Advertisment

শ্রদ্ধা, নিক্কি, মেঘা- তিনটি ‘প্রেমে’র গল্পেরই মর্মান্তিক পরিনতি!

প্রতি ক্ষেত্রেই লিভ-ইন পার্টনারকে হত্যার ঘটনা সামনে এসেছে।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
Nikki Yadav, Sahil Gehlot, body in fridge, Delhi crime, Maharashtra crime, Shraddha Walkar murder, Aftab Poonawala, Megha Dhan Singh Torvi, Hardik Shah, Maharashtra, Nalasapora, Palghar, Mehrauli, Najafgarh"

লিভ-ইন পার্টনার শ্রদ্ধা ওয়াকারকে নৃশংস খুনের দায়ে জেলবন্দি আফতাব পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই চার্জশিট দাখিল করেছে দিল্লি পুলিশ। ৬,৬০০ পাতার সেই চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে রয়েছে নৃশংসতার দৃষ্টান্ত। কী ভাবে পাশবিক হত্যাকাণ্ড সবার অজান্তে ঘটিয়েছে আফতাব তা জানলে শিউরে উঠতে হয়।

Advertisment

প্রথমে পুলিশকে বিভ্রান্ত করে আফতাব, জানায় ১৮ মে ২০২২ সালে খুনের পর পাথর পেষার মেশিন দিয়ে তিনি শ্রদ্ধার শরীরের হাড় গুঁড়ো করেছিল। পরে জেরায় চাপ দিতেই আফতাব পুলিশকে জানায়, শ্রদ্ধার দেহ ১৭ টুকরো করে কয়েক মাস ধরে দেহাংশ ফেলতে শুরু করে সে।

চার্জশিটে আরও উল্লেখ, ১৯-২০ এবং ২১ মে ২০ লিটারের ১৬টা জলের বোতল কেনা একেবারেই অদ্ভূত ছিল। কারণ শ্রদ্ধার দেহ টুকরো করার পর প্রচুর রক্ত ধুতে সেই জল ব্যবহার করে আফতাব। তার পর ১১ কেজি শুষ্ক বরফ কেনে আফতাব। সেই শুষ্ক বরফ দিয়ে শ্রদ্ধার দেহাংশ তাজা রাখত আফতাব। পুলিশের মতে, আফতাব শ্রদ্ধার সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করে ১৮ মে। কারণ শ্রদ্ধা ডেটিং অ্যাপে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর দেখা করতে গিয়েছিল।

আফতাব পুলিশকে জানায়, খুনের পর হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে একটা আয়রন স’ তিনটে বড় ব্লেড, একটা হাতুড়ি এবং একটি প্লাস্টিক ক্লিপ কেনে। কব্জি থেকে পাঞ্জা কাটে সেই স’ দিয়ে তার পর পলিথিনের ব্যাগে ভরে রাখে। আফতাব বলেছে, সে ছত্তরপুর পাহাড়ি জঙ্গলে শ্রদ্ধার একটা উরু ফেলে, পরের চার-পাঁচ দিন ধরে ১৭টা টুকরো (একটা হাতের তিন টুকরো, একটা পায়ের তিন টুকরো, মাথা, কোমরের অংশ এবং বুড়ো আঙুল) জঙ্গলে ফেলে আসত। খুনের পরের দিন ফ্রিজ কিনেছিল সে। তাতেই শ্রদ্ধার দেহের টুকুরোগুলো রাখত। লিভ ইন পার্টনারকে খুনের ঘটনায় কেঁপে ওঠে তামাম বিশ্বের মানুষের হৃদয়। ঘটনার বীভৎসতায় শিউরে ওঠেন সকলেই।

আরও পড়ুন : < টানা তৃতীয় দিন, BBC অফিসে আয়কর হানা, নিন্দায় গর্জে উঠল কংগ্রেস >

এর মাঝেই ফের একই ধাঁচে নিজের প্রেমিকাকে ঠান্ডা মাথায় ডেটা ক্যাবেল দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে ফ্রিজের ভিতর ভরে রাখার ঘটনা সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে মৃত তরুণীর নাম নিক্কি যাদব। বয়স ২৫।

ফের একবার শিরোনামে দিল্লি! রাজধানীর বুক কাঁপিয়ে দিয়েছিল কিছুদিন আগের শ্রদ্ধা ওয়ালকরের খুনের ঘটনা। প্রেমিকের হাতে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়েছিল তরতাজা এক তরুণীকে। খুনের পর শ্রদ্ধার দেহ খণ্ড খণ্ড করে কেটে ফ্রিজে লুকিয়ে রাখার পর জঙ্গলে ফেলে দিতে গিয়ে শেষমেশ ধরা পড়েছিল তাঁর প্রেমিক তথা অভিযুক্ত আফতাব পুনাওয়ালা। আর তার রেশ কাটতেই না কাটতেই রাজধানীর নজফগড়ের এক ধাবার ফ্রিজারে উদ্ধার হয়েছে ২৫ বছরের নিক্কি যাদবের দেহ। গ্রেফতার করা হয়েছে ধাবার মালিক তথা নিক্কির প্রেমিক সাহিল গেহলটকে।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছে, মৃতার দেহ দেখে বোঝা যাচ্ছে কয়েকদিন আগেই খুন করা হয়েছিল তাঁকে। বেশ কিছুদিন ধরে সম্পর্কে থাকলেও নিক্কিকে না জানিয়ে অন্য এক মহিলাকে বিয়ের পরিকল্পনা করে এগোচ্ছিল অভিযুক্ত। সেই খবর জানতে পারাতেই প্রেমিকাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে প্রেমিক সাহিল। নিজের প্রেমিকাকে ডেটা কেবলের তার জড়িয়ে পেঁচিয়ে খুন করেছে সাহিল বলেই মনে করছে পুলিশ। তরুণীর দেহ উদ্ধারের পর তা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের দাবি, সাহিল ও নিক্কির মধ্যে মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল, কিন্তু সাহিল কাউকে কিছু না জানিয়ে ১০ই ফেব্রুয়ারি অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেন। নিক্কি যখন বিষয়টি জানতে পারে, তখন নিক্কি তাতে তীব্র আপত্তি জানায়। এমন কী বিয়ের জন্য সাহিলকে জোর করতে থাকেন। গত ৮ এবং ৯ ফেব্রুয়ারি সাহিল নিক্কিকে কাশ্মীরি গেট এলাকায় দেখা করতে ডাকেন। পুলিশের দাবি, এদিনই দুজনের মধ্যে প্রবল তর্কাতর্কি হয় এবং এরপরই সাহিল নিক্কিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর নিক্কির মৃতদেহ গাড়িতে করে এনে ফ্রিজের ভিতর লুকিয়ে রাখে।

আশ্চর্যের বিষয় হল এই হত্যাকাণ্ডের পর সাহিল ১০ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করে। পুলিশ বলছে, নিক্কি হরিয়ানার বাসিন্দা। দিল্লিতে পড়াশোনা করত। তার পরিবার হরিয়ানায় থাকে। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে সাহিলের ধাবার ফ্রিজের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় নিক্কির মৃতদেহ।

সাহিলকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য রাও তুলারাম মেমোরিয়াল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। পুলিশ এখন জানতে চাইছে, কেন সাহিল মেয়েটিকে হত্যার পর তার লাশ প্রায় ৪-৫ দিন ফ্রিজে লুকিয়ে রেখেছিল? সাহিল কি শ্রদ্ধা ওয়াকারের মতো এই মেয়েটির লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল? দিল্লি পুলিশ এই সকল বিষয়ে সাহিলকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

সাহিল গ্রেটার নয়ডার গালগোটিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি ফার্মা কোর্সে ভর্তি হন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকিও ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হয়। দুজনেই গ্রেটার নয়ডায় একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন । লকডাউন কালে সামান্য দূরত্ব বাড়ে।

লকডাউন পর্ব মেটার পর দুজনেই আবার উত্তম নগর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, সাহিলের পরিবার অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ের ঠিক করে। সাহিল ওই মেয়েকে বিয়ে করতে চায়নি, কিন্তু তার পরিবারের চাপে সে বিয়ে করতে রাজি হলেও নিক্কির কাছে সে বিষয়টি লুকিয়ে রাখে।

৯ ফেব্রুয়ারি সাহিল নিকিকে তার সঙ্গে দেখা করতে ডেকেছিলেন। নিকি তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে উভয়ের মধ্যে প্রবল ঝগড়া বাঁধে হয় এবং সাহিল তার গাড়িতে রাখা ডেটা কেবিলের তার জড়িয়ে নিক্কিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর তার মৃতদেহ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখে।

পুলিশ আরও জানিয়েছে সাহিল এবং নিক্কি যাদব দুজনেই দুজনকে ২০১৮ সাল থেকে একে অপরকে চিনতেন। দুজনেই কোচিং সেন্টারে একসঙ্গে কোচিং করতেন। এরপর বেশ কিছুদিন লিভ-ইন রিলেশনে ছিলেন দুজনই। দুজনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল। সাহিলের পরিবার অন্য কারুর সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করেছিল।

ঠিক এরপরেই সামনে এল আরও এক করুণ প্রেমের কাহিনী। মুম্বই সংলগ্ন পালঘরে সামনে এল লিভ ইন পার্টনারকে খুনের ঘটনা। প্রেমিকাকে খুন করে বিছানায় দেহ লুকিয়ে পালিয়ে যায় প্রেমিক। খবর পেয়ে পুলিশ ট্রেন থেকে পলাতক অভিযুক্ত হার্দিককে গ্রেফতার করে। মুম্বাই সংলগ্ন পালঘরের তুলিঞ্জ এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে দুজনেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘লিভ-ইন’ রিলেশনে ছিলেন। ঠিক কী কারণে খুন? খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জানা গিয়েছে অভিযুক্তের নাম হার্দিক শাহ,

পুলিশ আরও জানায়, হার্দিক কোন কাজ করতেন না। সূত্রের খবর, মেঘার রোজগারেই থেকেই চলত সংসার খরচ। মেঘা পেশায় একজন নার্স এবং মেঘা-হার্দিকের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত বলেই জানিয়েছেন প্রতিবেশিরা। ঝগড়া্র জেরেই হার্দিক মেঘাকে খুন করে তার দেহ বিছানায় লুকিয়ে রাখে বলেই প্রতিবেশিদের ধারণা। এরপর ঘরের কিছু জিনিসপত্র বিক্রি করে পালিয়ে যায়। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেন।

পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠিয়েছে এবং আইপিসির ৩০২ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। হার্দিককে মধ্যপ্রদেশের নাগদা থেকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অপরাধ দমন শাখার একটি দল অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

তিন বছর ধরে সম্পর্কে থাকা হার্দিক ও মেঘা গত ছয় মাস ধরে একসঙ্গে বসবাস করছিলেন। প্রায় এক মাস আগে তারা একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন।পুলিশ জানিয়েছে, তাদের প্রতিবেশীরাও তাদের ঘন ঘন ঝগড়ার অভিযোগ করেছেন।

Murder love
Advertisment