ধরা গলায় দিদা বলে উঠলো “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আজকে বিয়ের এই অনুষ্ঠান হচ্ছে। ভুলতে পারি না সেই যন্ত্রণার দিনগুলো। আজ আমরা বেঁচে আছি, আমাদের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান দেখছি, আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রার্থনা করি,ওর আগামী দিন যাতে সুখের হয়”। ভূজের ভূমিকম্প কেড়ে নিয়েছে মাকে, কেড়ে নিয়েছে পরিবারের ৬ সদস্যকে। সেদিন অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায়, আট মাসের মুর্তজা আলি।
ধ্বংসস্তূপ, বুক ফাটা কান্না, মৃতের সারির মাঝে এক বাচ্চার কান্নার আওয়াজ গিয়েছিল উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের কানে। দ্রুত তাকে মৃত মায়ের কোল থেকে উদ্ধার করা হয়। শরীরে ছিল গভীর ক্ষত। আটমাসের সেই দুধের শিশুকে নিয়ে শুরু হয় যমে-মানুষে টানাটানি। প্রথমে ভুজের জুবিলি গ্রাউন্ডে ভারতীয় সেনা ক্যাম্প হাসপাতালে এবং পরে মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে চলে চিকিৎসা। অবশেষে প্রাণে বাঁচে ৮৪ ঘন্টা ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে থাকা আটমাসের ছেলেটি। শুরু হয় নতুন লড়াই।
চোখের সামনে সে দেখেছে মায়ের মৃত্যু, হারিয়েছে পরিবারের প্রিয় মানুষগুলিকেও। ধীরে ধীরে ভূজ তার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসলেও সেদিনের ছোট্ট মুর্তজা দিদিমার কাছে বারে বারে বাবা-মার কথা জানতে চায়। কাকা জাহিদ ও স্ত্রী নাফিশা সিদ্ধান্ত নেয় মুর্তজাকে ছেলের মত মানুষ করার।
সেদিনের স্মৃতি চারণ করে নাফিশা বলেন, “সেদিনের আটমাসে সেই ছেলেটা অলৌকিক ভাবে বেঁচে যাওয়ার পর থেকে শুরু হয় আরেক লড়াই। মা ছাড়া আটমাসের সন্তান প্রতিমূহূর্তে মা’ মা’ করে ডাকত। ওকে কোন রমক সুস্থ করার পর ওকে মানুষ করাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। আজ ও বিয়ে করছে, বি.কম পাশ করেছে এটা ভেবেই গর্ব হচ্ছে”।
মুর্তজা, এখন বিকম গ্র্যাজুয়েট, বছর খানেক আগেই কাকা জাহিদের হার্ডওয়্যার ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন। সদ্য বিবাহিত মুর্তজার স্ত্রী আলেফিয়া বলেন, ‘আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার সময় মুর্তজা আমাকে তার জীবনের এই অসাধারণ গল্পের কথা বলেছিল। তার জীবনে এটা এক অলৌকিক ঘটনা ... এমন গল্প যেন বইয়ের পাতাতেই পড়েছি, আজ সামনে মানুষটিকে দেখে ভাল লাগছে”।