অর্জুন গড় ভাটপাড়ায় ‘পরীক্ষিত’ সৈনিক মদন মিত্রের উপর ভরসা রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাটপাড়া বিধানসভার আসন্ন উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হচ্ছেন মদন মিত্র, বৃহস্পতিবার সিউড়ির জনসভা থেকে আচমকা একথা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কেন্দ্রের বিধায়ক অর্জুন সিং তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ভাটপাড়া কেন্দ্রের উপনির্বাচন কার্যত অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। আর তাই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল সময় থাকতেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে রাখল। সিউড়িতে লোকসভার প্রচার মঞ্চ থেকে মমতার এই ঘোষণায় তিনি ‘আপ্লুত’ বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন মদন মিত্র।
ভাটপাড়ার পাশাপাশি আরও তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করল তৃণমূল। হবিবপুরে উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী অমল কিস্কু, ইসলামপুরে প্রার্থী হচ্ছেন আব্দুল করিম চৌধুরী। অন্যদিকে, দার্জিলিঙে উপনির্বাচনে মোর্চাদের প্রার্থী বিনয় তামাংকে সমর্থন জানাবে তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যে কয়েকজন তৃণমূল তৈরি করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম মদন মিত্র। বঙ্গ রাজনীতিতে বরাবরই মমতার আনুগত সৈনিক হিসেবে পরিচিত মদন মিত্র। দলের যে কয়েকজন সৈনিকের উপর দলনেত্রী অগাধ ভরসা রাখেন, তাঁর মধ্যে বরাবরই অন্যতম মদন। দলের সংগঠন মজবুত করা থেকে মিটিং-মিছিলের আয়োজন ও নেতৃত্বদানে বরাবরই অনন্য ভবানীপুরের মিত্র বাড়ির এই সদস্য। আর এসবের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১১ সালে পরিবর্তনের সরকারের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছিলেন মদন। সাধারণ ট্যাক্সি ইউনিয়ের নেতা থেকে রাজ্যের মন্ত্রী হওয়া, বঙ্গ রাজনীতিতে মদন মিত্রের উত্থান আক্ষরিক অর্থেই নজর কাড়া। তবে ছন্দ পতন ঘটে ২০১৪ সালে। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন তৎকালীন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। পরবর্তীকালে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন 'প্রভাবশালী' মদন মিত্র।
আরও পড়ুন: মমতা মেগাস্টার, আমি টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল ষ্টার: অকপট মদন মিত্র
দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ থাকাকালীন বেশ কয়েকবার অসুস্থও হয়ে পড়েন তিনি। এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে। এসএসকেএমে তাঁকে 'ভিআইপি ট্রিটমেন্ট' দেওয়ার অভিযোগে বিতর্কও তৈরি হয়েছে বিস্তর। তবে, দীর্ঘ কারাবাস কালে বা জামিন মেলার পরে কখনও দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি মদন মিত্র। চিটফান্ড মামলায় ফেঁসে যখন তৃণমূলের কয়েকজন দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, তখনও আনুগত্যে অবিচল থেকেছেন মদন মিত্র।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সেই অর্থে দলে তেমন কোনও গুরুত্বই পাননি তৃণমূলের এই তাবড় নেতা। তা সত্ত্বেও দল বা দলনেত্রী, কারও বিরুদ্ধেই কখনও রাগঢাক করেননি মদন। বরং বরাবরই নেত্রীর আনুগত্য সৈনিকের মতো রাজনীতির ময়দানে নিজেকে মেলে ধরেছেন কামারহাটির প্রাক্তন বিধায়ক। কারাবাসের পরবর্তী সময়ে তৃণমূলে মদন কোণঠাসা বলেই মনে করেছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবু মদন যখন যেমন দায়িত্ব পেয়েছেন, তখন তাই সামলেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে ভাটপাড়ায় মদনকে তৃণমূলের প্রার্থী করা নিয়ে মমতার ঘোষণা রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের। অনেকেই মনে করছেন, মদনের 'কঠোর তপস্যা'র ফল মিলল শেষ পর্যন্ত।
তবে মদন মিত্রকে উপনির্বাচনে টিকিট দেওয়া নিয়ে অন্য হিসাব নিকাশও কানে আসছে। একাংশের মতে, ভাটপাড়া মানেই অর্জুন সিং-এর গড়। লোকসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন একদা তৃণমূলের 'বাহুবলী নেতা' অর্জুন। ভাটপাড়ার সেই ভূমিপুত্রের মাটিতেই ইচ্ছাকৃতভাবে বড় পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল মদন মিত্রকে। শেষ পর্যন্ত উপনির্বাচনে অর্জুন সিংদের হারিয়ে দলনেত্রীর মুখে হাসি ফোটাতে পারলে দলে ফের তাঁর উত্থান নিশ্চিত। কিন্তু ভাটপাড়ার মাটিতে জোড়া ফুল ফোটানো রীতিমতো কঠিন কাজ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। এখন দেখার, মিত্র শক্তির আস্ফালন কি স্বয়ং অর্জুনকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে পারে কি না।