পুনেতে এলগার পরিষদে সভা হয়েছিল গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। সেই সভার পরদিন ১ জানুয়ারি পুনে সন্নহিত এলাকায় হিংসার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার ৮ মাসের মাথায় গ্রেপ্তার করা হয় ভারভারা রাও, সুধা ভরদ্বাজ, অরুণ ফেরেইরা, ভার্নন গনজালভেজ এবং গৌতম নওলাখাকে। দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড় হয়ে যায়। এলগার পরিষদের সভার আহ্বায়ক ছিলেন দুই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কোলসে পাটিল ও পিবি সামন্ত।
এদিন কলকাতায় এক আলোচনাসভায় কোলসে পাটিল স্পষ্ট জানিয়ে দেন ওই আলোচনা সভার টাকা জোগাড় করেছিলেন তাঁরা, দুই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। অভিযোগ ছিল ওই সভার টাকারও যোগান দিয়েছিল মাওবাদীরা। এদিনের সভায় গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন সব বক্তারাই।
আরও পড়ুন, এলগার পরিষদ কাণ্ডে ধৃতদের গৃহবন্দিত্বের মেয়াদ বাড়ল
শুক্রবার কোলসে পাটিল বক্তব্য় রাখতে গিয়ে বলেন, “মাওবাদীরা টাকা দিয়ে দলিতদের খেপিয়েছে, এটা একেবারেই অসত্য়। সভার জন্য় মাওবাদীরা টাকা দিয়েছে সেটাও মিথ্য়া। আমরা দুজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি টাকা সংগ্রহ করেছি। আমরাই ছিলাম আহ্বায়ক। মাওবাদীদের থেকে টাকা নেওয়ার দরকার আমাদের নেই।’’ অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি এদিন দাবি করেন, “ব্রাহ্মণ্য বাদের আধিপত্য় দুশো বছর আগেও ছিল। আজও সমান ভাবেই আছে। ভীমা কোরেগাঁও হিংসা-কাণ্ডে তিনটে তদন্তের দুটোতেই শম্ভাজী ভিড়ে ও একবোটের নাম উঠে এসেছে। এরা পরিচিত হিন্দুত্ববাদী। অথচ তাদের গ্রেপ্তার করা হল না। যাদের গ্রেপ্তার করা হল তাঁরা দেশের সজ্জন ব্য়ক্তি। বিভিন্ন জনহিতকর কাজের সঙ্গে যুক্ত।’’
এদিন মধ্য কলকাতার সুবর্ণবণিক সমাজের সভাঘরে “ভুয়ো সংঘর্ষ ও জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’’ শীর্ষক এক আলোচনায় অংশ নেন কোলসে পাটিল। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রবীণ এই বিচারপতি। মনে করিয়ে দিয়েছেন গুজরাট দাঙ্গার ইতিহাস। কাদের মদত ছিল ওই দাঙ্গায়। তিনি বলেন, “এই দেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটে গিয়েছে যার পিছনে কারা রয়েছে সেটার স্পষ্ট রেকর্ড আছে। যেমন গুজরাটের গণহত্য়ার সময় কারা বলেছিল পুলিশকে কিছু সময়ের জন্য় নিষ্ক্রিয় থাকতে! সেই নথি রয়েছে মিটিংয়ের মিনিটসে। মহারাষ্ট্রে এমন ঘটনা ঘটে গিয়েছে যার দায় চাপানো হয়েছে মুসলমানদের ওপর। অনেক মুসলিম ছাত্র-যুবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই।’’ তাঁর দাবি, “হেমন্ত কারকারে মহারাষ্ট্রের দক্ষ পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি খুন হয়েছিলেন। তার কোনও কিনারা হয়নি। তিনি মারা গিয়েছেন সন্ত্রাসবাদীদের হাতে। কিন্তু তাঁর শরীরে পাওয়া গিয়েছিল পুলিশের বুলেট। ’’
এমনকী তিনি প্রশ্ন তুলেছেন ১৯৯৩-এর মুম্বাই ধারাবাহিক বিস্ফোরণ নিয়েও। তাঁর কথায়, ১৯৯২ সালে ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধংস হয়েছিল। তারপর জানুয়ারি মাসে টানা বিস্ফোরণ ঘটেছে মুম্বাইয়ে। কিন্তু যে আরডিএক্স দিয়ে ব্লাস্ট করা হয়েছিল তা মুম্বাইতে নিয়ে আসা হয়েছিল ১৯৯২ সালের অক্টোবরে। প্রশ্ন এখানেই। দাউদ ইব্রাহিমকে আমেরিকার মাধ্য়মে আনার চেষ্টা হচ্ছে। দাউদ তো আগেই আসতে চেয়েছিল। আনা হয়নি। যে সব ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত তা হচ্ছে না কিন্তু মাওবাদী বলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
ঝাড়খন্ডের সংগঠন মজদুর কিষাণ সংঘর্ষ সমিতির নেতা বাচ্চা সিং, ভাঙ্কি নাথন বিশিষ্টরা হাজির ছিলেন এদিনের সভায়। ভাঙ্কি নাথনের দাবি, পরিবেশ নিয়ে আন্দোলেন হাজার হাজার মানুষ তুতিকোরিনে পথে নেমেছিল। পুলিশের গুলিতে ১৩ জন মারা গিয়েছিল। তখনও বলা হয়েছিল মাওবাদীরা উসকে ছিল। এদিন যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে এপিডিআর, বস্তার সলিডিটারি নেটওয়ার্ক, বন্দিমুক্তি কমিটি, ডাবলিউএসএস, এআইপিএফ।