রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে সর্বদা অশান্তির মধ্যে থেকে উঠে এসেছেন। আর, এখন সেই অশান্তিই তাঁকে যেন গ্রাস করে নিতে চলেছে। গত কয়েক মাস ধরে ভাড়াটে সেনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিরোধ বাড়িয়ে তুলেছেন। পুতিন অবশ্য তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য এতদিন করেননি। তাঁর নীরবতা একপ্রকার রাজনৈতিক দিশাহীনতাকেই উত্সাহিত করেছিল। এই নীরবতা অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই পুতিনের শাসনের ট্রেডমার্ক। এমন এক ব্যবস্থাপনা, যেখানে তিনি অভিজাতদের মধ্যে দ্বন্দ্বে রীতিমতো স্বচ্ছন্দ থেকেছেন। সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। আর, চূড়ান্ত কর্তৃত্ব সর্বদা তাঁর হাতে থেকেছে।
কিন্তু, পুতিনের সেই কায়দা এখন আর কাজ দিচ্ছে না। শনিবার, বিদ্রোহী নেতা প্রিগোজিনের বাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ-অন-ডনে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিগুলো দখল করেছে। মস্কোর পথে রওনা হওয়ার হুমকি দিয়েছে। যা ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পুতিনের শাসনের জন্য সবচেয়ে নাটকীয় এবং কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
এখনও অবশ্য সময় ফুরিয়ে যায়নি। প্রিগোজিনের বিদ্রোহের পরও পুতিনের সহনশীলতা আর, সঙ্গে কার্যক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে। তবে, রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের প্রতি প্রিগোজিনের মৌখিক আক্রমণে সেখানকার প্রশাসনিক কর্তারা কিন্তু, অবাক নন। কারণ, অতীতে প্রায় এই ধরনের ঘটনায় রুশ প্রেসিডেন্ট নীরব থেকেছেন। একেবারে নির্লজ্জের মত। যার জেরে প্রিগোজিন আরও উত্সাহিত হয়েছেন।
এই ব্যাপারে ক্রেমলিন এবং রুশ নিরাপত্তা পরিষেবার প্রবীণ আধিকারিকদের উল্লেখ করে কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের সিনিয়র ফেলো তাতিয়ানা স্ট্যানোভায়া বলেছেন, 'তারা পুতিনের আচরণকে এতদিন ধরে বোঝার চেষ্টা করে এসেছেন। কারণ, এমন ধরনের ঘটনায় এতদিন ধরে পুতিন নীরব থাকতেন।'
আরও পড়ুন- শত্রু দেশে বিদ্রোহের খবরে খুশিতে ডগমগ জেলেনস্কির সাফ কথা, ‘রাশিয়ার দুর্বলতা স্পষ্ট’
তবে, পুতিনের ব্যক্তিগত মতামত নিয়ে বিভ্রান্তি শনিবার সকালে কেটে গিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া তাঁর পাঁচ মিনিটের ভাষণে প্রিগোজিনকে নাম না-করে 'বিশ্বাসঘাতক' বলেছেন। তাঁর সামরিক অভ্যুত্থানকে দমনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু, তাতে কতটা কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। কারণ, যা ক্ষতি হওয়ার তা আগেই হয়ে গেছে।