Cricket Australia picks Test Team of 2024: পার্থ টেস্টে ভারতীয় দলের দুর্দান্ত জয়ের সুবাদে '২০২৪ সালের টেস্ট একাদশ'-এর অধিনায়ক বাছা হল জসপ্রীত বুমরাকে। cricket.com.au তাঁকে বছরের সেরা টেস্ট একাদশের অধিনায়ক নির্বাচিত করেছে। বুমরা এখনও পর্যন্ত মাত্র দুটি টেস্ট ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পার্থ টেস্টের সময় তিনি অধিনায়ক হিসেবে প্রথম জয় পেয়েছেন। আর, এর দৌলতে ৫ ম্যাচের বর্ডার-গাভাসকার ট্রফি সিরিজের প্রথম ম্যাচে এগিয়ে যায় ভারত। ওই ম্যাচে বুমরা ৮ উইকেট নিয়ে ভারতীয় দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।
আর, তার দৌলতে টিম ইন্ডিয়া অস্ট্রেলিয়াকে ২৯৫ রানে পরাজিত করে। যা ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে ভারতীয় দলের ০-৩ ব্যবধানে সিরিজ হোয়াইটওয়াশের পর টিম ইন্ডিয়ার মনোবল চাঙ্গা করেছিল। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজে ভারতীয় দলের হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর টিম ইন্ডিয়ার মনোবল কার্যত তলানিতে ঠেকেছিল। ১২ বছরের মধ্যে প্রথমবার ঘরের মাঠে সেই প্রথম টেস্ট সিরিজে ভারতের। তারপর বিশ্বসেরা অস্ট্রেলিয়া দলের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে অভাবনীয় জয়ে যথারীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে টিম ইন্ডিয়া।
যশস্বী জয়সওয়াল
২০২৪ সালে, জয়সওয়াল ১৫ ম্যাচে ৫৪.৭৪ গড়ে ১,৪৭৮ রান করেছেন। ২৯ ইনিংসে তিনটি সেঞ্চুরি এবং ১১টি অর্ধশতকের সৌজন্যে তাঁর এই রান। যার মধ্যে ২১৪ ছিল সেরা স্কোর। এবছরের শুরুতে হোম সিরিজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর দুটি ডাবল সেঞ্চুরি আছে। ওই সিরিজে ৫ ম্যাচে ৭১২ রানের বিশাল ইনিংস খেলেছিলেন যশস্বী। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনেও তিনি নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। ৮ ইনিংসে ৫১.৫০ গড়ে তাঁর রান ৩৫৯। তার মধ্যে পার্থে করেছেন ১৬১ রান। মেলবোর্নে করেছেন ৮২ এবং ৮৪ রান। cricket.com.au জানিয়েছে, একটি ক্যালেন্ডার বছরে ভারতীয় ওপেনারদের রানের বিচারে জয়সওয়ালের রান সর্বোচ্চ। তিনি চলতি বছরে ৩৬টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। যা বিশ্বরেকর্ড। এই ব্যাপারে তিনি কিংবদন্তি বীরেন্দ্র শেওবাগ ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন।
বেন ডকেট
ইংল্যান্ডের এই ওপেনার, রাজকোটে ভারতের বিরুদ্ধে ১৫৩ রান করেছিলেন, যা এবছর তাঁর সেরা স্কোর। তিনি এবছর ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সামগ্রিকভাবে বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৩৭.০৬ গড়ে ডকেটের সংগৃহীত রান ১,১৪৯। তাঁর স্ট্রাইক রেট ৮৭.০৪। তিনি ৩২ ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরি এবং ৬টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। এই দুর্দান্ত স্ট্রাইক রেটই তাঁকে ইংল্যান্ডের 'বাজবল' স্কুল অফ ক্রিকেটের পোস্টার বয় করে তুলেছে।
জো রুট
রুট এবছর টেস্টে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। ১৭ ম্যাচে ৫৫.৫৭ গড়ে ১,৫৫৬ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ৬৩-এর বেশি। ৩১ ম্যাচে ৬টি শতক এবং ৫টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। যা এই ব্যাপারে তাঁকে তালিকার শীর্ষে স্থান দিয়েছে। ইনিংসে তাঁর সেরা স্কোর ২৬২। রুট এবছর দুটি বিশাল টেস্ট রেকর্ড ভেঙেছেন। ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি-মেকার টেস্টে সর্বোচ্চ রান অর্জনকারী, কিংবদন্তি অ্যালিস্টার কুককেও রুট ছাড়িয়ে গিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি ২০,০০০ রানের সীমানায় ঢুকে পড়েছেন। যা ইংল্যান্ডের কোনও খেলোয়াড়ের কাছে প্রথম ব্যাপার। তিনি শচীন টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ টেস্ট রানের রেকর্ডও তাড়া করছেন রুট। এবছর তিনি পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
রাচিন রবীন্দ্র
কিউই অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্র এবছর টেস্টে দুর্দান্ত রান করেছেন। ১২ ম্যাচে ৪২.৭৮ গড়ে তিনি ৯৮৪ রান করেছেন। তাঁর ২৪ ইনিংসে ২টি সেঞ্চুরি এবং ৪টি অর্ধশতক আছে। সর্বোচ্চ স্কোর ২৪০। এই তরুণ কিউই অলরাউন্ডারের সুবাদে নিউজিল্যান্ড ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জিতেছে। সিরিজের প্রথম টেস্টে তিনি আক্রমণাত্মক ১৩৪ রান করেন। পুনেতে ৬৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২৪০ রান করে বছরের শুরুটা করেছিলেন।
হ্যারি ব্রুক
ইংল্যান্ডের পরবর্তী প্রজন্মের সুপারস্টার হ্যারি ব্রুক ক্রিকেট এবছর ১২ টেস্টে ৫৫ গড়ে ১,১০০ রান করেছেন। ২০ ইনিংসে আছে ৪টি সেঞ্চুরি এবং ৩টি অর্ধশতক। সেরা স্কোর ৩১৭। মুলতানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনি ওই রান করেন। দুটি সেঞ্চুরি করে নিউজিল্যান্ডে 'প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ' পুরস্কারও পান ব্রুক। বিদেশে ১১ টেস্টে ব্রুকের গড় ৮০। ৮ টেস্টে ৭টিতেই সেঞ্চুরি করেছেন।
কামিন্দু মেন্ডিস
শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার টেস্টে ব্র্যাডম্যানের মতো রান করেছেন। ৫টি শতক এবং ৩টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৯ ম্যাচ এবং ১৬ ইনিংসে ৭৪.৯২ গড়ে ১,০৪৯ রান করেছেন। তাঁর সেরা স্কোর ছিল ১৮২ (অপরাজিত)। তিনি ১৩ ইনিংসেই ১,০০০ রান করেছেন। অজি কিংবদন্তি ব্র্যাডম্যানের পরে মেন্ডিসই দ্বিতীয় দ্রুততম ক্রিকেটার হিসেবে ১,০০০ রানের সীমানায় পৌঁছলেন। তিনি তাঁর ৮ টেস্টের প্রতিটিতে পঞ্চাশের বেশি রান করেছেন। যা রেকর্ড।
অ্যালেক্স কেরি
অজি উইকেটরক্ষক-ব্যাটার অ্যালেক্স কেরি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং ঘরোয়া মিলিয়ে সব ফরম্যাটেই ২০২৪ সালে সেরা ফর্মে কাটিয়েছেন। ৯টি টেস্টে তিনি ৪২টি ক্যাচ এবং ৪টি স্টাম্পিং-সহ ৪৬টি আউট করেছেন। ১৫ ইনিংসে ৩টি হাফ সেঞ্চুরি-সহ ৩৩.৮৪ গড়ে ৪৪০ রান করেছেন। তাঁর সেরা স্কোর ৯৮ (অপরাজিত)। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের সময়, কেরি ১০টি ক্যাচ নিয়েছিলেন। যা তাঁর কেরিয়ারের সর্বোচ্চ। পাশাপাশি, ২৭৯ রান তাড়া করে তিনি ৯৮ রানে অপরাজিত থেকে যান।
ম্যাট হেনরি
কিউই পেসার এবছর তাঁর দলের হয়ে সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন। ৯ টেস্টে ১৮.৫৮ গড়ে ৪৮টি উইকেট নিয়েছেন। ৪ বার ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন। এক ইনিংসে ৬৭ রানে ৭ উইকেট নিয়েছেন। তিনি ছিলেন তাঁর দলের সেরা টেস্ট উইকেট সংগ্রাহক। সামগ্রিকভাবে তালিকায় ৪র্থ। বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিরুদ্ধে তিনি ১৫ রানে ৫ উইকেট নেন। যার ফলে টিম ইন্ডিয়া মাত্র ৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। যা যুগান্তকারী সিরিজ জয়ের সুর বেঁধে দিয়েছিল। তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৬৭ রানে ৭ উইকেট নিয়েছেন।
জসপ্রীত বুমরা
ভারতীয় পেসার জসপ্রীত বুমরা এবছর অন্যতম সেরা সময় কাটিয়েছেন। ১৩ ম্যাচে ১৪.৯২ গড়ে ৭১টি উইকেট নিয়েছেন। ৫ বার ৫ উইকেট নিয়েছেন। ৪৫ রানে নিয়েছেন উইকেট। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে স্পিন-সহায়ক পিচে ৪ টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় চলতি বিজিটি-তে চার ম্যাচে ১২.৮৩ গড়ে তিনবার ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশি আম্পায়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক ICC, সুর চড়ালেন BCCI কর্তা
জশ হ্যাজলউড
ফিটনেস সমস্যা সত্ত্বেও অজি ক্রিকেটারের কাছে ২০২৪ দুর্দান্ত কেটেছে। ১৫ ম্যাচে ১৩.৬০ গড়ে ৩৫টি উইকেট নিয়েছেন। ৩১ রানে নিয়েছেন ৫টি উইকেট। দু'বার ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন। এছাড়াও, তাঁর রান দেওয়ার গড় ১৪-র নীচে ছিল। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে কোনও অস্ট্রেলিয়ান বোলারের সেরা পারফরম্যান্স।
কেশব মহারাজ
প্রোটিয়ারা প্রথমবারের মত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জায়গা পেলে কেশব মহারাজই হবেন তার মূল কারণগুলোর একটি। এই স্পিনার ১৫ ম্যাচে ১৯.২০ গড়ে ৩৫ উইকেট নিয়েছেন। সেরা পরিসংখ্যান ৫৯ রানে ৫ উইকেট। দু'বার ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন। বছরের শুরুতে ভারতের বিরুদ্ধে নিউল্যান্ড টেস্টের সময় তিনি বল করেননি। তবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।