বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁর নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এ নিয়ে খোদ কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে চিঠি পাঠিয়েছেন বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক।
স্বাধীনতা দিবসের একদিন আগেই দিল্লিতে মুকুল রায়ের নেতৃত্বে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেন শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিতে যোগ দিয়ে কলকাতায় ফিরেও আসেন তিনি। কিন্তু দিল্লি থেকে ফেরার আগেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গোলপার্কের বাড়ি থেকে নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে রাজ্য সরকার, এমন অভিযোগ তুলেছেন একদা মমতার ছায়াসঙ্গী 'কানন'। এমনকি 'নিরাপত্তাহীনতা' নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের কাছে নিরাপত্তা বহালের আর্জিও জানিয়েছেন তিনি।
ঠিক কী অভিযোগ করলেন শোভন?
নিরাপত্তা তুলে নেওয়ায় ক্ষুদ্ধ সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া শোভনের নিশানায় ছিল মমতা সরকার। তিনি বলেন, "কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে তাঁদের কোনও নিরাপত্তাবাহিনী থাকে না। কিন্তু আমার সেই সময় থেকে জীবনের ঝুঁকি ছিল বলে ১৯৯৫ সাল এবং তাঁর পরবর্তীতে আমাকে জেড প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। আমার আশ্চর্য লাগছে যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণেই গতকাল রাতে কোনও কিছু না জানিয়েই আমার পিএসও এবং রাজ্য সরকারের পুলিশদের উঠিয়ে নেওয়া হল। আমার আপত্তির কিছু নেই, কিন্তু কে বা কারা এটা করল? ২০১৮ সালে আমার নিরাপত্তা ওয়াই প্লাস ক্যাটেগরিতে আনা হয়েছিল। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না যে হঠাৎ কেন সম্পূর্ণ নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হলো? যে বা যাঁরা এই নিরাপত্তা দিয়েছিলেন, তাঁরাই হয়তো এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।"
আরও পড়ুন, মমতাকে তৈরি করতে সব নষ্ট করে জীবন দিয়েছিলাম, আর উনিই রাজনীতি করলেন: শোভন
পুলিশ কমিশনারকে দেওয়া চিঠিতে একদা কলকাতা পুরসভার মেয়র লেখেন, "২২ নভেম্বর ২০১৮ সালে আমি মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিলেও দুষ্কৃতীদের হামলা এবং সবরকম সুরক্ষা দিতে রাজ্য সরকার এবং পুলিশ আমার নিরাপত্তাস্তর কখনোই নামিয়ে আনে নি। কিন্তু ১৭ অগাস্ট কেন কোনরকম কিছু না জানিয়ে আপনারা আমার নিরাপত্তা তুলে নিলেন?" একটি সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, "হ্যাঁ, আমি পরিষ্কার করেই অভিযোগ করেছি। এটা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তোলা হয়েছে।"
তবে লালবাজার সূত্রে বলা হয়েছে, শোভনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুটা কাটছাঁট করা হলেও সম্পূর্ণ প্রত্যাহৃত হয়নি। কিন্তু লালবাজারের এই বক্তব্য মানতে নারাজ সদ্য পদ্ম শিবিরে যোগ দেওয়া শোভন। তাঁর বক্তব্য, "যা বলছে তা বাজে কথা। কাটছাঁট করার কোনও প্রশ্ন নেই। যখন যেটা মনে হয় ওই মহম্মদ বিন তুঘলকের মতো দেওয়া হয় আবার তুলেও নেওয়া হয়। যদি আমার উপর কোনও হামলা হয়, তার দায় রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে। কারণ আমি এখনও বিধানসভার সদস্য এবং পুরসভার কাউন্সিলর। স্বার্থান্বেষী মানুষদের স্বার্থে আঘাত লাগার কারণেই এইসব হচ্ছে।"
আরও পড়ুন, শোভন-বৈশাখীর আপত্তি সত্ত্বেও দেবশ্রী কি বিজেপিতেই?
কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে লেখা চিঠিতে শোভন চট্টোপাধ্যায় লেখেন, "প্রশাসনিকের চোখে সবাই সমান হওয়া উচিত। আমি সাতটায় দিল্লি থেকে কলকাতায় পৌঁছব। একজন বিধায়ক এবং কাউন্সিলর হিসেবে আবেদন করছি যেন আমায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয় আমার সুরক্ষার জন্য। এর আগে আমার উপর হামলার যে ঘটনা হয়েছে তার সমস্তটাই আপনাদের জানা। আমি মনে করি, সম্প্রতি রায়চকে আমার উপর যে হামলা হয়েছিল সেটাই যথেষ্ট আমার এই আবেদনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য"।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্যই যে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে, এমন সুরই শোনা গেল প্রাক্তন কলকাতার মেয়রের গলায়। ভবিষ্যতে এই জল কোনদিকে গড়ায়, সে নিয়েই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছে।