স্কুলের গণ্ডী পেরিয়ে কলেজে ঢুকেছে ঈশান। কিন্তু মন পড়ে থাকে সেই হাই স্কুলের দিনগুলোতেই। হইচই-আড্ডা - সুযোগ পেলেই ক্লাস বাঙ্ক - নতুন নতুন ক্রাশ... খুব মিস করে দিনগুলো। মাসুদ, রিয়া, অঙ্গনা, অনির্বাণদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম বলতে এখন ওই ফেসবুক। তবে শুধু ঈশান নয় কিন্তু, আমি-আপনি সবাই, আমরা যারা আর পাঁচজনের থেকে আলাদা নই, যারা নিতান্তই 'সাধারণ', তারা এখন ফেলে আসা দিনের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি ফেসবুকেই। সাক্ষাতে আলাপ জমে ঠিকই, কিন্তু তাও হয় ওই ফেসবুক মারফত যোগাযোগ করেই। নিছক কথার কথা নয়, সাম্প্রতিক গবেষণার ফলে এমনটাই জেনেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিক্ষক-গবেষক সুরিন্দর কাহাই।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ হিউম্যান কম্পিউটার স্টাডিজ-এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার সারমর্ম এরকম, আমরা যারা নিতান্ত ছাপোষা, আত্মবিশ্বাস যাদের মাঝারি, তারা সোশ্যাল মিডিয়া আঁকড়ে ধরতেই পছন্দ করি বেশি। যাঁদের আত্মবিশ্বাস বেশি, তাঁরা সোশাল নেটওয়ার্কিং-এর ধার ধারেন না বলা ভুল, তবে সোশাল মিডিয়ার ওপর তাঁদের নির্ভরতা কম।
আরও পড়ুন, ডিজিটাল দুনিয়ায় কীভাবে বড় করবেন আপনার সন্তানকে?
গবেষণায় উঠে এসেছে আরও এক তথ্য - মাঝারি, গড়পড়তা পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে স্কুল ছেড়ে কলেজ জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে অনেক বেশি। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সুরিন্দর প্রথম বর্ষের স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের সঙ্গে কলেজের প্রথম দিককার অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। সামনাসামনি দেখা হওয়া, মুখোমুখি বসে আড্ডা মারা, ফোন করে এ ওর সঙ্গে কথা বলা, এসবের কমে যাওয়া পুষিয়ে দেয় ফেসবুক, অন্তত পড়ুয়ারা তাই মনে করছেন।
সুরিন্দরের কথায়, "হাইস্কুল থেকে কলেজে এসে যে পরিবর্তন হয়, তা বহু পড়ুয়ার ক্ষেত্রেই যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে। কলেজ জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গেলে তাদের পক্ষে কলেজ-পূর্ববর্তী বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাওয়া জরুরি, পাশাপাশি জরুরি নতুন সম্পর্ক তৈরি করাও।"
আরও পড়ুন, শ্রীহরিকোটা-উত্তরকাশি! দেশের মেয়েরা কে কোথায়…
গবেষণা কিন্তু এও বলছে, যাঁদের মনের জোর বেশি, সামাজিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষমতা সাধারণের চেয়ে বেশি, তাঁরা কিন্তু নতুন বন্ধু তৈরি করার ক্ষেত্রে ফেসবুক বা অন্যান্য সোশাল মিডিয়া সাইটের চেয়ে প্রথাগত যোগাযোগ মাধ্যমেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
সুরিন্দর আরও মনে করেন, "নতুন কলেজ পড়ুয়ারা প্রায়শই নতুন বন্ধুত্ব পাতানোর লড়াইয়ের পাশাপাশি পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে দোটানায় পড়ে। এই গবেষণার সাহায্যে কাউন্সেলররা হয়তো তাদের পরামর্শ দিতে পারবেন, কীভাবে নতুন এবং পুরনো বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সোশাল মিডিয়া এবং প্রথাগত যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।"