহকারী ছিল। এরপর ইজরায়েল, জর্ডন, বেলারুশ, তুর্কমেনিস্তান এবং রাশিয়া থেকে ভারত এমওপি আমদানি করেছে।
দ্বিতীয় প্রধান আমদানি করা পণ্য হল মসুর বা লাল মসুর ডাল। ভারত যে ডাল আমদানি করে, তার মধ্যে অড়হর বা তুর বা কবুতর-মটরের পরে মসুরই প্রধান। ভারতের মোট মসুর আমদানি,
২০২০-২১ সালে ছিল ১১.১৬ লক্ষ টন। যার মূল্য প্রায় ৬৩ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২১-২২ সালে ছিল ৬.৬৭ লক্ষ টন। যার মূল্য প্রায় ৫৩ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২২-২৩ সালে ছিল ৮.৫৮ লক্ষ টন। যার মূল্য প্রায় ৬৬ কোটি মার্কিন ডলার।
কানাডা হল ভারতের বৃহত্তম মসুর সরবরাহকারী। তারপরে সবচেয়ে বেশ মসুর ডাল আমদানি করা হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে। কানাডা থেকে আমদানি করা মসুর ডালের পরিমাণ-
২০২০-২১ সালে ৯.০৯ লক্ষ টন। যার মূল্য প্রায় ৫১ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২১-২২ সালে ৫.২৩ লক্ষ টন। যার মূল্য প্রায় ৪১ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২২-২৩ সালে ৪.৮৫ লক্ষ টন। যার মূল্য প্রায় ৩৮ কোটি মার্কিন ডলার।