খুব সোজসাপটা ভাবে জীবনের নানা দিক দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন চাণক্য। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের গুরুদেব তথা মন্ত্রী চাণক্য। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতিকে মাথায় রেখেই নিজের নীতি তৈরি করেছিলেন। তাঁর সব নীতিই তৈরি হয়েছিল হিন্দু শাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে। ব্যক্তি জীবনের চলার পথকে কেন্দ্র করে। জীবনের নানা দিক তিনি খুঁটিয়ে দেখেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন শাস্ত্র লেখার সময়।
মানব সমাজে প্রকৃত বন্ধু পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। কারণ, সমাজে বেশিরভাগ মানুষই স্বার্থপর। ফলে, প্রকৃত বন্ধু নির্বাচন করা অতি দুরুহ। যখন কোনও মানুষের খুব সুখের সময় থাকে, অর্থ, যশ, মান ও সম্মান বাড়ে, তখনই তাঁর চারপাশে ভিড় জমতে থাকে। কারণ, নিয়মই হল যে অর্থ, যশ, মান ও সম্মানের অধিকারী ব্যক্তির বন্ধুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু, যখন কোনও ব্যক্তিকে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তখন অনেক বন্ধুকেই আর দেখতে পাওয়া যায় না। এই কথা মাথায় রেখেই চাণক্য বলেছেন যে, আসলে সকলে বন্ধু নয়। কোনও না কোনওভাবে নিজের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে কিছু মানুষ বন্ধুদের সঙ্গে ছলনা করে। আর, সুযোগ বুঝে কেটেও পড়ে। আর, তাই যদি কোনও মানুষ অন্য কোনও মানুষকে বিপদের দিনে একা ফেলে সরে না-যায়, তবেই তাকে প্রকৃত বন্ধু বলা যেতে পারে।
আরও পড়ুন- জীবনে জনপ্রিয়তা বাড়াতে চান? এই নীতি মানলে মানুষ আপনাকে মাথায় করে রাখবে
এই ব্যাপারে চাণক্য বলে গিয়েছেন যে- উৎসবে ব্যসবে চৈব দুর্ভিক্ষে শত্রুবিগ্রহে। রাজদ্বারে শ্মশানে চ যস্তিষ্ঠতি স বান্ধবাঃ। যার বঙ্গানুবাদ করলে হয় যে ব্যক্তি উৎসবের সময়, বিপদের সময়, দুর্ভিক্ষের সময়, শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধে, বিচারালয়ে, শ্মশানে-সহ সর্বদাই সহায় হন, তিনিই হন প্রকৃত বন্ধু। এককথায় বলতে গেলে জীবনের উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখয় যে মানুষ সর্বদা সহায়তা করেন, তিনিই হলেন আসল বন্ধু। আর, প্রকৃত বন্ধুর সাহায্যেই মানুষ মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারে। সহজাত শোক, তাপ, দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে পারে।