বালাকোট বিমান হামলার পর ভারতীয় বায়ুসেনার একটি কপ্টারকে ভুলবশত গুলি করে ভূপাতিত করার ঘটনায় গ্রুপ ক্যাপ্টেনকে সামরিক আদালত বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীনগরের কাছে বুদগামে এমআই-১৭ কপ্টার ধ্বংসের ঘটনায় কোর্ট মার্শালের মুখে ভারতীয় বায়ুসেনার দুই অফিসার দোষী সাব্যস্ত হয়। এছাড়া দুই এয়ার কমান্ডার এবং দুই ফ্ল্যাইট লেফটেন্যান্টের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গোটা ঘটনায় তাঁদের ভূমিকাও প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন কোর্ট মার্শালের সময় পাঁচটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে কমান্ড ও কন্ট্রোলে ব্যর্থতার অভিযোগ, আইডেন্টিফিকেশন অফ ফ্রেন্ড অ্যান্ড ফো (আইএফএফ) সিস্টেম বন্ধ রাখা, ট্রান্সপন্ডার সিস্টেম বন্ধ করা, হেলিকপ্টারের গ্রাউন্ড এবং ক্রু সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন না করা। IFF হল সেনাবাহিনীর একটি সিস্টেম যার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয় যে বিমানটি শত্রু দেশের। তাই এটাকে একটা বড় ভুল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা চালু থাকলে হয়তো এই ঘটনা এড়ানো যেত। কোর্ট মার্শালের সময়, তৎকালীন সিনিয়র এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল অফিসার, উইং কমান্ডার শায়ান নাথানিকেও কঠোরভাবে তিরস্কার করা হয়েছে। তবে অন্য চারটি অভিযোগ থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বিমান বাহিনীর একজন গ্রুপ ক্যাপ্টেনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে সামরিক আদালত। বালাকোট বিমান হামলার পর ভারতীয় বায়ুসেনার একটি কপ্টারকে ভুলবশত গুলি করে ভূপাতিত করার ঘটনায় গ্রুপ ক্যাপটেন সুমন রায় চৌধুরী তখন শ্রীনগর এয়ার বেসের চিফ অপারেশন অফিসার ছিলেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের বালাকোটে জয়শ-ই-মোহাম্মদের প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালায়। এর পর পাক বিমানবাহিনীর বিমান পাল্টা হামলা চালিয়ে ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশ করে। এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী ভুল করে নিজেদের একটি হেলিকপ্টারে হামলা চালায়। গ্রুপ ক্যাপ্টেন সুমন রায় চৌধুরী তখন শ্রীনগরের এয়ার ফোর্স স্টেশনে চিফ অপারেশন অফিসার ছিলেন। এই ঘটনায় দুই পাইলট ও এক সাধারণ নাগরিকসহ ছয় ভারতীয় সেনা নিহত হয়।
গ্রুপ ক্যাপটেন সুমন রায় চৌধুরী ইতিমধ্যেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে আপিল করেছেন, যার জেরে কোর্ট মার্শালের (জিসিএম) সিদ্ধান্ত এখনও স্থগিত রয়েছে। এছাড়াও, সামরিক আইন অনুসারে, সিদ্ধান্তটি ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধানকেও অনুমোদন করতে হবে সূত্রের খবর, হাইকোর্টের আদেশের পরই জিসিএমের সুপারিশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বিমান বাহিনী প্রধান। মঙ্গলবার সরকারি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। 'কোর্ট অফ ইনকোয়ারি' অনুসারে, ভারত ও পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের দিন, যুদ্ধ বিমানটি শ্রীনগরে ফিরে আসার সময় বিমান বাহিনীর নিজস্ব সারফেস টু এয়ার মিসাইলের আঘাতে সেটিকে ভূপাতিত করা হয়। সেই সময়, গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী শ্রীনগর এয়ার ফোর্স স্টেশনের চিফ অপারেশন অফিসার (সিওও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।