স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ এই মন্দিরে নিয়মিত আসতেন, বলেছিলেন এখানকার বিগ্রহ জীবন্ত

বেশ কয়েক শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দির।

বেশ কয়েক শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দির।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Kalyaneshwar Shiv Templa

এরাজ্যে কথিত আছে, গঙ্গার পশ্চিম কূল বারাণসীর সমতুল্য। এই পশ্চিম কূলে রয়েছে এক কয়েক শতাব্দীপ্রাচীন মন্দির। যার পূর্ব উপকূলে রয়েছে মহাতীর্থ দক্ষিণেশ্বর। আর, পশ্চিম উপকূলে রয়েছে মহাতীর্থ বেলুড়মঠ। এই দুই মহাতীর্থেরই মধ্যে রয়েছে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। মূলত সাধক সমাজ এবং গুটিকয়েক ভক্তই যার খবর রাখেন। সেই মন্দির হল কল্যাণেশ্বর শিব মন্দির। যার বয়স আনুমানিক ৬০০ বছরেরও বেশি।

Advertisment

এই মন্দিরে বেশ কয়েকবার এসেছে যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। কল্যাণেশ্বর মহাদেবকে তিনি পুজোও করেছেন। রামকৃষ্ণদেব জানিয়েছিলেন, এই শিবমন্দিরের বিগ্রহ জীবন্ত। এই মন্দির দর্শন করলে কাশী দর্শনের ফললাভ হয়। সেই কথা তিনি ভাগ্নে হৃদয়রামকেও বলেছিলেন। শুধু রামকৃষ্ণদেবই নন। স্বামী বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে বেলুড় মঠের প্রথম প্রেসিডেন্ট রাখাল মহারাজও বারবার এসেছেন এই মন্দিরে। আজও বেলুড় মঠ থেকে সন্ন্যাসীরা এই মন্দিরে যাতায়াত করেন। রাখাল মহারাজ একবার শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সঙ্গেও এই মন্দিরে এসেছিলেন। সেই সময় তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে, মন্দিরে প্রবেশ করতেই রামকৃষ্ণদেব গভীর সমাধিতে সমাধিস্থ হয়েছেন। ঠাকুরের এত গভীর সমাধি রাখাল মহারাজ অতীতে দেখেননি।

কথিত আছে, আজ যেখানে কল্যাণেশ্বর শিব মন্দির, একটা সময় সেখানে ছিল গভীর বেতবন। সেই বেতবনের কিছু দূরেই বাস করতেন এক দরিদ্র গোয়ালা। তাঁর একটা গরু ছাড়া পেলেই রোজ চলে যেত ওই বেতবনে। সেখানে এক প্রস্তরখণ্ডে সে অনবরত দুধ ঢালত। গোরুটি ফিরে এলে, দুধ দুইতে গিয়ে গোয়ালা কিছুই পেত না। এর কারণ, খুঁজতে গিয়ে গোয়ালা দেখতে পান, গোরুটি বেতবনে গিয়ে দুধ ঢালছে। গোয়ালা কাছে গিয়ে দেখতে পান, একটি পাথরের খণ্ড। যার মাথার ওপর একটি বড়সড় মণি জ্বলছে।

যা দেখে গোয়ালা কোনওক্রমে গোরুটিকে ঘরে এনে বেঁধে রেখেছিলেন। রাতেই মহাদেব স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন ওই গোয়ালাকে। বলেছিলেন, গাভীটিকে বেঁধে না-রাখতে। কারণ, গাভীটি মহাদেবের ওপর নিত্য দুধ বর্ষণ করত। মহাদেব স্বপ্নাদেশে জানিয়েছিলেন যে, এখানে তিনি কল্যাণেশ্বর শিব রূপে বিরাজমান। এরপর ওই গোয়ালা সাধ্যমত বেতবন সংস্কার করে মহাদেবের আরাধনা করেছিলেন। তিনিই ছিলেন কল্যাণেশ্বর শিবের প্রথম প্রচারক।

Advertisment

আরও পড়ুন- বৈষ্ণব লীলাক্ষেত্র পানিহাটি, চৈতন্যদেবের সময় থেকে চলছে চিড়ার মেলা

পরবর্তী সময়ে এক নাগা সাধু এখানে এসে শিবের মাথা থেকে মণিটি হরণের জন্য শিবলিঙ্গের মাথায় কুড়ুলের কোপ দিয়েছিলেন। এতে জ্বলন্ত মণিটি উধাও হয়ে গিয়েছিল। আর, নাগা সাধু অপঘাতে মারা গিয়েছিলেন। আজও কল্যাণেশ্বর শিবলিঙ্গে সেই কুড়ুলের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

Temple Lord Shiva pujo