বিশ্বকাপই কি একজন ফুটবলারের শ্রেষ্ঠত্ব বিচারের মাপকাঠি? আবহমান কাল ধরেই এই বিতর্ক আবর্তিত হচ্ছে খেলার কক্ষপথ ধরে। নানা মুনি, নানা মত। কিন্তু ফুটবলের ইতিহাসে এমন অনেক তারকাই রয়েছেন, যাঁরা বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখতে পারেননি, কিন্তু কিংবদন্তিদের ক্লাবেই তাঁদের উপস্থিতি জ্বলজ্বল করছে। সেরকমই কয়েকজনের কথা তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।
লেভ ইয়াশিন, সোভিয়েত রাশিয়া
সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষকদের মধ্যেই ধরা হয় লেভ ইয়াশিনকে। অবিশ্বাস্য দক্ষতার জন্য 'দ্য ব্ল্যক স্পাইডার' নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁর অসাধারণ রিফ্লেক্স আজও দৃষ্টান্ত বাকিদের কাছে। ফুটবলের ইতিহাসে ইয়াশিন একমাত্র গোলকিপার যিনি ব্যালন ড’অরে ভূষিত। ১৩ বছর ধরে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রথম পছন্দের গোলকিপার ছিলেন তিনি। কিন্তু কখনও বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখতে পারেননি।
আরও পড়ুন: ফুটবলায়নের দিনগুলি - পৃথিবীজোড়া ফুটবল চর্চার ইতিহাস
জর্জ বেস্ট, নর্দান আয়ারল্যান্ড
নিঃসন্দেহে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার জর্জ বেস্ট। মূলত ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতেই দুনিয়া মাত করেছেন তিনি। বিখ্যত দল 'বাসবি বেবস'-এরও সদস্য ছিলেন তিনি। এক কথায় বিপক্ষের ত্রাস ছিলেন বেস্ট। ১৯৬৮-তে ব্যালন ড’অরও জিতেছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপের স্বাদ থেকে তিনিও বঞ্চিতই থাকেন। কখনই নর্দান আয়ারল্যান্ডকে এই ট্রফি দিতে পারেননি তিনি।
ইয়োহান ক্রায়াফ, নেদারল্যান্ডস
ইয়োহান ক্রায়াফও সর্বকালের সেরাদের একজন। আজাক্স ও বার্সেলোনার হয়ে ক্লাব ফুটবলে প্রায় সব ট্রফিই জিতেছেন। খুব কম ফুটবলারই আছেন, যাঁদের ঝুলিতে তিনের অধিক ব্যালন ড’অর রয়েছে। ক্রায়াফ তাঁদের মধ্যে একজন। 'টোটাল ফুটবল' তাঁর পা ধরেই এসেছিল। কিন্তু দুর্দান্ত হল্যান্ড দলের সদস্য হয়েও কখনও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন: History of Soccer: ফুটবলায়নের দিনগুলি (দ্বিতীয় পর্ব)
মিশেল প্লাতিনি, ফ্রান্স
১৯৮৪-তে প্লাতিনি ফ্রান্সকে ইউরো কাপ জিতিয়েছিলেন। টুর্নামেন্টে সর্বাধিক ন’টি গোল তাঁর পা থেকে এসেছিল। কিন্তু শত চেষ্টা করেও ফ্রান্সকে সেমি-ফাইনালের পরের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেননি। ১৯৮২ এবং '৮৬-তে তিনি ফ্রান্সকে বিশ্বকাপের শেষ চারে নিয়ে যান। ২০ বছর দেশের জার্সিতে খেলেছেন।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, পর্তুগাল এবং লিওনেল মেসি, আর্জেন্তিনা
বিশ্ব ফুটবলে শেষ দশ বছর যাবত শুধু এই দু’টো নামই বিরাজ করছে। আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা ফুটবলার মেসি এবং রোনাল্ডো। দু’জনের ঝুলিতেই পাঁচটি করে ব্যালন ড’অর রয়েছে। তাঁদের স্কিল এবং গোল করার ক্ষমতা প্রশ্নাতীত। ২০১৬-তে রোনাল্ডোর হাত ধরেই পর্তুগাল ইউরো কাপ জিতেছিল। কিন্তু চারবার বিশ্বকাপ খেলেও কোনদিন দেশকে সেমি ফাইনালের পর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি।
মেসি বার্সেলোনার হয়ে প্রায় সব ট্রফিই ছুঁয়ে দেখেছেন। কিন্তু কখনই দেশকে কোন খেতাব জেতাতে পারেননি। পরপর দু’বার কোপা আমেরিকার ফাইনাল থেকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে হেরে রানার্স হিসেবেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাঁর আর্জেন্তিনাকে। চলতি রাশিয়া বিশ্বকাপেও মেসি-রোনাল্ডো নক-আউট থেকে ছিটকে গিয়েছেন। মনে করা হচ্ছে এটাই ছিল এই দুই মহারথীর শেষ বিশ্বকাপ।