বাংলার ঐতিহ্যশালী দৈব আরাধনার কেন্দ্রগুলোর অন্যতম কোন্নগরের শকুনতলা কালীমন্দির। গত ১৩০ বছর ধরে এই তীর্থস্থান কোন্নগরের সীমা ছাড়িয়ে দূর-দূরান্তের ভক্তদের জীবনে জড়িয়ে গিয়েছে। আজ যেখানে মন্দির, কথিত আছে বহু বছর আগে, সেখানে একটি বড় গাছ ছিল। তাতে শকুন বসত। সেই থেকে এই জায়গার নাম শকুনতলা বলে পরিচিত হয়। আর, এই এলাকার পুজো শকুনতলা কালীপুজো নামে পরিচিত হয়ে ওঠে! স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস দেবী শকুনতলা কালী অত্যন্ত জাগ্রত। তিনি ভক্তদের খালি হাতে ফেরান না।
অনাড়ম্বর এই মন্দিরের গঠনশৈলী একদম সাদামাটা। নাট মন্দিরটি বিরাট বড়। তার মাঝখানে একটি হাঁড়িকাঠ। গর্ভ গৃহে রয়েছে একটি শ্বেত পাথরের বেদী। এই বেদীর নীচে আবার তিন কোণা লাল রঙের এক বেদি আছে। শকুনতলা কালী আসলে রক্ষাকালী পুজো। এখানকার পুজোর বিশেষত্ব, একইদিনে সূর্যোদয়ের পর দেবীর মূর্তি তৈরি শুরু হয়। সন্ধ্যার মধ্যে মূর্তি তৈরি শেষ করে শুরু হয় পুজো। রাতভর পুজো চলার পর, সূর্যোদয়ের আগে প্রতিমার নিরঞ্জন হয়। প্রতিবছর বৈশাখ মাসে শুক্লা চতুর্থীতে হয় দেবীর পুজো। বছরের বাকি সময়টা গর্ভগৃহে দেবীর বেদীতেই পুজো অর্পণ করেন ভক্তরা। শনি ও মঙ্গলবার বেদীতে আরতি হয়।
আরও পড়ুন- যে কোনও সমস্যা থেকে মুক্তির পথ, ভক্তদের ভরসা বড়বাজারের পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির
সারাবছর ফাঁকা থাকলেও বাৎসরিক পুজোর সময় এখানে গিজগিজে ভিড় হয়। সন্ধ্যা ৬টা ৩০ থেকে ৭টা ৩০-এর মধ্যে দেবীকে মন্দির প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। কাঁধে করে আনা হয় দেবীকে। এখানে পুজো দিয়ে উপকৃত হননি, অথবা মনস্কামনা পূরণ হয়নি, এমন ভক্ত খুঁজে পাওয়া কঠিন। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন বাৎসরিক পুজোর দিন। বাৎসরিক পুজোর একসপ্তাহ আগে থেকেই বেদীতে জল ঢালার লাইন পড়ে যায়। আর, পুজোর সময় তো রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দেন ভক্তরা। এই সময় মন্দির সংলগ্ন মাঠে মেলা বসে। একসপ্তাহ ধরে মেলা চলে।