বর্তমান সময়ে নারী সমাজের নানা ক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দশভুজার মতই সংসার থেকে কর্মক্ষেত্র, সবদিক দাপটের সঙ্গে সামলাচ্ছে। প্রাচীন ভারতেও নারীর বহুবিধ ভূমিকা ছিল। ইতিহাসই সেসবের সাক্ষী। এই পথচলায় সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, তা নীতিকথায় বলে গিয়েছেন কৌটিল্য চাণক্য।
তিনি সবার আগে জোর দিয়েছেন বিদ্যার ওপর। কোটিল্যের কথায়, বিদ্যা হল মানুষের অলঙ্কার। যাঁর বিদ্যা নেই, তিনি যত উচ্চবর্ণেই জন্মান না কেন, তাঁর সেই বংশমর্যাদা অর্থহীন। তিনি রূপবান, অর্থবান হলেও বিদ্বানের মত প্রতিষ্ঠা তাঁর থাকে না। কারণ, বংশমর্যাদা, রূপ আর অর্থ চিরকাল স্থির থাকে না। আর, একজন বিদ্বান ব্যক্তি উচ্চবংশে না-জন্মালেও তিনি সমাজের অলঙ্কার হয়ে উঠতে পারেন। তাঁর আলোয় গোটা সমাজ আলোকিত হয়। তিনি সমাজের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন।
একইসঙ্গে তিনি শাসকদেরও কর্তব্যের ব্যাপারে সচেতন করে গিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন যে শুধুমাত্র শাসক হওয়াটাই শেষ কথা না। একজন রাজা বা শাসকের মূল কর্তব্য হল প্রজাপালন। দুষ্ট প্রজা থাকতে পারে। কিন্তু, সেই দুষ্ট প্রজাকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব রাজা বা শাসকের ঘাড়েই বর্তায়। তাঁরই দায়িত্ব সমস্যার মোকাবিলা করে প্রজাদের রক্ষা করা। আর, এই প্রসঙ্গেই নারীর ভূষণ কী, তা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন চাণক্য।
আরও পড়ুন- নিজের ইমেজ বদলাতে চান, এই নীতিবাক্যতেই পথ দেখিয়েছেন চাণক্য
তাঁর ভাষায়, 'নক্ষত্রভূষণং চন্দ্রো নারীণাং ভূষণং পতিঃ। পৃথিবীভূষণং রাজা, বিদ্যাং সর্বস্য ভূষণম্।' এই কথার মাধ্যমে চাণক্য পরিষ্কার বুঝিয়েছেন যে নক্ষত্রের অলঙ্কার যেমন চাঁদ। তেমনই নারীরও অলঙ্কার তাঁর স্বামী বা পতি। কারণ, কোনও নারীর যতক্ষণ পতি বা স্বামী জীবিত অবস্থায় থাকেন, ততক্ষণ সেই নারী ফুল, গল্প আর অলঙ্কারে ভূষিতা হয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, যতক্ষণ পতি জীবিত থাকেন, ততক্ষণই নারীর অন্তর আনন্দে, সুখে, আতিশয্যে পূর্ণ থাকে। কিন্তু, পতিহীনা নারীর আভ্যন্তরীণ সুখ থাকে না। তাই পতিকেই নারীর অলঙ্কার বলা যায়।