এত আয়োজন, আড়ম্বর করে যে শারদীয়া এল, চোখের পলক পড়তে না পড়তেই পুজো শেষ। ফাঁকা মণ্ডপে একা একা পুড়তে থাকা সলতের প্রদীপ, রাস্তা জুড়ে ডাই করা বাঁশ আর রঙিন কাপড়ের স্তূপ এসব মনে করিয়ে দেয় শরত এবার যাওয়ার মুখে। লক্ষ্মী পুজোও কেটে গেছে। অথচ উৎসব শেষের এই বিষণ্ণবেলাতেই বাংলার এক গ্রাম সেজে উঠছে দুর্গোৎসবে। সত্যি? হ্যাঁ সত্যিই। জলপাইগুড়ি জেলার রঙধামালি গ্রাম। আগামী বৃহস্পতিবার সেখানে দুর্গা পুজো। সেজে উঠছে গোটা এলাকা। পুজো ঘিরে বসবে তিন দিনের মেলা- মহারাজের মেলা নামে জনপ্রিয়।
আশে পাশের গ্রাম থেকে লোকজন আসবে মহারাজের মেলায়। এ গ্রামের বাসিন্দারা সব অপেক্ষায় থাকেন এই দিনটির জন্য। কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার পরের বৃহস্পতিবার হয় দুর্গা পুজো। এমন অভিনব নিয়ম কেন? স্থানীয় লোককথা মতে ধরাধামে চারটি দিন কাটিয়ে কৈলাসে ফিরে যাওয়ার পথে তখন বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে তিস্তার পাড়ের এক আমবাগানে বিশ্রাম নিতে বসে পড়েন তিনি। জানতে পেরে বাগানের মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন। নানাভাবে সেবা করেন দুর্গা মা ও তার সন্তান-সন্ততিদের। তাকে সপরিবারে এখানে একদিন থেকে যাওয়ার অনুরোধ করেন গ্রামবাসীরা। তাতে রাজি হন দেবী। সেখানেই তাকে সপরিবারে আরাধনা করেন সমস্ত গ্রামবাসীরা। তাতে খুশি হয়ে মা দুর্গা তাদের আশীর্বাদ করেন।
আরও পড়ুন, দেড়শ বছর ধরে এই পুজোয় অসুরের পরনে থাকে কোট-প্যান্ট
এ বছর ১৩৮ বছরে পড়ল এমন অকালে অকালবোধন। লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক ও মহাদেবের পাশাপাশি জয়া ও বিজয়াকেও পুজো করা হয় এখানে। পাঁঠাবলির রীতি রয়েছে। তবে এই পুজোর বিশেষত্ব, চার দিন নয়, একদিনেই হয় ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পুজো। বাগান মালিক মহারাজের বাগানে এই পুজো শুরু হওয়ায়, এলাকায় মহারাজের দুর্গা পুজো বলেই এর পরিচিতি।
স্থানীয় উপপ্রধান কৃষ্ণ দাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, "এই মহারাজের মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় একটা পুনর্মিলন হয়। আর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আগামী চার পাঁচ মাসের রুটি রুজির জোগান দেয় এই মেলা। হিন্দু-মুসলিম, আদিবাসী, নেপালি কোনও ভেদাভেদ থাকে না এই উৎসবে। সারা বছর সবাই এই একটা মেলায় আনন্দ হুল্লোড় করবে বলে মুখিয়ে থাকে। আর কচিকাঁচাদের আসল দুর্গা পুজোয় নতুন জামা না হলেও চলে। যত বায়না, সব এই সময়ে"।
পুজো উপলক্ষ্য তিনদিনের বিশাল মেলার আয়োজন হয়েছে। শনিবার অবধি মেলা চলবে। জিলিপি, মোগলাই- কষা মাংসের গন্ধে ম-ম করবে চারিদিক। নাগরদোলা, সার্কাস, যাত্রাপালায় উপচে পড়বে ভিড়। কাজের সূত্রে বা বিয়ের পর যারা দূরে থাকেন, এই দিন তিনেকের জন্য ঘরে ফেরেন সবাই। আনন্দ আয়জন-হইচই শেষে গোটা বাংলায় যখন বুক ঝিম করা বিষণ্ণতা, তখনই মা দুর্গা এদের সঙ্গে কাটিয়ে যাবে একটা দিন। সেই অপেক্ষাতেই একটা আস্ত বছর চলে অপেক্ষা।