হিন্দু শাস্ত্রে সোমবারকে বলা হয় ভগবান শিবের আরাধনার দিন। আর, শিবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম কেদারনাথ। কী রয়েছে এই মন্দিরে? যার টানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা? শাস্ত্র বলে, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই কেদারনাথ। চার পুণ্যতীর্থের অন্যতম এই ধাম। উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল শহরের কাছে হিমালয়ের কোলে এই তীর্থভূমি। কাছেই বয়ে চলেছে মন্দাকিনী নদী। আগে এর নাম ছিল কেদারখণ্ড। সেই জন্য ভগবান শিব এখানে কেদারখণ্ডের অধিপতি বা কেদারনাথ নামে পুজিত হন।
বরফের জন্য সারাবছর কেদারনাথ মন্দির খোলা থাকে না। এপ্রিলের শেষের দিকে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মন্দির খোলে। বন্ধ হয় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিকে, কার্তিক পূর্ণিমায়। মন্দির বন্ধের পর কেদারনাথ মন্দিরের কিছু মূর্তি ডোলায় চাপিয়ে ছয় মাসের জন্য রুদ্রপ্রয়াগের উখিমঠে নিয়ে গিয়ে পুজো করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা যাকে বলেন 'ডোলিযাত্রা'। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বহুবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেদারনাথ মন্দির। ধসে ক্ষতি হয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের। অথচ, অলৌকিক ভাবে এখানকার নন্দী মূর্তির গায়ে আঁচড়ও লাগেনি।
মহাভারতে কথিত আছে, পাণ্ডবরা খবর পেয়েছিলেন যে মহাদেব এখানে ষাঁড়ের ছদ্মবেশে লুকিয়ে আছে। ব্যাসদেবের নির্দেশে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পাপ ধুয়ে ফেলতে পাণ্ডবরা এখানে এসে তপস্যার দ্বারা মহাদেবকে তুষ্টও করেছিলেন। কেদারনাথে সেজন্য ষাঁড়ের পিঠের কুঁজকেই জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে পুজো করা হয়। যা দেখতে ত্রিভুজাকৃতি। আদি শংকরাচার্য এখানে মন্দির সংস্কারের কাজ করিয়েছিলেন বলেও জানা যায়।
এখানকার প্রধান পুরোহিতকে বলা হয় রাওয়াল। তিনি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের। কথিত আছে ভগবান বিষ্ণুর অবতার নর-নারায়ণ তাঁদের তপস্যায় ভগবান শিবকে সন্তুষ্ট করেছিলেন। তাঁদের প্রার্থনা অনুযায়ী ভক্তদের আশীর্বাদ দিতে ভগবান শিব এখানে জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে বসবাস শুরু করেন। রাওয়াল মন্দিরের ভিতরে কোনও আচার-অনুষ্ঠান করেন না। তাঁর নির্দেশ যাবতীয় কাজ করেন সহকারীরা।
বিনায়ক চতুর্থী এবং দিওয়ালিতে এখানে খুব জাঁকজমক করে উত্সব হয়। শ্রাবণ মাসে রাখিপূর্ণিমার ঠিক আগে হয় অন্নকূট মেলা। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে এলে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩, ৫৮৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই মন্দির। কেদারনাথ মন্দিরের উচ্চতা ৮৫ ফুট। চওড়া ১৮৭ ফুট। ছয় ফুট উঁচু ভিতের ওপর মন্দিরটি তৈরি।
কেদারনাথ মন্দিরের কাছেই আছে অগস্ত্য মুনির স্থল। যেখানে শিবমন্দির অগস্ত্যেশ্বর মহাদেব নামে পরিচিত। আছে ভগবান ভৈরবের মন্দির। যার নাম ভৈরবনাথ বা ভৈরনাথ। তিনি 'ক্ষেত্রপাল' নামেও পরিচিত। শিবরাত্রির দিন এই মন্দিরে ব্যাপক ভিড় হয়। রয়েছে গৌরীকুণ্ডও। যে জলাধারে স্থান করলে সব পাপ ধুয়ে যায় বলেই ভক্তদের বিশ্বাস। প্রতিবছর পাপমোচনের জন্য হাজার হাজার মানুষ এই গৌরীকুণ্ডে এসে স্নান করেন। কাছেই রয়েছে গুপ্তকাশী। এখানে রয়েছে বহু পুরনো বিশ্বনাথ মন্দির, মণিকর্ণিক কুণ্ড এবং অর্ধনারীশ্বর মন্দির।
আরও পড়ুন- বাংলার ‘মিষ্টি গল্প’: ২৫০ বছর আগে এই মিষ্টির জন্ম, ওপার বাংলা থেকে গিয়েছিল ব্রিটেনের রানির দরবারে
কেদারনাথ তীর্থক্ষেত্রের কেদারনাথ পর্বত তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণের অন্যতম জায়গা। এখানে সাদা বরফ আর নীল আকাশ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। বলা হয়, তিনচূড়ার এই পর্বতে নাকি স্বয়ং মহাদেব বাস করেন। পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস, কেদারনাথ মন্দির আসলে পঞ্চকেদারের অংশ। যার সবকটিই গাড়োয়াল হিমালয়ের মধ্যে পড়ে। ভগবান শিব যখন ষাঁড় রূপ থেকে নিজের রূপ ধারণ করেন, তখন তাঁর হাত দেখা গিয়েছিল তুঙ্গনাথে। রুদ্রনাথে দেখা গিয়েছিল ভগবান শিবের মুখ। মধ্য মহেশ্বরে দেখা গিয়েছিল ভগবান শিবের পেট। আর কল্পেশ্বরে দেখা গিয়েছিল শিবের জটা।