একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতম সাংবাদিক ছিলেন তিনি। যেদিন তিনি সাংবাদিক পরিচয়কে পাশে সরিয়ে রেখে তৃণমূলের ২১শে জুলাইয়ের শহিদ মঞ্চে সঞ্চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, সেদিন চোখ কপালে উঠেছিল এ রাজ্যের বহু মানুষের। পরবর্তীকালে তিনি তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। এরপর সারদাকাণ্ডের অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতারি, নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য এবং দীর্ঘ কারাবাস। বেশ কয়েক বছর বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকার পর মিলেছে জামিন। তবে সেই গ্রেফতারির পর থেকে 'দলনেত্রী' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি কুণাল ঘোষের। শেষ পর্যন্ত শনিবার সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হল কুণাল ঘোষের। নিজে হতেই মমতার বাড়ি গেলেন তৃণমূলের বহিষ্কৃত তথা প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন কুণাল। আর কুণাল-মমতার এই সাক্ষাৎ ঘিরে রীতিমতো জল্পনার জাল বুনছে রাজ্য রাজনীতির কুশীলবরা।
আরও পড়ুন মমতার কালীঘাটের বাড়িতে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা ১০ লক্ষ পোস্টকার্ড পাঠাচ্ছেন অর্জুন সিং
সারদাকাণ্ডে গ্রেফতারির পর থেকেই কুণাল ঘোষের সঙ্গে দুরত্ব বাড়তে থাকে তৃণমূলের। একাধিকবার তৃণমূল দল এবং নেত্রীর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, "সারদায় সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়"। এমনকি তৃণমূল নেত্রীকে 'অ্যারেস্ট' করার কথাও বলেন কুণাল। সেই কুণাল ঘোষের এদিন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাড়িতে যাওয়া এবং প্রায় ঘন্টাখানেকেরও বেশি সময় কাটানো নিয়েই রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা রকম জল্পনা। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে কুণাল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, "আমি তৃণমূল দলের একজন পুরানো দিনের সৈনিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী। আগে যাই বলে থাকি না কেন, আমি কখনো, কোনও অবস্থাতেই দল ছাড়ার কথা বা দল বদলের কথা বলিনি"। কিন্তু, এতদিন বাদে দেখা হয়ে ঠিক কী নিয়ে আলোচনা হল সে বিষয়ে মুখ খোলেনি তৃণমূলের এই বহিষ্কৃত সাংসদ।
আরও পড়ুন মুকুল কি ধাক্কা খেলেন?
সম্প্রতি একাধিক ইউটিউব ভিডিওতে কুণাল ঘোষের গলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ও প্রশাসন সম্পর্কে সমালোচনার সুর শোনা গিয়েছে। এর উপর কিছুদিন আগেই বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের ওয়ার্ড অফিসে গিয়েও বৈঠক করতে দেখা যায় কুণাল ঘোষকে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অমিতাভ মজুমদার, সজল ঘোষেরা। সকলের উপস্থিতিতেই 'নবজাগরণ' মঞ্চ তৈরি করেন তাঁরা। প্রশাসনের দ্বারা নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানোই এই মঞ্চের লক্ষ্য বলে জানান তাঁরা। সব্যসাচী দত্তের দলবদল নিয়ে জল্পনার আবহে কুণাল-সব্যসাচীর এই ঘনিষ্ঠতা নিয়েও চর্চা চলছে সংশ্লিষ্ট মহলে। এরপর কুণালের হঠাৎ মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ নানা জটিল হিসাব-নিকেশ করছে রাজনীতির কারবারিরা। এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা এখনও সামনে না এলেও লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল পরবর্তী রাজ্য রাজনীতির এই আবহে কুণালদের গতিবিধি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।